রোববার (২৩ আগস্ট) সকাল ১১টায় বাজালিয়ার বুড়ির দোকান স্টেশনে বেশ কিছু দরিদ্র শ্রেণীর মানুষদের একসাথে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। তাদের কারো কারো হাতে খালি ব্যাগ। অনেকে আবার দাঁড়িয়ে আছেন ব্যানার হাতে। আর এভাবেই শুরু হয় চট্টগ্রাম সাতকানিয়া বাজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হত্যাচেষ্টা মামলার ১ নম্বর আসামী তাপস দত্তের পক্ষে মানববন্ধন। দৈনিক অপরাজিত বাংলার প্রতিবেদক কাছে গিয়ে ব্যানার ধরা লোকদের কাছে জানতে চায় কেন তারা এখানে, “এমন প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, চেয়ারম্যান সাহেব তাদের চাল দেবেন বলে এখানে এনেছেন এবং কিছুক্ষন পর তাদের সবাইকে চাল দিবেন।” আর এভাবেই চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার ইউপি চেয়ারম্যান বাবু তাপস দত্তের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের হওয়ার পর ইউনিয়ন পরিষদের সরলমনা হতদরিদ্র মানুষগুলোকে মিথ্যে চাল দেয়ার নাম করে ডেকে এনে মানববন্ধন আয়োজন করার অভিযোগ উঠেছে।
মূলতঃ হত্যা চেষ্টা মামলাকে আড়াল করার জন্য চেয়ারম্যান ও তার অনুসারীদের এমন কর্ম পন্থা অবলম্বন করেছে বলে অভিযোগ উঠে। তবে চাল দেওয়ার কথা বলে লোকজনকে মানববন্ধনে ডাকা হলেও সভা শেষে তাদের খালি হাতে ফেরত পাঠানো হয়েছে। প্রকাশিত একাধিক ভিডিও ক্লিপে দেখা যায় চাল পাওয়ার প্রত্যাশায় আসা দরিদ্র মানুষ গুলো হাতের খালি নিয়ে যেতে যেতে অভিশম্পাত দিচ্ছে।
ঘটনার দৃশ্যপট থেকে জানা যায় যে, এর আগে গত ২১ আগস্ট দুপুরে বাজালিয়ার হলুদিয়া ফরেস্ট রেঞ্জ এলাকায় সন্ত্রাসী হামলায় গুরুতর আহত হন বান্দরবান সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রলীগের সহ সম্পাদক তৌহিদ ও স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা আবু সুফিয়ান। এই হামলার জন্য স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান তাপস দত্তকে দায়ী করেছেন হামলায় আহত আবু সুফিয়ানসহ প্রত্যক্ষদর্শীরা। পরে আবু সুফিয়ান বাদি হয়ে এই হামলার ঘটনায় চেয়ারম্যান তাপস দত্তকে প্রধান আসামি করে মোট ১০ জনের বিরুদ্ধে সাতকানিয়া থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করেন। চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাকে ‘মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক’ আখ্যায়িত করে এর বিরুদ্ধে রোববার (২৩ আগস্ট) মানববন্ধনের ডাক দেন চেয়ারম্যানের অনুসারীরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এলাকাবাসীর উদ্যোগে মানববন্ধন আয়োজনের কথা বলা হলেও এই মানববন্ধন আয়োজনের পেছনে মূল ভূমিকা রেখেছেন তাপস দত্ত নিজেই। তার নির্দেশ মোতাবেক স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাংশের নেতাকর্মী ও ইউপি মেম্বাররা মিলেই এই মানববন্ধনের আয়োজন করেন। এতে ইউনিয়ন পরিষদের সুবিধাভোগীদের চাল দেওয়ার কথা বলে মানববন্ধনে লোক জড়ো করা হয়।
উক্ত মানববন্ধনে ইউনিয়নের অনেক আওয়ামীলীগ নেতাদের আসামী চেয়ারম্যান এর পক্ষে বক্তব্য রাখতে দেখা যায়। এদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ইউপি চেয়ারম্যান তাপস দত্তের ঘনিষ্ঠ অনুসারী হিসেবে পরিচিত বাজালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ সভাপতি আব্দুস সাত্তার, বাজালিয়া কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক অলি আহমদ, বাজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নং ওয়ার্ড মেম্বার মাহবুব আলম, ৭ নং ওয়ার্ড মেম্বার মাহমদ আলী, ৬ নং ওয়ার্ডের মেম্বার সৈয়দ আহমদ, সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মেম্বার রত্না বিশ্বাস, রোজিনা আক্তার প্রমুখ।
মানববন্ধনে চেয়ারম্যান তাপস কান্তি দত্তের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাকে ‘মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা’ হিসেবে অভিহিত করে বক্তারা বলেন, তাপস দত্তকে আগামি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রাখার ক্রমাগত ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তার বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব ষড়যন্ত্রের জন্য ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ চৌধুরীকে দায়ী করেন বক্তারা। তবে আহতের স্বজনরা স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির বিরোধের জের ধরে করা এই হামলার জন্য স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান তাপস দত্তকে দায়ী করছেন।
বেশ কয়েকটি ভিডিওতে মানববন্ধন থেকে ফেরার পথে স্থানীয় নারী পুরুষদের বলতে শোনা গেছে, চাল দেওয়ার কথা বলে তাদের আসতে বলা হলেও সভা শেষে তাদের খালি হাতে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয় রাজনীতির পটভূমি থেকে জানা যায় যে, সাতকানিয়া উপজেলার বাজালিয়া ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক তাপস দত্তের সাথে বাজালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ চৌধুরীর দ্বন্দ্ব চলছে বেশ কিছুদিন ধরেই। এছাড়া স্থানীয়ভাবে সোলাইমান বাঁশী চেয়ারম্যান তাপস দত্তের গ্রুপ ও তৌহিদ শহীদুল্লাহ্ চৌধুরীর গ্রুপ করতেন। গ্রুপিং রাজনীতির বৈরিতা তাদের মধ্যেও ছিল। এর রেশ ধরে গত ১৯ আগস্ট সোলাইমান বাঁশীর গ্রুপের সাথে তৌহিদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। তার রেশ ধরেই একদিন পর চেয়ারম্যান তাপস দত্তের নির্দেশে তৌহিদের ওপর এই হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তবে স্থানীয় দরিদ্রদের মিথ্যে চাল দেবার কথা বলে যেভাবে আসামী চেয়ারম্যান ও তার অনুসারীরা ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়েছে তাতে দুঃখ পেয়েছেন মানববন্ধনে আসা মানুষগুলো। মানববন্ধন শেষে তাদের চাল না দিয়েই বিদেয় করে দেয়া হয়। চাল ছাড়া খালি ব্যাগ দেখিয়ে তাদের আফসোস করতে দেখা যায়।