ঢাকাশুক্রবার , ৪ সেপ্টেম্বর ২০২০
  1. অনান্য
  2. অপরাধ ও আইন
  3. অভিবাসীদের নির্মম জীবন
  4. অর্থনীতি
  5. আত্মসাৎ
  6. আন্তর্জাতিক
  7. ইতিহাস
  8. উদ্যোক্তা
  9. এশিয়া
  10. কৃষি
  11. ক্যাম্পাস
  12. খেলাধুলা
  13. গণমাধ্যম
  14. গল্প ক‌বিতা
  15. চট্টগ্রাম বিভাগ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

দ‌লের শু‌দ্ধি অ‌ভিযা‌নে নাম‌ছে আওয়া‌মী লীগ, তা‌লিকায় ৮ হাজার নেতার নাম!

অনলাইন ডেস্ক
সেপ্টেম্বর ৪, ২০২০ ৮:৩৮ অপরাহ্ণ
Link Copied!

এ‌কের পর এক বিত‌র্কিত কর্মকান্ড, দুর্নীতি-অনিয়মসহ বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িত ক্ষমতাসীন দলের নেতা কর্মী‌দের দৌড়া‌ত্মে দ‌লের ইমেজ তলা‌নি‌তে এসে ঠে‌কে‌ছে। দলীয় নেতা~কর্মী‌দের লাগামহীন এসব কর্মকান্ড‌কে রুখ‌তে আওয়ামী লীগের বিশ্বস্ত নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে বিত‌র্কিত কর্মকা‌ন্ডে জড়িত প্রায় ৮ হাজার নেতার তালিকা প্রস্তুত করেছেন দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলীয় সূত্র জানায়, বিতর্কিত এই ৮ হাজার নেতার মধ্যে ৫ হাজারই বিরোধী মতাদর্শী অনুপ্রবেশকারী।

জানা গেছে, গত সাড়ে ১১ বছরে ৫৫ হাজার বিরোধী মতাদর্শী আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোতে অনুপ্রবেশ করেছেন। এর মধ্যে ৫ হাজার অধিকতর বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে লিপ্ত। রাজাকার ও পাকবাহিনীর সহযোগিতায় গঠিত শান্তি কমিটির প্রধান বা গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন এমন ব্যক্তি ও তাদের সন্তান-স্বজনদের কেউ কেউ নানা কৌশলে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোতে ঢুকে পড়েছেন। এক সময় যারা ফ্রিডম পার্টি, বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ২০০৯ সালের পর তারা দলে দলে সরকারি দলে যোগদান করা শুরু করেন। এসব অনুপ্রবেশকারীদের আশ্রয়দাতার তালিকায় আছেন ৬৭ মন্ত্রী-এমপি ও কেন্দ্রীয় নেতা।

তা‌লিকা করা বিত‌র্কিত কর্মকা‌ন্ডে জ‌ড়িত এসব দলীয় নেতা‌দের বিশাল এক‌টি অংশ বিরোধী মতাদর্শী অনুপ্রবেশকারী যা‌দের সংখ্যা প্রায় ৫ হাজা‌রেরও বেশী। এসব অনুপ্র‌বেশকারীরা প্রায় সবাই হ‌চ্ছেন বড় বড় নেতা‌দের ঘ‌নিষ্ঠজন। সম্প্র‌তি যার প্রমান প্রতারক সা‌হেদ। দলের ঘ‌নিষ্ঠ সূত্রে জানা যায়, এবার এসব বিত‌র্কিত স্বার্থা‌ন্বেসী নেতা‌দের বাদ দি‌য়ে ত্যাগী‌দের মূল্যায়নের মাধ্যমে দলকে সুসংগঠিত করাই এ তা‌লিকার প্রধান উদ্দেশ্য। বিতর্কিত নেতাদের বিরুদ্ধে এবার জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। চলতি মাসেই দেশ জুড়ে জোরালোভাবে শুদ্ধি অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে দ‌লের হাইকমান্ড থে‌কে।

