ইহুদিবাদী ইসরাইলে ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের আল-আকসা অভিযানের ৭৫তম দিনেও তেল আবিবের অবৈধ সরকার গাজা উপত্যকার দক্ষিণে খান ইউনিসের পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্বে আবারো ভয়াবহ বিমান হামলা চালিয়ে বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে।
গাজা উপত্যকার দক্ষিণে অবস্থিত খান ইউনিস শরণার্থী শিবিরে”হামদান” পরিবারের একটি আবাসিক বাড়িতে বর্বর ইসরাইলি বাহিনীর সর্বশেষ হামলায় আরও ১৪ ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছেন। গাজা উপত্যকায় আবাসিক বাড়ি এবং চিকিৎসা কেন্দ্রে বোমাবর্ষণ অনবরত চলছেই এমনকি তা কয়েক ঘণ্টার জন্যও থামছে না। এই পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘের অঙ্গ সংগঠন ইউনিসেফের মুখপাত্র জেমস অ্যাল্ডার বলেছেন, যে এই যুদ্ধ স্পষ্টত শিশুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ।
ইউনিসেফের মুখপাত্র জেমস অ্যাল্ডার বলেছেন, “স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা অনুযায়ী গাজা উপত্যাকায় ইসরাইলের হামলায় নিহতের সংখ্যা উনিশ হাজারে পৌঁছেছে এবং তাদের মধ্যে ৪০ ভাগই শিশু। এত বিপুল সংখ্যক শিশু নিহত হওয়ার কারণেই ইউনিসেফ এই যুদ্ধকে শিশুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বলে অভিহিত করেছে এবং এই যুদ্ধ আরও কয়েক দিন বা সপ্তাহ চলতে থাকলে আমরা দেখব যে অবহেলা বা অসুস্থতার কারণে আরো অনেক শিশু মারা যাবে। এখন যুদ্ধবিরতিই একমাত্র পথ যা মানুষকে নানা রোগ বা অনাহারে মারা যাওয়া থেকে বিরত রাখতে পারে।”
একদিকে, গাজার মানবিক পরিস্থিতির অবনতি এবং স্থল অভিযানে ইহুদিবাদী সেনাবাহিনীর সামরিক লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থতার পাশাপাশি ইসরাইলের পক্ষে হতাহতের সংখ্যা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে একটি নতুন যুদ্ধবিরতির জন্য আলোচনা পুনরায় শুরু করার একটি ভিত্তি তৈরি করেছে।
এ প্রসঙ্গে কিছু সংবাদ সূত্র বুধবার হামাসের রাজনৈতিক কার্যালয়ের প্রধান ইসমাইল হানিয়া যুদ্ধ বিরতি আলোচনায় যোগ দিতে কায়রো সফরের খবর দিয়েছে। হিব্রু মিডিয়া আলোচনার অগ্রগতি সম্পর্কে পরস্পরবিরোধী খবর প্রকাশ করেছে কিন্তু হারেটজ পত্রিকার মতে হামাস কর্মকর্তাদের একটি প্রতিনিধি দল যুদ্ধ পুনরায় শুরু হওয়ার পর প্রথমবারের মতো যখন কায়রো সফর করছে তখন কায়রো এবং দোহা ঘোষণা করেছে যে সেখানে একটি স্বল্প মেয়াদে বন্দি বিনিময়ের সম্ভাবনা খুবই কম।
যাইহোক আহারানোট এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে যে ইসরাইল বর্তমানে আলোচনায় তার তিনটি নীতি বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে। অর্থাৎ একটি সাময়িক যুদ্ধবিরতির পাশাপাশি যুদ্ধ অব্যাহত রাখা এবং আগের রাউন্ডে আলোচনা যেখানে শেষ হয়েছিল সেখান থেকে আবার শুরু করা।
রুশ বার্তা সংস্থা স্পুটনিকের খবর অনুযায়ী, ইসরাইলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগ মঙ্গলবার বলেছেন যে ইসরাইল তার বাকি বন্দিদের মুক্ত করতে গাজা উপত্যকায় একটি যুদ্ধবিরতির জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। গতকাল মঙ্গলবার হেরজগের কার্যালয়ে গিয়েছিলেন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা। তাদের সঙ্গে মত বিনিময়কালে ইসরাইলের প্রেসিডেন্ট বলেন, এখন যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত সব দায়দায়িত্ব নির্ভর করছে ইয়াহিয়া সিনওয়ার এবং হামাস নেতৃত্বের ওপর।’
ভিন্ন একটি ওয়েবসাইট ইসরাইলি কর্মকর্তা এবং একটি বিদেশী সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে যে ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠী কাতারি মধ্যস্থতাকারীকে এক সপ্তাহের জন্য যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার জন্য তার প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে। আগ্রাসী ইহুদিবাদী সরকার যখন তাদের বন্দীদের মুক্তির জন্য আবারো উচ্চ মূল্য দেওয়ার কথা বলছে তখন দুই মাস আগে তারা সামরিক হামলার মাধ্যমে তাদের সব বন্দিদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি করেছিল। হামাস কর্মকর্তারা বারবার বলেছেন যে তারা স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং যুদ্ধের সমাপ্তির আগে বন্দি বিনিময় চুক্তি নিয়ে আলোচনা করবেন না।
অন্যদিকে, নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা এবং ভেটো অধিকারের আশ্রয় নেওয়া থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রতিরোধ করার জন্য আলোচনা আবার শুরু হয়েছে এবং চলছে। গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটি, যা স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে হওয়ার কথা ছিল তা স্থগিত করা হয়েছে। জাতিসংঘে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যাতে এই প্রস্তাবে ভেটো না দেয় তার জন্য বিভিন্ন দেশ ব্যাপক আলোচনা করছে।
পার্সটুডে