বিষাদে বিনোদন জগৎ।
শক্তিমান ও স্বচ্ছ ব্যাক্তিত্বের অভিনেতা আলী যাকের আর নেই।
ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
আজ শুক্রবার (২৭ নভেম্বর) ৬টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ এ তথ্য গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
গোলাম কুদ্দুছ জানান, “যাকের ভাই গত কয়েক দিন ধরেই বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। আজ ভোর ৬টা ৪০ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।”
গত ৪ বছর ধরে ক্যানসারে আক্রান্ত আলী যাকেরকে গত ১৮ নভেম্বর নগরীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৭৬ বছর।
শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার সময় আলী যাকের রেখে গেছেন স্ত্রী নাট্যজন সারা যাকের, ছেলে নাট্যাভিনেতা ইরেশ যাকের, মেয়ে রেডিও উপস্থাপক শ্রিয়া সর্বজায়াসহ অসংখ্যক ভক্ত-অনুরাগীকে।
৭১’রে মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসংগ্রামী ছিলেন তিনি।
মুক্তিযুদ্ধের পর দেশে ফিরে আরণ্যক নাট্যদলে যোগ দেন।
১৯৭২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মুনীর চৌধুরীর কবর নাটকে প্রথম অভিনয়। ওই বছরেরই জুন মাসে নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ে যোগ দেন। তখন থেকে নাগরিকই তাঁর নাটকসংক্রান্ত ঠিকানা।
বাকি ইতিহাস, সৎ মানুষের খোঁজে, দেওয়ান গাজীর কিসসা, কোপেনিকের ক্যাপটেন, গ্যালিলিও, ম্যাকবেথসহ অনেক মঞ্চসফল নাটকের সঙ্গে নির্দেশনা বা অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত তিনি। বিশ্বখ্যাত মঞ্চনাটক রূপান্তর করেছেন।
মঞ্চের পাশাপাশি টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করেও জনপ্রিয়তা পেয়েছেন।
টেলিভিশনে আজ রবিবার, বহুব্রীহি, তথাপি, পাথর দেয়ালসহ অসংখ্য নাটকে অভিনয় করে তুমুল জনপ্রিয়তা পান। ৫০টির বেশি বেতার নাটক করেছেন।
বেশ কিছু চলচ্চিত্রেও করেছেন অভিনয়। টেলিভিশনের জন্য মৌলিক নাটক লিখেছেন। সমসাময়িক বিষয়ে পত্রপত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখিও করেন। বের হয়েছে বই, যার মধ্যে আছে সেই অরুণোদয় থেকে, নির্মল জ্যোতির জয়সহ বই। একজন শৌখিন ফটোগ্রাফারও তিনি।
বিজ্ঞাপনী সংস্থা এশিয়াটিক থ্রিসিক্সটি গ্রুপের চেয়ারম্যান তিনি। নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের সভাপতি। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অন্যতম ট্রাস্টি। যুক্তরাজ্যের রয়াল ফটোগ্রাফিক সোসাইটির পূর্ণ সদস্য।
অভিনয় জীবনে পেয়েছেন অসংখ্য পুরুষ্কার। একুশে পদক, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী পদক, নরেন বিশ্বাস পদকসহ অনেক পুরস্কার।
স্ত্রী স্বনামধন্য অভিনয়শিল্পী সারা যাকের, পুত্র ইরেশ যাকের ও কন্যা শ্রেয়া সর্বজয়াকে নিয়ে তাঁর সংসার।
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর জানান, “শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য আলী যাকেরের মরদেহ বেলা ১১টায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে নেওয়া হবে। এরপর দাফন। তবে কোথায় দাফন হবে, এখনো সেটা ঠিক হয়নি।”
পুরো সাংস্কৃতিক জগত আলী জাকেরের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।