আজ ৬ অক্টোবর, মঙ্গলবার দেশে চলমান নারী সহিংসতার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে বিভিন্ন সংগঠনের ডাকে “ধর্ষকের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ” ধর্ষন বিরোধী মিছিলটি দুপুর দেড়টার দিকে রাজধানীর শাহবাগ মোড় থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উদ্দেশে রওনা দিয়ে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে পুলিশের বাধার মুখে পড়েছে।t
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে এক গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে বর্বরোচিত নির্যাতন, সিলেট এমসি কলেজ ছাত্রবাসে নববধূকে গনধর্ষণসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে বিভিন্ন সংগঠনের ডাকে এ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শাহবাগ মোগের গনজামায়েত থেকে আন্দোলনকারীদের মিছিলটি প্রথমের শাহবাগ থেকে টিএসসির দিকে যায়। সেখানে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অবস্থান নেওয়া আন্দোলনকারীদের সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উদ্দ্যেশে রওনা দেয় ধর্ষণ বিরোধী মিছিলটি। মিছিলটি কিছুদুর যাওয়ারে পর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে পৌঁছালে পূর্ব থেকে প্রস্তুত থাকা পুলিশ মিছিলটি সামনে যেতে বাধা দেয়।
এসময় মিছিলকারী ও পুলিশের মধ্য ধস্তাধস্তি হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ লাঠিচার্জ করলে ছাত্র ইউনিয়নের ৫ জন কর্মী আহত হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আহতদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
এক পর্যায়ে মিছিলকারীরা সেখানেই অবস্থান নিয়ে বসে পরে এবং বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকে। আমাদের প্রতিবেদকের রিপোর্ট লিখার সময়ে আন্দোলনকারীরা একই স্থানে অবস্থান করছিলো এবং সেখানে এখনো বিক্ষোভ চলছে।
সমাবেশে ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি মেহেদী হাসান নোবেল বলেন, ‘আজকের ধর্ষনের মিছিলে পুলিশ বাধা দিয়ে প্রমাণ করেছে তারা ধর্ষকের পক্ষে। যেসব পুলিশ মিছিলে বাধা দিয়েছে তাদের মধ্যে কোনও নারী পুলিশ সদস্য ছিল না। পুরুষ পুলিশ সদস্যরা আমাদের নারী কর্মীদের আঘাত করে।’
সমাবেশ থেকে মিছিলে পুলিশের হামলার প্রতিবাদে সন্ধ্যায় ৭টায় মশাল মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করে। মিছিল শেষে ধর্ষণ প্রতিরোধে ‘ব্যর্থ’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কুশপুত্তলিকা দাহ করা কথাও জানান তারা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ‘ধর্ষকের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ ব্যানারে আজ মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে শুরু হয় গণজমায়েত। ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টসহ প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা কালো পতাকা নিয়ে এতে যোগ দেন।
আজকের কর্মসূচিতে বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নিচ্ছেন। এঁদের মধ্যে রয়েছেন যুব সংগঠন, সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। অংশ নেন সাহিত্যিক, লেখক, ব্লগাররাও। যোগ দিয়েছেন সর্বস্তরের সাধারণ মানুষও। এছাড়া টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ব্যানারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। মূলত সেখানে বিভিন্ন হলের ডাকসু নেতারা ছিলেন। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এসব সাধারণ শিক্ষার্থীরা আসেন রাজধানীর মোহাম্মদপুর, মিরপুর, ধানমন্ডি, উত্তরা সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে।
এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। এর আগে বৃষ্টি উপেক্ষা করে শাহবাগ মোড়ে আসতে শুরু করেন ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনকারীরা। তবে কর্মসূচিতে বাধা আসে বৃষ্টির কারণে। পরে বৃষ্টি কমলে বেলা ১২টার দিকে শুরু হয় কর্মসূচি।
ধর্ষণবিরোধী গণজমায়েতে উত্তাল ছিল রাজধানীর শাহবাগ। উত্তরায় প্রায় এক ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখে শিক্ষার্থীরা। এসব সমাবেশ ও বিক্ষোভ কর্মসূচিতে কেবল নোয়াখালীর ওই ঘটনা নয়, সিলেটের এমসি কলেজে সংঘবদ্ধ ধর্ষণসহ সারা দেশে নারী নির্যাতনের ঘটনা বৃদ্ধিতে উদ্বেগ জানিয়ে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করা হয়। এর আগে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে এক গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে বর্বরোচিত নির্যাতনের প্রতিবাদে গতকাল সোমবার রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন হয়।