ঢাকাশনিবার , ২৮ অক্টোবর ২০২৩
  1. অনান্য
  2. অপরাধ ও আইন
  3. অভিবাসীদের নির্মম জীবন
  4. অর্থনীতি
  5. আত্মসাৎ
  6. আন্তর্জাতিক
  7. ইতিহাস
  8. উদ্যোক্তা
  9. এশিয়া
  10. কৃষি
  11. ক্যাম্পাস
  12. খেলাধুলা
  13. গণমাধ্যম
  14. গল্প ক‌বিতা
  15. চট্টগ্রাম বিভাগ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ঢাকা যেন এক অবরুদ্ধ নগরী পথে পথে তল্লাশি হয়রানি

নিজস্ব প্রতিবেদক
অক্টোবর ২৮, ২০২৩ ৪:৪৮ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

ঢাকায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে দুর্ভোগ ও হয়রানির কবলে পড়েছে সাধারণ মানুষ। ঢাকার বিভিন্ন প্রবেশপথে চৌকি বসিয়ে তল্লাশি করে পুলিশ। কোথাও কোথাও পুলিশের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীও অবস্থান নেয়। গাড়িতে উঠে কিংবা গাড়ি থেকে নামিয়ে নানা বিষয়ে জেরা করা হয় সন্দেহভাজন যাত্রীদের। মোটরসাইকেল, অটোরিকশা, মোটরগাড়ি ও মাইক্রোবাসে বেশি তল্লাশি ছিল। অনেকের মোবাইল ফোন ঘেঁটে সমাবেশে যাওয়ার প্রমাণ খোঁজার চেষ্টা করে পুলিশ সদস্যরা। জিজ্ঞাসাবাদে কাউকে সন্দেহ হলে তাকে আটক করেছে তারা। পুলিশের এমন তৎপরতাকে অনেক যাত্রী হয়রানি বলে অভিযোগ করেছেন। এতে ভয় আর শঙ্কা নিয়েই পথ চলতে হয়েছে মানুষকে।

এদিকে, বুড়িগঙ্গা নদী পাড়ি দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীর আগমন ঠেকাতে খেয়াঘাটগুলোতে লাঠি হাতে অবস্থান নেয় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী ও পুলিশ সদস্যরা। গতকাল শুক্রবার বিকেল থেকেই খেয়াঘাটে নৌকা চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ ছাড়া ময়মনসিংহ থেকেও ঢাকামুখী বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। গতকাল সারাদেশে ৫৪৭ জনকে আটকের খবর দিয়েছেন সমকাল প্রতিনিধিরা। তবে বিএনপির দাবি, গত তিন দিনে সারাদেশে ২ হাজার ২৩০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঢাকার যাত্রাবাড়ী, কেরানীগঞ্জ, গাবতলী, সাভার, টঙ্গীসহ সব প্রবেশপথেই তল্লাশি চালানো হয়েছে। এ কারণে সড়ক-মহাসড়কে যানবাহন চলাচল কমে গেছে। রাজধানীতে জুমার নামাজের পর তল্লাশি আরও জোরদার করা হয়।

ডেমরার সুলতানা কামাল সেতুর পশ্চিম পাশে গতকাল সকাল ১০টার দিকে চেকপোস্ট বসায় পুলিশ। রূপগঞ্জ থেকে আসা বাস, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রীদের তল্লাশি চালানো হয় সেখানে। বিকেল পর্যন্ত ওই চেকপোস্ট থেকে তিনজনকে আটক করে পুলিশ। এ ছাড়া প্রবেশমুখে র‌্যাবের টহল ছিল চোখে পড়ার মতো।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ডেমরা জোনের সহকারী কমিশনার মধুসূদন দাস বলেন, আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ে কেউ ঢাকায় ঢুকছে কিনা, সে জন্য সন্দেহভাজনদের তল্লাশি করা হচ্ছে।

ঢাকার প্রবেশমুখে দুটি মহাসড়ক ও একটি আঞ্চলিক সড়কে গতকাল সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত তল্লাশি চৌকি বসিয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের তারাব বিশ্বরোড এলাকায় গাড়ি থেকে যাত্রীদের নামিয়ে মোবাইল ফোন তল্লাশি করতে দেখা যায়। কয়েক যাত্রী জানান, পুলিশ ব্যাগ তল্লাশির পর মোবাইল ফোনের লক খুলে দিতে বলে। তারপর ফোনের গ্যালারি ও ফেসবুক অ্যাকাউন্ট দেখে। একটি মাইক্রোবাসের যাত্রী সালাউদ্দিন সরকার বলেন, আমাদের একজনের ফোনে বিএনপির কী নাকি পেয়েছে, সে কারণে ৩০ মিনিট দাঁড় করিয়ে রাখে। যদিও জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে তল্লাশি চৌকিতে কার্যক্রম চালাচ্ছে পুলিশ। তবে কারও মোবাইল ফোনের ব্যক্তিগত তথ্য তল্লাশি করার কোনো নির্দেশনা নেই।

