ক্রিসমাসের সময় বেথেলহামের অলিগলিতে চার্চের ঘণ্টার শব্দ শোনা যায়। ক্রিসমাসের এই সময়ে ইযরায়েল-অধিকৃত পশ্চিম তীর পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত থাকার কথা। কিন্তু গাজায় চলমান যুদ্ধের কারণে সেখানে এই বছর মরুভূমির মতো নীরবতা বিরাজ করছে।
এখানকার স্থানীয় নেতারা প্যালেস্টাইনের বাসিন্দাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশের উদ্দেশ্যে উৎসব বা অনুষ্ঠানের আয়োজন পিছিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। বিধ্বস্ত গাজা উপত্যকায় এখনও ইযরায়েল ও হামাসের মধ্যে প্রচণ্ড লড়াই চলছে।
হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজায় ইযরায়েলের বিমান হামলা ও স্থল অভিযানের কারণে ২০ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং সেখানকার প্রায় ৮৫ শতাংশ বাসিন্দা বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
ইযরায়েলে অক্টোবরের ৭ তারিখ হামাসের হামলায় ১,২০০ মানুষের মৃত্যু হয় ও ২৪০ জনেরও বেশি ইযরায়েলিকে জিম্মি করে নিয়ে যায় হামাস।
বেথেলহামের অনেকেরই আত্মীয়তার কারণে গাজার সঙ্গে সম্পর্ক থাকায় গাজায় মানুষের মৃত্যু ও দুর্দশার কারণে যিশুর জন্মস্থান হিসেবে পরিচিত এ এলাকাটিতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
বেথেলহামের ভেতরের এলাকাগুলোতে সাজ-সজ্জার উপকরণগুলোও সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এখানকার কুচকাওয়াজ ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলো বাতিল করা হয়েছে। শহরের কেন্দ্রে ম্যাংগার স্কয়ারের ঐতিহ্যবাহী বিশালাকার ক্রিসমাস ট্রি গুলোর অনুপস্থিতিও স্পষ্ট।
জেরুযালেম থেকে ৮ কিলোমিটার দক্ষিণে বেথেলহামে ভ্রমণ করা সহজ নয়। ইযরায়েলের তৈরি পশ্চিম তীরের দেয়াল ও শহরের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থিত ইযরায়েলি সেনাদের চেকপোস্টের কারণে সেখানে যাত্রা প্রায়ই বাধাপ্রাপ্ত হয়। ইযরায়েলে হামাসের অতর্কিত হামলার পর এই অবস্থার কেবল অবনতিই হয়েছে।
হামাসের অক্টোবরের ৭ তারিখের হামলার পর বেথেলহাম সহ পশ্চিম তীরের অন্যান্য শহুরগুলোতে সাধারণ মানুষের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করে ইযরায়েল। শহরটিতে কেবল ইযরায়েলের সামরিক বাহিনীর সদস্যদের শহরটিতে ঢোকা ও বের হওয়ার অনুমতি ছিল।
প্যালেস্টেনিয়ান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইযরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৩০০ জন নিহত হয়েছেন।
বেথেলহামের কাছে আল শাওয়াওরা নামক গ্রামের বাসিন্দা আলি থাবেত সিএনএনকে বলেন, ‘আমার ছেলে আমাকে জিজ্ঞেস করেছে এই বছর এখানে কেন কোনো ক্রিসমাস ট্রি নেই। আমি বুঝতে পারছি না তাকে কিভাবে এটা বুঝিয়ে বলব।’
তিনি জানিয়েছেন, বেথেলহামের ক্রিশ্চিয়ান ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে সুসম্পর্কের কারণে তারা প্রতি ক্রিসমাসে বেথেলহাম ভ্রমণে যান।
তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের উৎসবে যাই ও তারা আমাদের উৎসবে আসে। তবে এবারের ছুটির মৌসুমটি খুবই খারাপ।’
করোনা মহামারির দুর্ভোগ ও ভ্রমণ বিধিনিষেধ শেষ হওয়ার পর এখানকার ব্যবসা ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে এখানে পর্যটক শূন্যতার কারণে বেশিরভাগ দোকান ও রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়ে গেছে।
বেথেলহামের একজন দোকান মালিক রনি তাবাশ জানান, সেখানকার অর্থনীতি নির্ভর করে মূলত তীর্থযাত্রী ও পর্যটকদের ওপর। খোদাই করা জলপাই কাঠের সুভেনির ছিল তাবাশের দোকানে। তিনি দক্ষ কারিগরদের তৈরি পণ্যগুলো বিক্রি করার আশা নিয়ে ক্রেতাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা এমন ক্রিসমাস কখনও দেখিনি। সত্যি কথা বলতে, গত তিন মাস ধরে আমাদের কোনো বিক্রিই হয়নি।’
প্যালেস্টেনিয়ান এলাকাগুলোর মধ্যে প্রথমবার বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পাওয়া চার্চ অফ নেটিভিটিও খালি অবস্থায় পড়ে আছে। স্বাভাবিক সময়ে এই স্থানটি অসংখ্য তীর্থযাত্রীর পদচারণায় মুখরিত থাকে।
চার্চটির গ্রিক অর্থোডক্স প্রিস্ট ফাদার স্পিরিডন স্যামুর বলেন, ‘আমি চার্চটিকে কখনও এমন অবস্থায় দেখিনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ক্রিসমাস হলো আনন্দ, ভালোবাসা ও শান্তি। আমাদের কোনো শান্তি নেই। আমাদের কোনো আনন্দ নেই। পরিস্থিতি এখন আমাদের হাতের বাইরে চলে গেছে। আমরা সেইসব নেতাদের জন্য প্রার্থনা করি যারা ঈশ্বরের সাহায্য ও আশীর্বাদ নিয়ে এখানে ও পুরো বিশ্বে শান্তি বজায় রাখার জন্য সিদ্ধান্ত নেবেন।’