জনতার প্রতিরোধের মুখে খেলাফত মজলিশের মহাসচিব এবং হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব বিত’র্কিত ইসলামিক বক্তা মাওলানা মামুনুল হকের একের পর এক অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিচ্ছে প্রশাসন। শনিবার রাতে নড়াইলের একটি অনুষ্ঠান বাতিলের পর রোববার বাতিল করা হয়েছে খুলনার আরো দুটি মাহফিল।
সূত্রমতে, চলতি নভেম্বর মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে মামুনুল হক মামুনের পূর্ব নির্ধারিত ১৫টি ওয়াজ মাহফিল করার কথা থাকলেও তার সবকটিই বাতিল করতে পারে স্থানীয় প্রশাসন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য বুড়িগঙ্গা নদীতে ফেলে দেওয়ার হুম’কির কারণে মামুনুল হকের বিরু’দ্ধে সমালোচনার ঝড় ওঠায় এ সকল অনু্ষ্ঠান বাতিল করার কথা জানা গেছে। তবে প্রশাসন বলছে, নিরাপত্তার কারনে এসব সভা সমাবেশ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে মামুনুল হকের সমর্থকরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চরম হতা’শা ও ক্ষো’ভ ব্যক্ত করেছেন।
জানা গেছে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নির্মাণের প্রতিবাদে বেশ কিছু দিন যাবৎ সরব বিত’র্কিত ইসলামিক বক্তা মাওলানা মামুনুল হক। বিভিন্ন সভা সমাবেশ এবং মাহফিল থেকে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য গুঁ’ড়িয়ে দেওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি। মামুনুল হকের এমন উ’গ্রতাকে দেশদ্রো’হিতা উল্লেখ করে তার গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ করেছে মুক্তিযু’দ্ধের স্বপক্ষের বিভিন্ন সংগঠন। এই সব সমাবেশ থেকে সরকারের এবং প্রশাসনের প্রতি সুনির্দিষ্ট কয়েকটা প্রস্তাবনা পেশ করে প্রতিটি ওয়ার্ড পর্যায়ে ছাত্রলীগ,যুবলীগ,সেচ্ছাসেবক লীগ এবং প্রগতিশীল দেশপ্রেমিক সচেতন যুবকদের মাধ্যমে অনলাইন মনিটরিং সেল গঠন করতে হবে।তাদের কাজই হবে দেশ-সরকার বিরোধী প্রচার,জাতির জনকের প্রতি অবমাননা,ধর্মীয় উগ্রবাদীদের রাষ্ট্র বিরোধী বক্তব্য ইত্যাদি গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করে সংশ্লিষ্ট থানাতে অবহিত করা।
প্রতিটা ওয়াজ মাহফিলের আগেই ঐ এলাকার ছাত্রলীগ,যুবলীগ,স্বেচ্ছাসেবকলীগ ও দেশ প্রেমিক সচেতন যুবকদের সমন্বয়ে উগ্রতা প্রতিরোধক ব্যাবস্থা।জামাতী তথা দেশদ্রোহী বক্তাদের আমন্ত্রন না জানানো।
প্রতিটা মাদ্রাসাতে জাতীয় পতাকা,জাতীয় সংগীত ও জাতির জনকের ছবি নিশ্চিৎ করা। সকল মসজিদ কমিটি নিজেদের আয়ত্তে নিয়ে জামাতী,হেফাজতীদের তথা উগ্রবাদীদের বিতারিত করে প্রকৃত আলেমদের ইমাম-মুয়াজ্জিন হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা।
জাতীয় পতাকা,জাতীয় সংগীত এবং জাতীর পিতার অবমাননাকারীদের রাষ্ট্রদোহীতার কঠোর আইন করে নাগরিকত্ব বাতিল করতে হবে। যার ধারবাহিকতায় দেশের বিভিন্ন স্থানে মামুনুল হকের ৩টি অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
জানা গেছে, শনিবার রাতে নড়াইলে একটি ধর্মীয় সভা স্থানীয় প্রশাসন কর্তৃক বন্ধ ঘোষণার পর আজ রোববার খুলনায় দুটি ধর্মীয় সভা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
মামুনুল হকের অনুসারী কর্তৃক পরিচালিত ফেসবুক পেইজ “শায়খ আল্লামা মামুনুল হক সমর্থক পেইজ”- এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। সেখানে লেখা হয়েছে, নড়াইলে ধর্মীয় সভার মঞ্চও ভে’ঙে দেওয়া হয়েছে। এ ধর্মীয় সভায় যোগ দিতে অর্ধেক পথ যাওয়ার পর ফিরে আসতে হয় মাওলানা মামুনুল হককে।
এদিকে এক সপ্তাহ ধরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নির্মাণে বাধা ও ভা’ঙার হুম’কির বিষয়ে বিত’র্ক চলছে প্রগতিশীল ও ওলামা সমাজের মাঝে। মূলত ঢাকার ধোলাইপাড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ নিয়ে বি’বাদের সূত্রপাত। সেখান সমাবেশ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নির্মাণ করতে দেয়া হবে না এবং পরবর্তীতে সেই ভাস্কর্য ফেলে দেওয়া হবে বলে হুম’কি দেন চরমোনাই পীরের ভাই মাওলানা ফয়জুল করিম। তারপর থেকেই এ নিয়ে বিত’র্ক চলছে।
তারই ধারাবাহিকতায় মাওলানা মামুনুল হকের এ ৩টি ধর্মীয় সভা বন্ধ করে দেয়া হয়। তার আগে ঢাকার একটি মিলনায়তনে রাহমাতাল্লিল আলামিন ফাউন্ডেশনের একটি সেমিনার বন্ধ করে দেয়া হয়। যেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন হেফাজতে ইসলামের আমীর মাওলানা বাবুনগরী এবং মামুনুল হকসহ অন্যরা। পরবর্তীতে সেমিনার বন্ধ করে দেয়ার প্রতিবাদে তারা বিক্ষো’ভ করেন বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে।
