ঢাকাসোমবার , ১৭ অক্টোবর ২০২২
  1. অনান্য
  2. অপরাধ ও আইন
  3. অভিবাসীদের নির্মম জীবন
  4. অর্থনীতি
  5. আত্মসাৎ
  6. আন্তর্জাতিক
  7. ইতিহাস
  8. উদ্যোক্তা
  9. এশিয়া
  10. কৃষি
  11. ক্যাম্পাস
  12. খেলাধুলা
  13. গণমাধ্যম
  14. গল্প ক‌বিতা
  15. চট্টগ্রাম বিভাগ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

অব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়হীনতাই ঝুঁকি তৈরি করছে বিদ্যুৎ খাতে

অনলাইন ডেস্ক
অক্টোবর ১৭, ২০২২ ১১:১৭ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণের মধ্যে সমন্বয়হীনতাই ঝুঁকি তৈরি করছে বিদ্যুৎ খাতে। বিদ্যুৎ সরবরাহের এ প্রক্রিয়া স্বয়ংক্রিয় করা যায়নি। তাই ফোনে ফোনে নির্দেশনা দিয়ে জাতীয় গ্রিডে চাহিদা ও সরবরাহের সামঞ্জস্য রক্ষা করতে হয়। এতে হেরফের হলেই ঘটতে পারে বিদ্যুৎ বিপর্যয়। সাম্প্রতিক গ্রিড বিপর্যয়ের ক্ষেত্রেও এমন অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেছে তদন্ত কমিটি।

গ্রিড বিপর্যয়ের কারণ অনুসন্ধানে দেশের একমাত্র বিদ্যুৎ সঞ্চালন সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) গঠিত তদন্ত কমিটির একাধিক সদস্য বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। গতকাল রোববার রাতে তদন্ত প্রতিবেদনটি বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে জমা দিয়েছে পিজিসিবি। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ইয়াকুব আলী চৌধুরীর নেতৃত্বে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। এর বাইরে বিদ্যুৎ বিভাগ গঠিত আরও একটি তদন্ত কমিটি গ্রিড বিপর্যয় নিয়ে কাজ করছে।

পিজিসিবি তদন্ত কমিটির একাধিক সদস্য বলেছেন, মূলত দুটি কারণে বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটেছে। এর একটি হলো বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণে সমন্বয়ের অভাব। আর দ্বিতীয়টি হলো বিদ্যুৎ সরবরাহব্যবস্থার বিধিবদ্ধ নিয়ম (রুল বুক) ও গ্রিড কোড কঠোরভাবে না মানা।

দেশে এখন পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চল নামে দুটি গ্রিড আছে। ঈশ্বরদী-ঘোড়াশাল এবং সিরাজগঞ্জ-আশুগঞ্জ—এ দুটি লাইনের মাধ্যমে দুই গ্রিড সংযুক্ত আছে। তদন্ত কমিটির সদস্যরা বলছেন, ৪ অক্টোবর দুপুরে হঠাৎ করেই ঘোড়াশাল উপকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যায়। ফলে এখানে উৎপাদিত ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চলে যায় পশ্চিমাঞ্চলের ঈশ্বরদী এলাকায়।

এতে পূর্বাঞ্চল গ্রিডে ঘাটতি তৈরি হয়। একই সময় ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায় বরাদ্দের চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে থাকে বিতরণ কোম্পানিগুলো। এতে গ্রিডে বিদ্যুতের সরবরাহ ও চাহিদার মধ্যে বড় পার্থক্য তৈরি হয়। বন্ধ হয়ে যায় সিরাজগঞ্জ-আশুগঞ্জ লাইনের উপকেন্দ্র। পূর্বাঞ্চল পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় পশ্চিমাঞ্চল থেকে। এতে একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যেতে থাকে। পুরো গ্রিডে নেমে আসে বিপর্যয়।

ঘটনাটি ঘটে ৪ অক্টোবর বেলা ২টা ৫ মিনিটে। পূর্বাঞ্চল জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের একটি বড় অংশ টানা চার ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকে। ধীরে ধীরে বিদ্যুৎ ফিরে এলেও কোনো কোনো এলাকায় বিদ্যুৎ আসে আট ঘণ্টা পর।

