ঢাকারবিবার , ২২ নভেম্বর ২০২০
  1. অনান্য
  2. অপরাধ ও আইন
  3. অভিবাসীদের নির্মম জীবন
  4. অর্থনীতি
  5. আত্মসাৎ
  6. আন্তর্জাতিক
  7. ইতিহাস
  8. উদ্যোক্তা
  9. এশিয়া
  10. কৃষি
  11. ক্যাম্পাস
  12. খেলাধুলা
  13. গণমাধ্যম
  14. গল্প ক‌বিতা
  15. চট্টগ্রাম বিভাগ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

গোল্ডেন মনিরের সম্পদ তদন্তে কি রাঘব বোয়ালদের বিষয়গুলো আসবে না বাদ যাবে?

নিজস্ব প্রতিবেদক
নভেম্বর ২২, ২০২০ ১০:৩০ অপরাহ্ণ
Link Copied!

রাজধানীতে মাথা গোঁজার মতো ঠাঁই নেই এমন মানুষের অভাব নেই। অথচ একাই গোল্ডেন মনির ২০০ প্লটের মালিক হয়েছেন। তার বিশাল এই সম্পদের মালিক হওয়ার পেছনে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জড়িত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

কেরানীগঞ্জের কাপড়েরর ফেরিওয়ালা সিরাজ মিয়ার ছেলে মনির দশম শ্রেণি পর্যন্ত লেখা পড়া করে বাবার সাথেই ব্যবসা শুরু করেন। এক সময় ব্যবসার কিছুটা প্রসার ঘটিয়ে মৌলভীবাজার থেকে কাপড় এনে বিভিন্ন দোকানে সরবরাহ করতেন। কিন্তু ভাগ্যের চাকা দ্রুত পরিবর্তনের জন্য ধূর্ত মনির ব্যাংকক-সিঙ্গাপুরে ল্যাগেজ ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। আর সেই ব্যবসার আড়ালেই শুরু করেন স্বর্ণ চোরাচালান।
গত শনিবার (২১ নভেম্বর) রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় নিজ বাসা থেকে গোল্ডেন মনিরকে ৬০০ ভরি সোনার গহনা, বিদেশি পিস্তল-গুলি, মদ, ১০ দেশের বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা ও নগদ এক কোটি নয় লাখ টাকাসহ আটক করা হয়। তার বাড়ি থেকে অনুমোদনহীন ২টি বিলাসবহুল গাড়ি, রাজউক ও ভূমি কর্মকর্তাদের ৩২টি নকল সিল, জাল দলিলসহ বিভিন্ন আলামত জব্দ করা হয়। অটো কার সিলেকশন নামে তার মালিকানাধীন গাড়ির শোরুম থেকেও তিনটি অনুমোদনহীন গাড়ি জব্দ করা হয়েছে। যার প্রতিটির বাজারমূল্য প্রায় তিন কোটি টাকা।
আজ রোববার (২২ নভেম্বর) রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান মো. সাঈদ নুর আলম বলেন, যারাই জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গোল্ডেন মনিরের নামে ২০০ প্লটের বরাদ্দের বিষয়টি যাচাই-বাছাই করা হবে। অনিয়ম রোধে রাজউকে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করা হবে।

