গত মঙ্গলবার সামাজিক মাধ্যম ফেইসবুকে প্রকাশ্যে এক নগ্ন কিশোর এক তরুণীকে যৌন হয়রানী করার ছবি ভাইরাল হয়। ছবিতে দেখা যায়, এক তরুনী একটি বিল্ডিং বাড়ীর সামনে দাঁড়িয়ে আছে আর অভিযুক্ত সে কিশোর নিজের মা ও বোনের সামনেই প্রকাশ্য দিবালোকে নিজের প্যান্ট খুলে প্রতিবেশী এক তরুণীকে যৌন হেনস্তা করছে। কিন্তু দৈনিক অপরাজিত বাংলার সরজমিন অনুসন্ধ্যানে বেড়িয়ে আসে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য য়েখানে ছবিতে দাঁড়ানো সে তরুনী বা সে অভিযুক্ত কিশোরের প্রকাশিত ফেইসবুকে ভাইরাল হওয়ার ঘটনার সাথে কোন মিল নেই। গ্রেফতার কিশোর সাজ্জাদ হোসেন বাবলু নগরীর টং ফকির মাজার এলাকার মো. সালেহ আহমদের ছেলে।
মূলতঃ প্রকাশিত ছবি ও ভিডিও ফুটেজটি ১৯শে জুলাই বিকেল ০৬:০০ ঘটিকার, যা ঐ দিন কিশোর পরিবারের সাথে প্রতিপক্ষের ঝগড়ার সময়ের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ এবং ঐ ঝগড়ার সময় অভিযুক্ত কিশোর উত্তেজিত হয়ে ঐ বিল্ডিংয়ে অবস্থানরত প্রতিপক্ষকে উদ্দেশ্য করে এমন দৃষ্টিকটু আচরন করে, যেখানে ছবিতে ভাইরাল হওয়া সে তরুনীকে যৌন হয়রানীর কোন সংশ্লিষ্টতা নেই।
ঘটনাটি ঘটে নগরীর সদরঘাট এলাকার পশ্চিম মাদারবাড়ীর ২৯ নং ওয়ার্ডের টংফকির মাজার লেইনে। মঙ্গলবারে ভাইরাল হবার পর পুলিশ সে দিন রাতেই কিশোরকে গ্রেফতার করে, পরে আদালতে উঠালে আদালত তাকে কারাগারে পাঠায়। কিন্তু কিশোরকে ছবিতে ভাইরাল হওয়া তরুনীর কোন অভিযোগে কারাগারে পাঠানো হয় নায়, হয়েছে প্রতিপক্ষের স্ত্রীর দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে।
সরজমিনে ঘটনার বিবরনে জানা যায়, গত ১৯ আগস্ট ছালেহ আহমেদের পরিবারের সঙ্গে প্রতিবেশি আব্দুর রাজ্জাক বেইঙ্গ্যার পরিবারের ঝগড়া হয়। ঝগড়ার একপর্যায়ে ওই কিশোর নিজের মা ও বোনের সামনেই প্রকাশ্য দিবালোকে নিজের প্যান্ট খুলে প্রতিবেশী এক তরুণীকে যৌন হেনস্তা করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উঠে আসে যে, ঐ কিশোর দাঁড়ানো তরুনীকে প্যান্ট খুলে ধর্ষনের হুমকি দেয়। এ ধরনের খবর ও কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে মঙ্গলবার এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং ওই যুবকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার দাবি ওঠে। তবে পুলিশ আটকের পরও বাবলুর বিরুদ্ধে ছবিতে ভাইরাল হওয়া ওই নারী কোনো অভিযোগ করেননি।
সরজমিনে সেই ভুক্তভুগী নারী সাহিনুর বেগম দৈনিক অপরাজিত বাংলাকে জানান, “তিনি সেখানে এক আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে এসেছিলেন। ১৯শে আগস্ট আনুমানিক বিকেল ৬টার দিকে ছালেহ আহমেদের (কিশোরের) পরিবারের সঙ্গে প্রতিবেশি আব্দুর রাজ্জাক প্রকাশ বেইঙ্গ্যার পরিবারের ঝগড়া হয়। তিনি সে ঝগড়া দেখতে বাহিরে এসে দাঁড়িয়েছিলেন। ঝগড়ার একপর্যায়ে কিশোর বাবলু ক্ষিপ্ত হয়ে প্রতিপক্ষকে ইঙ্গিত করে এ ধরনের আচরন করে। কিন্তু সে আমার সাথে কোন বাজে বাক্য বা আমাকে উদ্দেশ্য করে কিছু করে নি।” শাহিনুর বেগম