দুই প্রধান দলের সমাবেশ ঘিরে রাজধানীর উত্তরার আব্দুল্লাহপুর বাসস্ট্যান্ডে সকাল থেকে ঢাকামুখী বাসের সংখ্যা ছিল কম। তবে সকালেই ঢাকার বাইরে থেকে আসা এসব যানবাহন ও সন্দেহভাজনদের তল্লাশি চালায় পুলিশ।

রংপুর থেকে আসা সাজেদুর রহমান জানান, রংপুর থেকে এনা পরিবহনের বাসে বৃহস্পতিবার রাতে যাত্রা শুরু করি। আসার পথে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ, বগুড়ার শেরপুরসহ কয়েক স্থানে পুলিশ তল্লাশি করে। শেষে ঢাকায় ঢুকলে আব্দুল্লাহপুরে আসতেই পুলিশ গাড়ি থামিয়ে শরীর, মোবাইল ফোন ও ব্যাগ তল্লাশি করেছে।

এ বিষয়ে পুলিশের উত্তরাঞ্চলের সহকারী কমিশনার জ্যোতির্ময় সাহা বলেন, চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করা পুলিশের নিয়মিত কাজেরই অংশ।

ঢাকার অন্যতম প্রবেশমুখ গাবতলীতে তল্লাশি চালায় পুলিশ। রফিকুল ইসলাম নামে এক যাত্রীর দাবি, তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন। তিনি কোনো সভা-সমাবেশেও যাচ্ছেন না। তবু বাসে তল্লাশির সময় তাঁর ব্যাগ, মোবাইল ফোন তল্লাশি করা হয়েছে। এতে তিনি বিরক্ত। তাঁর ভাষ্য, ‘তল্লাশির নামে এটা যাত্রী হয়রানি ছাড়া আর কিছু না। আমাদের গুরুত্বপূর্ণ সময় নষ্ট করা হচ্ছে।’

ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের নবীনগর, সাভার, হেমায়েতপুর, আমিনবাজার এলাকায় তল্লাশি চালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় যাত্রীদের সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোন নিয়ে তাদের ফেসবুক আইডি চেক করে দেখা হয়। এতে অনেক যাত্রী আপত্তি করলেও কাজ হয়নি।

এ ছাড়া বুড়িগঙ্গা নদীতে নৌকা চলাচল বন্ধ করে দেয় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী। গতকাল বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে কেরানীগঞ্জের পোস্তগোলা ব্রিজ থেকে বছিলা সেতু পর্যন্ত বুড়িগঙ্গা নদী পারাপারের খেয়াঘাটগুলোতে যাত্রীরা এসে ফিরে যান।

পূর্বঘোষণা ছাড়া শুক্রবার সকাল থেকে ময়মনসিংহ বিভাগ থেকে ঢাকাগামী বাস বন্ধ করে দেওয়া হয়। নগরীর মাসকান্দা বাস টার্মিনালে দাঁড়িয়ে থাকা মো. শহিদুল্লাহ নামে এক যাত্রী বলেন, বাস বন্ধ করে সড়কপথে ময়মনসিংহকে সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এতে সাধারণ যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।

ময়মনসিংহ জেলা মোটর মালিক সমিতির মহাসচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে বাসে অগ্নিসংযোগসহ ভাঙচুর হতে পারে– এমন আশঙ্কা থেকেই বাস চালানো বন্ধ রেখেছেন চালক-মালিকরা।

যানজটের নগরী গাজীপুরে গতকাল হঠাৎ যাত্রীবাহী বিভিন্ন যানবাহন উধাও হয়ে যায়। শুক্রবার সকালে দূরপাল্লার অল্প কিছু গাড়ি ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ও টাঙ্গাইল মহাসড়কে চলাচল করলেও দুপুরের পর আর সেসব গাড়ি তেমন একটা দেখা যায়নি। যানবাহনস্বল্পতার কারণে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে স্থানীয় যাত্রীদের।

গতকাল দুপুর ও বিকেলে মুন্সীগঞ্জের ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বেশ কয়েকটি পয়েন্টে যানবাহনে তল্লাশির পাশাপাশি পুলিশের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়েন যাত্রীরা।