গোল্ডেন মনির ২০০ প্লটের মালিকানা বিষয়ে দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকার সাংবাদিক বর্তমানে সিডনি , অস্ট্রেলিয়া নিবাসী ফজলুল বারী বলেন, গোল্ডেন মনিরের সম্পদ তদন্তে কি রাঘব বোয়ালদের বিষয়গুলো আসবে না বাদ যাবে?  রাঘব বোয়াল মানে বর্তমান পুর্ত প্রতিমন্ত্রী, সচিব এবং রাজউকের বর্তমান ও সাবেক চেয়ারম্যান।
ওয়াকিফহাল সূত্রগুলোর মতে বর্তমান প্রতিমন্ত্রী দায়িত্ব নেওয়ার পরে বিভিন্ন সময়ে গোল্ডেন মনিরের মোবাইল থেকে নানান লেনদেন হয়েছে। বর্তমান প্রতিমন্ত্রী রাজউক কর্মকর্তাসহ গণপূর্ত বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীকে বিভিন্নজনকে কাজ দেওয়ার জন্য হুমকি দিয়েছেন অনুরোধ করেছেন! বিষয়টি মনিরের মোবাইলের কললিস্ট চেক করলে বা রেকর্ড খুঁজলে অবশ্যই বেরিয়ে আসবে। নাম্বার দুটি +8801747-777773 ও +8801747-777772.
সচিবালয় কর্মরত অর্থাৎ গণপূর্তমন্ত্রীর বিট করেন এমন সাংবাদিকদের অনেকে জানেন, সচিব শহীদুল হক খন্দকার এর কক্ষে এবং প্রতিমন্ত্রীর কক্ষে বেশিরভাগ সময় মনির তাদের পাশের চেয়ারে বসে থেকে নানান ফাইল স্বাক্ষর করাতেন!
রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান এর কাছ থেকে কোটি কোটি টাকার প্লট অবৈধ ভাবে তিনি তাঁর নিজের নাম এবং আত্মীয়-স্বজনের নামে করিয়ে নিয়েছেন। মনির একটি দলের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের সময় চার কোটি টাকা দিয়েছিলেন! আদায় করেছেন এর কয়েকগুন।
বিশেষ কার্যালয়ের এবং বিশেষ বাসভবনের নিরাপত্তা দায়িত্বে থাকা একটি বিশেষ বাহিনীর প্রধান কে মনির নিজের ভগ্নিপতি হিসেবে পরিচয় দিতেন! সেই সুবাদে মনিরের বাসায় এবং উত্তরায় এবং বিশেষ বাহিনীর প্রধানের বাসায় মনির এবং সচিব শহীদুল্লাহ খন্দকার অসংখ্যবার বৈঠক করেছেন! শহীদুল হক খন্দকার এবং বর্তমান প্রতিমন্ত্রীর মোবাইলের কল লিস্ট চেক করলে মনিরের মোবাইল নাম্বার এর অসংখ্য কল পাওয়া যাবে।
শহীদুল্লাহ খন্দকার তার স্ত্রীর চাচতো ভাই কে দিয়ে সিঙ্গাপুরে বৈধভাবে সবজির ব্যবসা করাচ্ছেন! কিন্তু সেই ব্যবসার আড়ালে রয়েছে মনিরের স্বর্ণ ব্যবসা! যেখানে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করা আছে। কানাডায় বাড়ি আছে শহীদুল্লাহ খন্দকারের ছেলের নামে! এটা কি তদন্ত হবে?
বর্তমান প্রতিমন্ত্রীর স্ত্রী অন্য একটি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব পদে কর্মরত। তাকে খুশি করতে গোল্ডেন মনির বিভিন্ন সময়ে দুবাই থেকে স্বর্ণ গহনা অত্যাধুনিক পোশাক এবং আসবাবপত্র এনে গিফট করেছেন! এসব কি আসবে তদন্তে?
শহীদুল্লাহ খন্দকারের পরিবারের সবার চিকিৎসা ছেলের বিদেশ যাতায়াত সিঙ্গাপুর ও কানাডায় কমিশনের টাকা পাঠিয়ে দিতেন গোল্ডেন মনির! তদন্তে কি আসবে এসব?
সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে দুর্বৃত্তায়ন চলছে। যার প্রকৃত উদাহরণ গোল্ডেন মনির। একজন গোল্ডেন মনির একাই অনিয়ম করতে পারেননি, তার সঙ্গে রাজউকের কর্মকর্তারা নিশ্চিত জড়িত ছিল। এসব অনিয়মে গোল্ডেন মনির গ্রেপ্তার হয়েছেন কিন্তু তার সঙ্গে যেসব প্রভাবশালী নেতা ও সরকারি কর্মকর্তা জড়িত ছিলেন তাদেরকে খুঁজে গ্রেপ্তার করলে রাজউক, ঢাকা ওয়াসা, বিআইডব্লিউটিএসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার দায়িত্বে থাকা সরকারি কর্মকর্তারা বারবার অনিয়ম করার সাহস পাবেন না
রাজউকের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গোল্ডেন মনির নিয়মিত রাজউকে আসতেন। তার জন্য সংস্থাটির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সম্পর্ক ছিল। মনির ভিআইপি প্রটোকলের মতো মর্যাদা পেতেন। রাজউকের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সু-সম্পর্ক থাকায় কর্মচারীরা গোল্ডেন মনিরকে দেখা মাত্রই ব্যস্ত হয়ে পড়তেন।
২০০ প্লটের মালিক হওয়ার পেছনে রাজউকের কারও সহযোগিতা বা ইন্ধন আছে কিনা এমন প্রশ্নে রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, এতোগুলো প্লটের মালিক একজন ব্যক্তি একদিনে হয়নি। দীর্ঘদিনের প্রক্রিয়ায় গোল্ডেন মনির ২০০ প্লটের মালিক হয়েছেন।
রাজউক ভবনে মনিরের একটি অফিসের অনেক কাগজপত্র পাওয়ার বিষয়ে রাজউক চেয়ারম্যান সাঈদ নুর বলেন, গতবছরে রাজউকের চেয়ারম্যান ছিলেন সুলতান আহমেদ। সে সময় আমি সদস্য (প্রশাসন) ছিলাম। আমাদের সবার একটি অভিযান পরিচালতি হয়েছিল রাজউকেরই একটি কক্ষে। এ কক্ষটি বাহিরে ভাড়া দেওয়া ছিল। এ কক্ষ থেকে আমরা ৭২টি নথি উদ্ধার করেছি। সেই নথি উদ্ধারের পরিপ্রেক্ষিতে মতিঝিল থানায় মামলা দায়ের করেছি। সেই সময়ই একজন কর্মচারী আটক হন তাকে আমরা থানায় সোপর্দ করি। এ বিষয়টি এখনও বিচারাধীন আছে। সেই কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করেছি এবং মামলা চলমান রয়েছে। তদন্তও চলছে। এর সঙ্গে আর যারা জড়িত আছে, পুলিশ চার্জশিট দিলে এবং শনাক্ত হলে আমরা তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
সরকারের প্রতিটি সংস্থার রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি প্রবেশ করেছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সরকার বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করলেও তাদের দুর্নীতি বন্ধ করতে পারেনি। বরং আগের তুলনায় দুর্নীতির মাত্রা বেড়েছে। রাজউকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ ছাড়া কোনোভাবেই গোল্ডেন মনির ২০০ প্লটের মালিক হতে পারতেন না। এই ঘটনার সঙ্গে সরকারের যেসব কর্মকর্তা ও প্রভাবশালী নেতা জড়িত রয়েছেন তাদেরকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী খুঁজে কঠোর সাজা নিশ্চিত করতে হবে।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল অপরাজিতবাংলা ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন oporajitobangla24@yahoo.com ঠিকানায়।