বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডব্লিউএইচও বহু আগেই বিশ্বকে সতর্ক করেছিলো করোনার দ্বিতীয় ধাপ অবশ্যম্ভাবী এবং তা হবে প্রথম ধাপের চেয়েও ভয়াবহ। ডব্লিউএইচও -এর সতর্কতা আমলে নেয় নি প্রাথমিক করোনা সংকট কাটিয়ে উঠা অনেক উন্নয়নশীল দেশগুলো। ইতিমধ্যে ইউরোপের বেশ কিছু দেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রে ইতিমধ্যে করোনার ভয়াবহতা শুরু হয়ে গেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ঝুঁকিপূর্ণ অনেকগুলো দেশের মধ্যে বাংলাদেশ বিপদজনক অবস্থায় আছে। তার প্রমান গত কিছুদিনের দৃষ্যপটে ক্রমেই স্পষ্ঠ হয়ে উঠছে। ২২ আগস্ট শনিবার সকালে সড়ক ও জনপথ ভবনে ভিডিও কনফারেন্সে রাজশাহী জোনের উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে আলোচনার সময় এমনই আশংকা করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি যেকোনো সময় দেশে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বলে মন্তব্য করছেন। স্বাস্থ্যবিধির প্রতি যেভাবে অবহেলা করা হচ্ছে তাতে ঝুঁকি ক্রমেই বাড়ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে আজ দেশে করোনাভাইরাসে (কভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরো ৪৬ জন মারা গেছেন। তাদের মধ্যে পুরুষ ৩৬ জন ও নারী ১০ জন। হাসপাতালে মারা গেছেন ৪৫ জন ও বাড়িতে একজন। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো তিন হাজার ৯০৭ জনে। করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় ৯১টি করোনা শনাক্তকরণ আরটি-পিসিআর ল্যাবরেটরিতে ১০ হাজার ৫৯৫টি নমুনা সংগ্রহ ও ১১ হাজার ৩৫৬টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। একই সময়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন আরো দুই হাজার ২৬৫ জন। ফলে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো দুই লাখ ৯২ হাজার ৬২৫ জনে। এ নিয়ে মোট নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ৩১ হাজার ৮৫৫ জনে। এ পর্যন্ত করোনায় মৃত্যুবরণকারী তিন হাজার ৯০৭ জনের মধ্যে পুরুষ তিন হাজার ৮২ জন (৭৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ)এবং নারী ৮২৫ জন (২১ দশমিক ১২ শতাংশ)। শনিবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত করোনাভাইরাসবিষয়ক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মৃত ৪৬ জনের মধ্যে ত্রিশোর্ধ্ব একজন, চল্লিশোর্ধ্ব ছয়জন, পঞ্চাশোর্ধ্ব ছয়জন এবং ষাটোর্ধ্ব ৩৩ জন রয়েছেন।
আজ শনিবার শুধু ঢাকায় মারা গেছে ১৭ জন এবং আরেক করোনা অধ্যুষিত জেলা বন্দরনগরী চট্টগ্রামে মারা গেছে পাঁচ জন। এছাড়া রাজশাহী বিভাগে আটজন, খুলনা বিভাগে একজন, বরিশাল বিভাগে দুইজন, সিলেট বিভাগে দুইজন এবং রংপুর বিভাগের একজন মারা গেছেন।
অন্যদিকে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে করোনাতে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে গেছে। আজকে দেশটিতে মারা গেছে ৯৭৮ জন। বিশ্লেষকরা মনে করছেন এটা বাংলাদেশের জন্য বিপদজনক হবে।
করোনার ভয়াবহতা বাড়ার অন্যতম কারন হিসেবে বাংলাদেশের মানুষের করোনা সতর্কতা নিয়ে নিদারুন অবহেলাকে দায়ী করেছেন প্রখ্যাত মনোবিজ্ঞানী ডঃ সাফায়েত উল্লাহ। তিনি বলেন, “সরকারের দেয়া সাধারন জনগনের চলাচলের জন্য বিশেষ প্রজ্ঞাপন গুলোকে আমলে নিচ্ছে না সাধারন মানুষ। স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিদের দুর্ণীতি আর করোনা চিকিৎসা ক্ষেত্রে রোগীদের প্রতি স্বাস্থ্য কর্মীদের চরম অবহেলা, লাঞ্চনা এবং অসহযোগীতা করোনা টেস্টের প্রতি চরম বিরক্তি এনে দিয়েছে মানুষের মনে। অসুস্থ হলে মানুষ হাসপাতাল বা চিকিৎসকদের কাছে যেতে ভয় পাচ্ছে। হাসপাতালে চিকিৎসা বিল নিয়ে আতংকিত এখন মানুষ।” তিনি আরও বলেন, “করোনার জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টি গত একমাসের মধ্যে অনেক কমে গেছে। গনপরিবহনে মানুষ ঠাসা ঠাসি করে উঠছে, রাস্তায় শতকরা ৬০ জনের মুখে মাস্ক নেই। বিনোদন ও হোটেল-মোটেল গুলো খুলে দেবার কারনে পরিস্থিতি খুব শিঘ্রই নাগালের বাহিরে চলে যেতে পারে।”
কিছুদিন আগ পর্যন্ত প্রশাসনের কঠোর তৎপরতায় বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নত হতে শুরু করছিলো। কিন্তু গেলো এক মাসের মধ্যে প্রশাসনের শিথিল ভাব সাধারন মানুষের মধ্যে আবার অসচেতনতা ফিরে এসেছে যার খেসারত দিতে হতে পারে ভয়ংকর পরিস্থিতির মাধ্যমে। মূল কথা হলো, প্রশাসন কিছু করে দিতে পারবে না যদি সাধারন মানুষ নিজেদের নিজেরা সতর্ক না করেন এবং সামাজিক দুরুত্ব বজায় রাখার মাধ্যমে নিজেরা সচেতন না হন। কেননা ভয়ংকর চিত্র অপেক্ষা করছে সামনের সংক্ষিপ্ত ভবিষ্যতে।