ডাক্তারের অবহেলায় রোগীর মৃত্যু আমাদের দেশে খুবই সাধারন ঘটনা। কিন্তু জীবিত প্রাণকে মৃত বানিয়ে সরাসরি কবরস্থানে পাঠিয়ে দেওয়াটা বোধকরি সবকিছুকে ছাপিয়ে যাওয়ার মতোই ঘটনা।
জ্বি পাঠককূল, এমনই আলোচিত ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। হাসপাতালে ডাক্তারদের মৃত ঘোষনার পর এক নবজাতককে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করার সময় হঠাৎ জীবিত হয়ে উঠে। নবজাতককে আবারো হাসপাতালের নবজাতক বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে।
ঘটনার প্রেক্ষাপটে জানা গেছে, পেশায় বাসচালক মোঃ ইয়াসিন মিয়া তার ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী শাহিনূর বেগমকে গত ১৪ অক্টোবর বুধবার ঢাকা মেডিকেল কলেজের হাসপাতালে ২১২ নং ওয়ার্ডে ভর্তি করান।
অসুস্থ শাহিনূর বেগমকে দেখার পর ডাক্তাররা জানান, রোগীর প্রেশার অনেক হাই এবং বাচ্চাটি ডেলিভারি না করালে তার প্রেশার কমবে না বলে চিকিৎসকরা মোঃ ইয়াসিনকে পরামর্শ দেন। চিকিৎসকদের কথায় স্বামী~স্ত্রী সম্মতি দেবার পর শাহিনূর বেগমকে ঐ রাতেই লেবার রুমে নিয়ে যাওয়া হয় এবং নরম্যাল ডেলিভারী করানোর চেষ্টা করেন চিকিৎসকরা। কিন্তু সেতিন ডেলিভারী করানো সম্ভব না জলে রোগীকে ১১০ ওয়ার্ডে রাখা হয়।
পরবর্তিতে রোগীকে দু’দিন চেষ্টার পরও ডেলিভারী করাতে ব্যার্থ হলে শুক্রবার ভোরে শাহিনূর বেগমের ব্যাথা শুরু হয় এবং সকাল আনুমানিক পাঁচটায় কন্যা সন্তানের জন্ম দেন এবং চিকিৎসকরা বাচ্চাটিকে মৃত বলে ঘোষনা দেন।
এ প্রসঙ্গে শাহিনূর বেগমের স্বামী মোঃ ইয়াসিন জানান, ‘ডাক্তাররা মৃত বলার পর হাসপাতালের আয়া বাচ্চাটিকে প্যাকেট করে বেডের নিচে রেখে দেন এবং কোথাও নিয়ে দাফন করার জন্য আমাকে বলেন।’
মোঃ ইয়াসিন আরও জানান, “সকাল ৮টার দিকে আমি আমার বাচ্চাকে আজিমপুর কবরস্থানে নিয়ে যাই। সেখানে ১,৫০০ টাকা সরকারি ফী দিতে না পারায় তাদের পরামর্শে রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে নিয়ে যাই। সেখানে ৫০০ টাকা ফ্রি ও কিছু বকশিশ দেওয়ার পর নবজাতকটির জন্য কবর খোঁড়া শুরু হয়। কবর খোঁড়া প্রায় শেষ পর্যায়ে ঠিক তখনই বাচ্চার কান্নাকাটি শব্দ শুনতে পাই। আমি আশপাশে কোথাও কিছু না পেয়ে পরে পাশে রাখা নবজাতকটির দিকে খেয়াল করি। এরপর প্যাকেট খুলে দেখি বাচ্চাটি নড়াচড়া করছে এবং কান্নাকাটি করছে। অতি দ্রুত আমি বাচ্চাকে আবার ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে আসি এবং তাকে চিকিৎসকরা দেখার পরে নবজাতক বিভাগে ভর্তি করেন।”
তিনি বলেন, এটি তার দ্বিতীয় সন্তান। ইসরাত জাহান নামে তার ১০ বছরের আরেকটি মেয়ে রয়েছে। তাদের বাড়ি গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার মালঙ্গা গ্রামে। তুরাগ ধউর নিসাতনগর এলাকায় থাকেন তারা। তার স্ত্রী গৃহিণী ও তিনি বিআরটিসি বাস চালক।
চিকিৎসকদের এমন ভুল সিদ্ধান্ত ও পরামর্শের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ইয়াসিন।
এ বিষয়ে হাসপাতালের গাইনি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. নিলুফা সুলতানা মুঠুফোনে জানান, “আমি দু’দিনের ছুটিতে আছি। নবজাতকটির বিষয়ে হাসপাতাল পরিচালক আমাকে জানিয়েছেন। আমি আমার বিভাগের ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জকে নবজাতকটি বিষয়ে জানিয়েছি। তারা সবকিছু দেখছেন।”
এ বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, “বর্তমানে নবজাতকটি জীবিত আছে ও ভালো আছে। বাচ্চাটিকে নিবিড় পরিচর্যায় রাখা হয়েছে।” তিান আরও জানান, “এমন একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনা কেন ঘটলো তা বের করার জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করে সঠিক তথ্য বের করে আনা হবে।”