ক্ষোভের সাথে আরও বলেন, “পূর্ব শত্রুতা ও ঝগড়ার জের ধরে প্রতিপক্ষ আব্দুর রাজ্জাক প্রকাশ বেইঙ্গ্যার পরিবার ফেইসবুকে মিথ্যে তথ্য দিয়ে এমনটা করেছে। তারা কোন কারনে আমার ছবি দিয়ে এবং আমাকে নিয়ে মিথ্যে তথ্য দিয়ে সামাজিক ভাবে হেনস্থা করলো? আমার ছবি ও মিথ্যে তথ্য ফেইসবুকের মাধ্যমে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়লো। এখন আমার সংসারে অশান্তি চলছে, সংসার ভাঙ্গার উপক্রম হয়েছে। আমি এর ন্যায্য বিচার চাই।”
উল্লেখ্য যে, প্রতিপক্ষ আব্দুর রাজ্জাক প্রকাশ বেইঙ্গ্যার বিরুদ্ধে রয়েছে অনেক অভিযোগ। জানা যায়, এর আগে ২৪ মামলার আসামী ও চিহ্নিত সন্ত্রাসীর ব্যানারে প্রতিপক্ষ আব্দুর রাজ্জাক প্রকাশ বেইঙ্গ্যার বিচারের দাবীতে মানববন্ধনও হয়েছে। শুধুমাত্র পূর্ব শত্রুতা ও ঝগড়ার জের ধরে আব্দুর রাজ্জাক তার স্ত্রীকে বাদি করে কিশোর বাবলুর বিরুদ্ধে মামলা করে।
এ প্রমঙ্গে জানতে চাইলে অভিযুক্ত কিশোর বাবলুর মা জোসনা বেগম বলেন, “৩০ শে আগস্ট দুপক্ষ একসাথে বসে ঝগড়া মিমিাংসার কথা ছিলো কিন্তু মিমাংসার বদলে তারা আমার আর আমার পরিবারের ক্ষতি করবে বলে হুমকি দেয়। প্রশাসন নাকি তার পকেটে থাকে, ইয়াবা মামলা দিয়ে আমাদের উচিৎ শিক্ষা দেবে বলে হুমকি দেয়।”
নগরীর সদরঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফজলুর রহমান ফারুকী বুধবার জানান, যৌন হয়রানির অভিযোগে অন্য এক নারীর দায়ের করা নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ১০ ধারার মামলায় কিশোর বাবলুকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। দুপুরে তাকে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিমের আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন। তবে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কোনো রিমান্ডের আবেদন করা হয়নি। তিনি আরও জানান, ছালেহ আহমেদের পারিবারিক প্রতিপক্ষ আব্দুর রাজ্জাকের স্ত্রী বাদি হয়ে বাবলুর বিরুদ্ধে মামলা করেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, বাবলু তাকে উদ্দেশ্য করে অশালীন অঙ্গভঙ্গি করেছেন।
এদিকে চট্টগ্রাম হিউম্যান রাইটস্ ফাউন্ডেশনের সেক্টর চেয়ারম্যান এ্যাডঃ জিয়া হাবীব আহসান জানান “কিশোর গ্রেফতার হবার পর এলাকার অর্ধশতাধিক মানুষ আমার কাছে এসেছে যেন কিশোর বাবলুকে দ্রুত মুক্ত করা হয়। আমি বিষয়টি খবর নিয়ে নিশ্চিৎ হলাম যে, অভিযুক্ত আসামী বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ শুধুমাত্র পূর্ব শত্রুতার কারনে প্রতিপক্ষ আব্দুর রাজ্জাক প্রকাশ বেইঙ্গ্যা তার স্ত্রীকে বাদি বানিয়ে মামণা করেন। তিনি এ এলাকার প্রভাবশালী ব্যাক্তি। আমরা আদালতে বাবলুর জামিনের জন্য যাবো।”
এ প্রসঙ্গে প্রতিপক্ষ আব্দুর রাজ্জাক প্রকাশ বেইঙ্গ্যার কাছে এ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি মূল আলোচনা এড়িয়ে গিয়ে বলেন, “আমি শান্তি প্রিয় মানুষ, এলাকায় আমি শান্তি নিয়ে থাকতে চায়। আমি আমার মতো থাকতে চাই, ওরা ওদের মতো থাকুক।”