সারাদেশে গ্রেপ্তার

মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে গত তিন দিনে ২ হাজার ২৩০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দাবি করেছে বিএনপি। দলটির অভিযোগ, কুষ্টিয়া জেলা কৃষক দলের সদস্য মেহেদী হাসানকে গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে গ্রেপ্তার করার পর পুলিশি নির্যাতনে তাঁর মৃত্যু হয়।

গতকাল বিকেলে গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান ও অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, দুই সমাবেশ ঘিরে ঝুঁকির কথা বিবেচনা করেই পুলিশ, ডিবি ও অন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল ও চেকপোস্ট জোরদার করা হয়েছে। বিএনপি নেতাকর্মীর গ্রেপ্তার বিষয়ে তিনি বলেন, এটি আমাদের রুটিন ওয়ার্ক। যাদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট আছে, তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

এদিকে বিএনপির মহাসমাবেশ সামনে রেখে গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় ২০৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গতকাল ছুটির দিনে তাদের ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ও চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। তাদের মধ্যে বিএনপি ও এর বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী ছাড়াও সন্দেহভাজন ব্যক্তিরা রয়েছে। বিএনপির এ কর্মসূচি সামনে রেখে গত বৃহস্পতিবারও ১২৯ জনকে আদালতে পাঠিয়েছিল ঢাকা মহানগর পুলিশ। পরে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। এ নিয়ে দুই দিনে ঢাকায় ৩৩৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

কামরাঙ্গীরচর থানা পুলিশ বৃহস্পতিবার রাতে রতন নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করে। রতনের মা জামিলা খাতুন ছেলেকে দেখতে গতকাল বেলা ১১টায় ঢাকার সিএমএম আদালতের সামনে আসেন। বিকেল ৫টা পর্যন্ত ছেলের সঙ্গে দেখা করতে পারেননি তিনি। জামিলা খাতুন বলেন, আমার ছেলে পেশায় রিকশাচালক। রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়। তারপরও ছেলেকে পুলিশ ধরে নিয়ে এসেছে। গ্রেপ্তার করার পর আমি থানায় গিয়েছিলাম। কিন্তু ছেলের সঙ্গে দেখা করতে দেয়নি।

রতনের বাবা আবদুল খলিলও রিকশাচালক। ক্ষুব্ধ কণ্ঠে তিনি বলেন, আমরা গরিব মানুষ। আমরা রাজনীতি বুঝি না; পেটনীতি বুঝি। কিন্তু ছেলেকে আমার সন্দেহজনকভাবে রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার করে নিয়ে এসেছে পুলিশ। এখন ছেলেকে কীভাবে জামিন মুক্ত করব, জানি না। ব্যবসায়ী, সুশীল সমাজের নেতারা এবং নগরবাসীও চান রাজনৈতিক দলগুলো তাদের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে ও সহিংসতা ছাড়াই পালন করুক।

অর্থনীতি সচল রাখতে রাজনৈতিক দলগুলোকে সংঘর্ষ এড়াতে আহ্বান জানিয়েছেন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম।

শনিবারের কর্মসূচি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধির জন্য স্থিতিশীল ও অনুকূল রাজনৈতিক পরিবেশ প্রয়োজন। যেহেতু সব রাজনৈতিক দলের জনগণের কল্যাণের প্রতিশ্রুতি রয়েছে তাদের সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য স্থিতিশীলতা বজায় রাখা উচিৎ।

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার শুক্রবার ইউএনবিকে দেওয়া মন্তব্যে আশা প্রকাশ করেছেন, উভয় প্রধান রাজনৈতিক দলের সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি বিএনপি ও আওয়ামী লীগ উভয় দলই কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই তাদের সমাবেশ শেষ করবে।’

তিনি বলেন, অতীতে কোনো ধরনের সংঘর্ষ ছাড়াই এ ধরনের সমাবেশ হয়েছে। তাই এবারও একই কায়দায় সমাবেশ করবে তারা। উত্তরার একজন রিকশাচালক আহমেদ আলী যদিও খুবই চিন্তিত। ৫০ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি বলেন, ‘উভয় দলই তাদের কর্মসূচি পালন করতে আগ্রহী।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমি যেটা নিয়ে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন তা হলো আরেক দফা সহিংসতা আমাদের জীবনযাত্রাকে আরো কঠিন করে তুলবে।’

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল অপরাজিতবাংলা ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন oporajitobangla24@yahoo.com ঠিকানায়।