বাংলাদেশের পুলিশ কর্মকর্তাদের অনেকে ঘুষ গ্রহণ করেন এই অভিযোগ নতুন নয়, অনেক পুরনো। তবে এবার ব্যতিক্রমী এক পুলিশ কর্মকর্তার খবর পাওয়া গেছে। যিনি হাত জীবাণুমুক্ত না করে ঘুষ গ্রহণ করেন না।করোনা দুর্যোগের কারণে ঘুষ লেনদেনেও পরিবর্তন এনেছেন অনেক দুর্নীতিবাজ পুলিশ কর্মকর্তা।
লালমনিরহাট : লালমনিরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজ আলমের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, স্যানিটাইজার দিয়ে হাত জীবাণুমুক্ত করে ঘুষ নিচ্ছেন ওসি মাহফুজ। ভিডিওর ঘটনাটি গত মাসের মাঝামাঝি সময়ের।
জানা গেছে, লালমনিরহাট সদর থানার একটি মামলার আসামি পক্ষের কয়েকজন বাদীকে হেনস্থা করার কৌশল জানতে ওসি মাহফুজ আলমের কাছে যান। কৌশল হিসেবে ওসির পরামর্শ মোতাবেক তারা মামলাটির বাদীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন। এ জন্য ওসিকে ১০ হাজার টাকা ঘুষ দেন। এ সময় তদন্ত কর্মকর্তাকে ৩ হাজার টাকা দিতে হবে বলে আরও ২ হাজার টাকা বেশি দাবি করেন ওসি।
ভিডিও বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ওসি মাহফুজ আলম আসামির অবস্থান জানার পরও তাকে জামিন নিয়ে বাদীর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।
ভিডিওটির সঙ্গে অডিও যুক্ত ছিল না। আর অন্য একটি অডিওতে এ সংক্রান্ত কথোপকথন রয়েছে।
ভিডিওর কথোপকথন-
ভিডিওতে ওসি মাহফুজ বলেন, তোমাদের বাদীর তো জামিন হয় নাই। জামিন না হতেই থানায় হাজির হয়ে এজাহার দেওয়া হলে তো বেআইনি হবে। জামিনের কাগজসহ এসো, অভিযোগটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হবে। মামলা না হওয়া পর্যন্ত কোনো ঝামেলা করা যাবে না। ঝামেলা হলে তোমরা প্যাচে পড়ে যাবে।
ঘুষ দাতা : আমরা ঝামেলা করি নাই, করব না। প্রয়োজনে ওদিকে কেউ যাব না।
ওসি মাহফুজ : মামলা এখানে একটা করে দেব, কোর্টেও একটা মামলা করবা এবং চেক ডিজঅনার করবে। এভাবে ঘুরবে (আঙুল ঘুরিয়ে দেখিয়ে দেন), চড়কির মতো ঘুরবে। যারা বুদ্ধিদাতা তারা হেরে যাবে। তোমাকে ঠাণ্ডা মাথায় করতে হবে। গরম করা যাবে না।
ঘুষ দাতা : আস্তে আস্তে করতে হবে। একটা একটা করে। স্যার টাকা আজকে দেব না কি মামলার দিন?
ওসি বললেন, সেটা তোমাদের ব্যাপার।
ঘুষ দাতা : স্যার, আপনাকে কমিটমেন্ট করতে হবে। যেদিন মামলা হবে, সেই দিনই আসামি ধরতে হবে।
ওসি : আসামিরা পুরুষ তো?
এরপর টাকা দেওয়ার সময় ঘুষ দাতা বলেন, স্যার, স্যানিটাইজারটা একটু দেন। এরপর ওসি মাহফুজ কাজ ফেলে স্যানিটাইজার দিয়ে নিজেও হাত জীবাণুমুক্ত করে নেন এবং ঘুষ দাতার হাতেও স্যানিটাইজার দেন।
ঘুষ দাতা এসময় বলেন, স্যার, টাকা থেকেও করোনা ছড়ায়। তদন্ত কর্মকর্তাকে আগে এক হাজার টাকা দিয়েছি স্যার। এরপর ঘুষ দাতা পকেট থেকে টাকা বের করে টেবিলে রাখলে ওসি মাহফুজ আলম তা নিয়ে প্যান্টের পকেটে রেখে বলেন, টাকা দিয়ে বেশি ছড়াচ্ছে। এখানে কত টাকা দিয়েছ?
ঘুষ দাতা : ১০ হাজার আছে স্যার।
ওসি : ওহ ঠিক আছে। ওকে (মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে) আরও দুই হাজার টাকা দিও।