জাতীর এবং ইতিহাসের সবচেয়ে ঘৃণ্য হত্যাযজ্ঞ ঘটে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। এই দিনে ঘৃণ্য নরপশু ঘতকরা জাতির পিতার সহধর্মিনী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব, তিনপুত্র ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল, দশবছরের শিশুপুত্র শেখ রাসেল, পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর সহোদর শেখ আবু নাসের, কৃষকনেতা আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, যুবনেতা শেখ ফজলুল হক মণি ও তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মণি, বেবী সেরনিয়াবাত, সুকান্ত বাবু, আরিফ, আব্দুল নঈম খান রিন্টুসহ পরিবারের ১৮ জন সদস্যকে হত্যা করে।
বঙ্গবন্ধু হত্যার কিছু আসামীদের মৃত্যুদন্ড কার্যকর হলেও এখনো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত পাঁচ খুনির ফাঁসি কার্যকর হয়নি। এদের মধ্যে তিন জনের অবস্থানের তথ্যও সরকারের কাছে পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। এরা হলেন-
~কর্নেল শরীফুল হক ডালিম,
~কর্নেল রশীদ ও
~ রিসালদার মোসলেউদ্দিন
এবং বাকি দুই জনের মধ্যে
~নূর চৌধুরী কানাডায় ও
~রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে আছেন।
ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত ১২ খুনীর মধ্যে ছয়জনের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। এদের মধ্যে ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি ফাঁসিতে ঝুলিয়ে কর্নেল (অব.) সৈয়দ ফারুক রহমান, কর্নেল (অব.) সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, লে. কর্নেল (অব.) মহিউদ্দিন আহমদ (ল্যান্সার), মেজর (অব.) এ কে বজলুল হুদা এবং মেজর (অব.) এ কে এম মহিউদ্দিনের (আর্টিলারি) মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করা হয়। সর্বশেষ গত ১১ এপ্রিল দিনগত রাতে কার্যকর হর ক্যাপ্টেন আব্দুল মাজেদের ফাঁসি। এছাড়া আরেক খুনি আবদুল আজিজ পাশা পলাতক অবস্থায় ২০০১ সালের ২ জুন জিম্বাবুয়েতে মারা গেছেন৷
এর আগে ২০০৯ সালের ১৯ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় আসামীদের আপিল খারিজ করে দেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। এর কয়েক মাসের মধ্যেই কার্যকর করা হয় ৫ আসামীর মৃত্যুদণ্ড। চলতি বছর আরো একজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
কিন্তু এই মহান নেতার ৪৫ তম শাহাদৎবার্ষিকীতে এসেও দেখা যাচ্ছে পাঁচ খুনি এখনো পালিয়ে আছে। এদের মধ্যে নূর চৌধুরী এবং রাশেদ চৌধুরীর বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য রয়েছে।
কানাডায় পালিয়ে রয়েছেন খুনি নূর চৌধুরী। তার সম্পর্কে তথ্য না দেয়ার বিষয়ে কানাডা সরকার যে অবস্থান নিয়েছে তা পুনঃবিবেচনার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ। দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশন সূত্র জানিয়েছে, তাকে ফেরানোর প্রক্রিয়া এগুচ্ছে।
অপরদিকে সম্প্রতি রাশেদ চৌধুরীর রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়ার নথিপত্র চেয়েছেন মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার। একটি দেশে আশ্রয় পাওয়ার দীর্ঘ ১৫ বছর পর এভাবে মামলার নথি চাওয়া বিরল ঘটনা।
তবে বরখাস্ত হওয়া কর্নেল শরীফুল হক ডালিম, কর্নেল রশীদ ও রিসালদার মোসলেউদ্দিনের অবস্থান নিয়ে এখনো অনুসন্ধান চলছে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তিনি জানিয়েছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না সব হত্যাকারীদের ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করা হবে ততক্ষণ পর্যন্ত প্রচেষ্টা চালাবে সরকার।
আর এখনো সব খুনিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে না পারাকে কষ্টদায়ক উল্লেখ করে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম তাদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আশাবাদ প্রকাশ করেছেন।