করোনার ২য় প্রবাহ কতটা ভয়ংকর রুপ নিতে পারে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যে হুশিয়ারী দিয়েছিলো তার সত্যতা মিলতে শুরু করেছে। করোনার ১ম পর্যায়ে গোটা ইউরোপের কোমড় ভেঙ্গে দেওয়ার পর এবার সেই আহত ইউরোপ জোনের উপর আবারও থাবা বসাতে যাচ্ছে করোনা ভাইরাসের ২য় প্রবাহ।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ধাক্কা সামলাতে প্যারিস ও আরও আটটি শহরে রাতের বেলায় কারফিউ জারি করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। এসব শহরের বাসিন্দারা রাতের বেলা ঘর থেকে বের হতে পারবেন না। ১৭ অক্টোবর শনিবার থেকে উক্ত কারফিউ কার্যকর হয়েছে।
শুক্রবার দুপুর দুইটা থেকে শনিবার দুপুর ২ তা পর্যন্ত অর্থাৎ ২৪ ঘন্টায় ফ্রান্সে ৩২৪২৭ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে যা কিনা ফ্রান্সে অন্য যেকোন সময়ের ২৪ ঘন্টায় আক্রান্তের রেকর্ড। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে যাচ্ছে পজিটিভিটির হার।
প্রতিদিন যে পরিমান টেস্ট হচ্ছে তার পরিসংখ্যানে দেখা গেছে শতকরা ১৩.১% এর পজিটিভ ধরা পড়েছে। আগে এক জন দুই জন করে সনাক্ত হতো কিন্ত এখন সনাক্ত হচ্ছে দলবেঁধে গ্রুপে গ্রুপে।
এই ধরনের গ্রূপকে ফরাসি তে বলা হচ্ছে “Cluster”। “Cluster” এর বেশি সৃষ্টি হচ্ছে বার থেকে। রেস্টুরেন্ট-বার মালিক এবং ক্রেতার গাফলতির কারণে এই সেক্টর থেকে “Cluster” সৃষ্টি হচ্ছে বেশি। এখানে ১ মিটার দূরত্ত্ব যেমন বজায় থাকে না তেমনি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ক্রেতারাও মাস্ক পরে থাকে না। তা ছাড়া রেস্টুরেন্ট-বার গুলিতে বায়ু চলাচলের সুব্যাবস্থা নেই। কারো হাঁচি-কাঁশিতে ভাইরাস থাকলে, তা ওই জায়গাতেই থেকে যায়।
সে তুলনায় পাবলিক ট্রান্সপোর্ট থেকে “Cluster” সৃষ্টি হচ্ছে কম বা বলতে গেলে হচ্ছেই না। কারণ এই সময় প্রায় সবারই মাস্ক পড়া থাকেন।
প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রো তার সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “বাসা/বাড়ী” দিনে অন্তত তিনবার বায়ু চলাচল নিশ্চিত করতে হবে। প্যারিসের কোনো রেস্টুরেন্টের অভ্যন্তরে এই ব্যাবস্থা নেই।
প্রেসিডেন্ট বলেন, “Zone d’Alerte Maximale” অঞ্চলে অবস্থিত বার গুলি যখন রাত ১০ টা থেকে বন্ধ করে দিতে বলা হলো, তখন দেখা গেলো রাতারাতি সব বার-রেস্টুরেন্টগুলো আগে ভাগেই ভর্তি হয়ে গেলো। ফলাফল কি পেলাম? ভাইরাস নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলো।
গত এক সপ্তাহে গড়ে প্রতিদিন ২৫০০০ এর উপর ভাইরাসে আক্রান্ত হলো। সুতরাং দেখা যাচ্ছে ভাইরাস নিয়ন্ত্রন করতে হলে সরকারকে বার/রেস্টুরেন্ট গুলি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সেই সাথে ক্লায়েন্টদের সচেতন হতে হবে। এই মুহূর্তে ১৭২২ টি “Cluster” পর্যবেক্ষনে আছে।
প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, মৃতের সংখ্যাও দিন দিন বেড়ে চলছে। গত ২৪ ঘন্টায় মারা গেছে ৯০ জন। কারফিউ জারির ফল পেতে আমাদের কম না হলেও ১০ দিন লাগবে। সবাইকে যার যার নিরাপত্তা নিজেদের নিশ্চিত করতে হবে।
স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায় যে, ফ্রান্সের ICU গুলিতে এখন ১২৬৯ জন চিকিৎসাধীন। সবচেয়ে বাজে অবস্থায় আছে Île-De-France তে অবস্থিত ICU গুলিতে। ইতিমধ্যে ধারণ ক্ষমতার ৩০% করোনা আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে। সমগ্র ফ্রান্সে ICU এর ধারণ ক্ষমতা ৫০০০ জন। যে হরে “Cluster” আসতেছে তাতে ICU নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে সময় লাগবে না।