গ্রিড বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করেছে পিজিসিবির তদন্ত কমিটি। তারা বলছে, ছোটখাটো ঘটনা ঘটতেই থাকে জাতীয় গ্রিডে। তবে একসঙ্গে অনেকগুলো ঘটনা ঘটলেই বিপর্যয় তৈরি হয়। যার সূত্রপাত্র হয়েছে ঘোড়াশাল বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে। একই সঙ্গে ঘটতে থাকে বাড়তি বিদ্যুৎ ব্যবহারের ঘটনা। বিপর্যয়ের ঘটনা সেকেন্ডের মধ্যে ঘটে গেছে।

তদন্ত কমিটি বলছে, সরবরাহ কমার পরও ঢাকার দুই বিতরণ কোম্পানি ডিপিডিসি ও ডেসকো বরাদ্দের চেয়ে বাড়তি বিদ্যুৎ সরবরাহ করে গেছে। একই সময়ে কুমিল্লা এলাকায় বাড়তি বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে পিডিবি ও আরইবি। ওই সময় তাদের নির্দিষ্ট পরিমাণ লোডশেডিং করার কথা, যা করা হয়নি। এতে গ্রিডের ওপর চাপ বেড়েছে। তবে ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বলেন, বাড়তি বিদ্যুৎ ব্যবহারের কোনো বিষয় তাঁর জানা নেই। আর ডেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমির কাউসার আলী বলেন, তদন্ত কমিটির সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি। তাদের প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিষয়টি বোঝা যাবে।

বিতরণ কোম্পানির বাইরে একই সময়ে হঠাৎ বিদ্যুৎ ব্যবহার বাড়িয়েছে চট্টগ্রামের একটি ভারী শিল্পকারখানা। চট্টগ্রামে কয়েকটি ভারী শিল্পকারখানা সরাসরি গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ নেয়। বিপর্যয়ের সময় হঠাৎ করেই ওই শিল্পকারখানা ২০০ মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ নিতে থাকে। এতে গ্রিডে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ চাহিদার চাপ তৈরি হয়। ঘোড়াশাল উপকেন্দ্র বন্ধ হওয়ার কয়েক মিনিট পরও যদি এ কারখানা চালু হতো, তাহলেও হয়তো বিপর্যয় এড়ানো যেত।

বিভিন্ন সময়ে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সব সময় উৎপাদন-সঞ্চালন-বিতরণে সমন্বয় রাখতে হবে। না হলে বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে চাহিদার তুলনায় বিদ্যুতের উৎপাদন কমে যাওয়ায় গ্রিড বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটে। এ জন্য চাহিদা ও সরবরাহ ব্যবস্থাপনা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সুপারিশের মধ্যে ঘুরেফিরে বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনা আধুনিক করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছিল। তবে সব বিদ্যুৎকেন্দ্রকে এখন পর্যন্ত স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থাপনায় আনা যায়নি।

একসময় দেশে সব বিদ্যুৎ উৎপাদন করত শুধু পিডিবি। এখন বেসরকারি খাতে নানা ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। এ ছাড়া প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকেও বিদ্যুৎ এসে যুক্ত হচ্ছে জাতীয় গ্রিডে। এতে যথাযথ সমন্বয় না হলে সরবরাহ ও তাৎক্ষণিক চাহিদার (লোড) হেরফের হওয়ার ঝুঁকি থাকে। উৎপাদন-সঞ্চালন-বিতরণের সমন্বিত ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা যায়নি।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ম তামিম বলেন, অনেক আগেই বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থাপনা স্বয়ংক্রিয় করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু করা হয়নি। ফোনে ফোনে নির্দেশনার প্রক্রিয়ায় মূল দায়ী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করা কঠিন। কিছু ব্যক্তিকে দোষারোপ করা হবে। বর্তমানে প্রচলিত বিদ্যুৎ সরবরাহকাঠামোয় কোনো জবাবদিহি নেই। এতে আরও বিপর্যয়ের ঝুঁকি থেকেই যায়।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল অপরাজিতবাংলা ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন oporajitobangla24@yahoo.com ঠিকানায়।