অবশেষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তড়িৎ তৎপড়তায় গ্রেফতার হলো দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউওনও) ওয়াহিদা খানম ও তাঁর বাবা ওমর আলী শেখের ওপর হামলার দুষ্কৃতিকারীরা।
আজ শুক্রবার ভোর পাঁচটার দিকে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও পুলিশের যৌথ অভিযানে তাঁদের আটক করা হয়। অভিযানে যুবলীগ নেতাসহ দু’জনকে আটক করা হয়।
হাকিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস ওয়াহিদ আটক করার তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। উল্লেখ্য যে, হামলার ঘটনায় ইউএনও এর ভাই শেখ ফরিদ উদ্দিন বাদী হয়ে ঘোড়াঘাট থানায় গতকাল ৩ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে অজ্ঞাতনামা চার থেকে পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করেছেন।
অভিযানে গ্রেফতারকৃত দুজন হলেন ঘোড়াঘাট উপজেলার রানীগঞ্জ কষিগারি এলাকার আবুল কালামের ছেলে জাহাঙ্গীর হোসেন (৪২)। অন্যজন একই উপজেলার ওসমানপুর সাগরপাড়া এলাকার আমজাদ হোসেনের ছেলে আসাদুল ইসলাম (৩৫)। জাহাঙ্গীর ২০১৭ সাল থেকে ঘোড়াঘাট উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছে এবং মাসুদ ঘোড়াঘাট সিংড়া ইউনিয়ন যুবলীগের নেতা।
তাদের গ্রেফতারের করা সম্পর্কে জানতে গিয়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফেরদৌস ওয়াহিদ দৈনিক অপরাজিত বাংলাকে জানান, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে বিরামপুর, হাকিমপুর ও ঘোড়াঘাট থানার পুলিশের একটি দল আজ ভোর পৌনে পাঁচটার দিকে হাকিমপুর উপজেলার কালিগঞ্জ এলাকায় বোনের বাসা থেকে আটক করে আসাদুলকে। আটকের পর তাকে রংপুর রেঞ্জের অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। অন্যদিকে, দিনাজপুরের র্যাবের সদস্যরা জাহাঙ্গীর হোসেনকে তার নিজ বাসা থেকে আটক করেন।
তিনি আরও বলেন, “আটক করা দুজন মাদক সেবনকারী ও ব্যবসায়ী। থানায় তাদের দু’জনের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মাদক মামলা রয়েছে। তবে ইউএনওর ওপর তারা কী কারণে হামলা করেছে, সে বিষয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।”
জাহাঙ্গীর হোসেন সম্পর্কে বলতে গিয়ে দিনাজপুর-৬ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সাংসদ জনাব শিবলী সাদিক বলেন, “জাহাঙ্গীর বেপরোয়া টাইপের। কিছুদিন আগে আমার ওপরও হামলার চেষ্টা করেছিলেন।” তিনি জাহাঙ্গীর হোসেনের আটকের বিষয়টি নিশ্চিৎ করেন।
এদিকে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। তারা হামলার কারণ অনুসন্ধান করে দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার দাবি করেছে। প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের এ সংগঠনের সভাপতি ও স্থানীয় সরকার বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ এবং মহাসচিব ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব শেখ ইউসুফ হারুনের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ৩ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার এ দাবি জানানো হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২ সেপ্টেম্বর বুধবার মধ্যরাতে ইউএনওর সরকারি বাসভবনের ভেন্টিলেটর কেটে দুর্বৃত্তরা তাঁর শয়নকক্ষে ঢুকে পড়ে। এর আগে দুর্বৃত্তরা ওই বাসভবনের নিরাপত্তাপ্রহরীকে বেঁধে প্রহরীকক্ষে তালা দিয়ে আটকে রাখে। ইউএনওর বাবা ওমর আলী (৬০) প্রতিদিন সকালে হাঁটতে বের হন। কিন্তু গতকাল সকালে তিনি হাঁটতে বের না হওয়ায় সঙ্গীরা তাঁর খোঁজ নেওয়ার জন্য বাসভবনে যান। অনেক ডাকাডাকি করেও কোনো সাড়া না পেয়ে তাঁরা পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশ গিয়ে ইউএনও, তাঁর বাবা ও প্রহরীকে উদ্ধার করে।
এদিকে শেষ খবর জানা যায়, ওয়াহিদা খানমের অস্ত্রোপচারের পর রাতেই জ্ঞান ফিরেছে। বর্তমানে তাকে ৭২ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। আজ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসাইন্স হাসপাতালের উপ-পরিচালক অধ্যাপক ডা. বদরুল আলম এ তথ্য জানান। চিকিৎসকরা আরও জানান, বৃহস্পতিবার রাতের অস্ত্রোপচারে ওয়াহিদা খানমের ৭ থেকে ৮ টি ভাঙ্গা হাড়ের টুকরো জোড়া লাগাতে হয়েছে। এছাড়া অন্য ক্ষতিগ্রস্থ আঘাতপ্রাপ্ত অংশগুলোর রিপেয়ার করতে হয়েছে। অস্ত্রোপচারের ১১ ঘন্টা পর ওয়াহিদা খানমের জ্ঞান ফিরে,তবে তিনি এখনও আশংকামুক্ত নন বলে জানান অধ্যাপক ডা. বদরুল আলম।