দলীয় সূ‌ত্র জানায়, অনুপ্র‌বেশকারী‌দের অ‌ভিবাভকরা যতই প্রভাবশালী হন না কেন কিংবা তারা‌ সরকার কিংবা ক্ষমতাসীন দলের যত ঘনিষ্ঠই হন না কেন, কাউ‌কেই ছাড় দেয়া হ‌বে না। কারো ব্যক্তিগত অপরাধের দায় নিতে নারাজ সরকার ও দল। বিতর্কিত নেতাদের বিরুদ্ধে এবার জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী।

“অ‌তি সম্প্র‌তি ক‌য়েকজন নেতার বিরু‌দ্ধে সাংগঠ‌নিক ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহ‌নের মাধ্য‌মে এ শু‌দ্ধি অ‌ভিযা‌ন ভ‌বিষ্যৎ এ কতটা ক‌ঠোর হ‌তে পা‌রে তার বার্তা ইতিম‌ধ্যে পৌঁ‌ছে দেয়া হ‌য়ে‌ছে বিত‌র্কিত এসব নেতা‌দের”, ব‌লে জা‌নি‌য়ে‌ছেন দ‌লের একজন প্রে‌সি‌ডিয়াম সদস্য। শুধু তাই নয় দ‌লের সভাপ‌তি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হা‌সিনা ক‌ঠোর ভা‌বে নি‌র্দেশ দি‌য়ে‌ছেন যে, অপকর্মকারী যারা দ‌লের মু‌খোশ প‌ড়ে বি‌ভিন্ন অপকর্ম নি‌জেরা এবং যা‌দের ছত্রছায়ায় ক‌রে আস‌ছে তা‌দের সবাই‌কে সাংগঠ‌নিক ও পাশাপা‌শি আইনের আওতায় এনে শা‌স্তির ব্যবস্থা করা হ‌বে।

এ প্রেক্ষাপ‌টে আগামী ১০ সেপ্টেম্বর দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব‌লে ম‌নে কর‌ছেন আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর নেতারা। কারন এ বৈঠক থে‌কে চলমান দুর্নীতিবিরোধী শুদ্ধি অভিযান জোরালো করার সিদ্ধান্ত আস‌বে।
‌বিত‌র্কিত নেতা ছাড়াও ছাড় পা‌চ্ছেন না বিতর্কিত এম‌পিরাও। বিত‌র্কিত‌দের চলমান দলীয় সকল পদ থে‌কে স‌রি‌য়ে দি‌য়ে ভ‌বিষ্যৎ যে‌কোন দলের তৃণমূল শাখা সম্মেলনে তাদের অংশগ্রহণও নিষিদ্ধ থাকবে।

শু‌দ্ধি অ‌ভিযা‌নকে সাম‌নে রে‌খে আওয়া‌মী লীগ ‌কোন পদ‌ক্ষেপ নি‌য়ে‌ছে ‌কিনা জান‌তে চাই‌লে দ‌লের সম্পাদকমণ্ডলীর তিন জন নেতা জানান, পাবনা-৪ আস‌নে টানা ২৫ বছ‌রের ডিলু প‌রিবা‌রের একচ্ছত্র আধিপত্যের পতন ঘ‌টি‌য়ে মনোনয়ন দেয়া হ‌য়ে‌ছে ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান বিশ্বাস‌কে। এটা সক‌লের জন্য একটা বার্তা।

দ‌লের সি‌নিয়র এক প্রভাবশালী নেতা ব‌লেন, সাম্প্র‌তিক করোনাকালে দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে আরো দুটি আলোচিত ঘটনা হচ্ছে করোনার সনদ জালিয়াতিসহ নানা প্রতারণায় জড়িত রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদ করিম এবং জেকেজির প্রধান নির্বাহী আরিফুল হক চৌধুরী ও তার স্ত্রী প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা চৌধুরীকে গ্রেফতার করা। এরা দীর্ঘ‌দিন দ‌লের অ‌নেক প্রভাবশালী‌দের ছায়ায় থে‌কে শত শত কো‌টি টাকা লোপাট ক‌রে‌ছে। রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ করিম ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাসুদ পারভেজের ৫২টি ব্যাংক হিসাব জব্দ করার আদেশ দিয়েছে আদালত। প্রভাবশালী‌দের অ‌নেক চাপ থাক‌লেও এসব ব্যাক্তি‌দের কেউ রক্ষা কর‌তে পা‌রে নায়।

বিতর্কিত এমন আরো অনেকের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর এমন কঠোর অবস্থানকে সর্বমহল থেকে সাধুবাদ জানানো হচ্ছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে দেশ জুড়ে ক্যাসিনো ও দুর্নীতিবিরোধী অভিযান শুরু হয়। ক্যাসিনোকাণ্ডে সরাসরি সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়ায় তত্কালীন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট ও তার সহযোগীদের গ্রেফতার করা হয়।

এ‌দি‌কে গত ২রা সে‌প্টেম্বর, বুধবার দুপুরে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় সম্পাদকদের কঠোর নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়েছে, বিভাগীয় উপকমিটিগুলোতে আর বিতর্কিত বা অনুপ্রবেশকারীদের দেখতে চায় না আওয়ামী লীগ। বৈঠ‌কে উপ‌স্থিত নেতারা ব‌লেন, য‌দি কোন ভা‌বে ভ‌বিষ্য‌তে সা‌হেদ, পা‌পিয়াদের ম‌তো কেউ য‌দি দ‌লে প্র‌বেশ ক‌রে তাহ‌লে তার দা‌য়িত্ব নেওয়া এবং হাইকমা‌ন্ডে জবাব‌দিহী কর‌তে হ‌বে কমিটির চেয়ারম্যান ও সদস্যসচিবকে। বৈঠ‌কে উপ‌স্থিত নেতা‌দের সূ‌ত্রে জানা যায়, ওবায়দুল কা‌দের, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমসহ সম্পাদকমণ্ডলীর বেশ কয়েকজন নেতা তা‌দের বক্ত‌ব্যে তু‌লে ধ‌রেন কিভা‌বে দ‌লের ভিতর অ‌বৈধ অনুপ্র‌বেশকারী‌দের প্র‌বেশ রোধ করা যায়। বৈঠ‌কে মহানগর ও সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন হয়েছে তাদের আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সভানেত্রীর ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে অনুপ্রবেশকারী কাউকে না রাখতে বলা হয়েছে।

অন্য‌দি‌কে বজুল আলো‌চিত সংসদ সদস্য পাপলুর মানব পাচা‌রের বিষয়ে সরকার ক‌ঠোর ব্যবস্থা নি‌চ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই সংসদে বলেছেন, ‘ঐ সংসদ সদস্য (পাপুল) কুয়েতের নাগরিক হলে তার আসনটি (লক্ষ্মীপুর-২) খালি করে দিতে হবে।’ পাপুল ও তার স্ত্রী সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য সেলিনা ইসলামের অবৈধভাবে বিপুল সম্পদ অর্জনের বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে।

শু‌দ্ধি অ‌ভিযা‌নের দ‌লের ক‌ঠোর পদ‌ক্ষে‌পের ধারাবা‌হিকতায় নির্মাণ খাতের ‘গডফাদার’ জি কে শামীমসহ যুবলীগ, কৃষক লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের আরো কয়েক জন নেতার ঠাঁই হয়েছে কারাগারে। পদ হারিয়েছেন তত্কালীন যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওছার, সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথ, ছাত্রলীগের সভাপতি রেজোয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীসহ অনেকেই। ব্যাংক হিসাব তলব ও বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ নানা আইনি পদক্ষেপের মুখে পড়তে হয়েছে তাদের। তদ্বির-বাণিজ্যে যুক্ত হয়ে বিপুল অর্থসম্পদের মালিক বনে যাওয়া নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়াকেও জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া অনেক বিতর্কিত এখনো আত্মগোপনে আছেন। মূল কথা এবার দ‌লের শু‌দ্ধি অ‌ভিযা‌নে বিত‌র্কিত যে‌কোন নেতা ‌বোন ধর‌নের ছাড় পা‌চ্ছেন না।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল অপরাজিতবাংলা ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন oporajitobangla24@yahoo.com ঠিকানায়।