ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের ছেলে মোহাম্মদ এরফান সেলিমের বিরুদ্ধে নৌবাহিনী অফিসারকে মারধর ও হত্যার হুমকির অভিযোগে দায়ের করা মামলায় গত সোমবার র্যাবের হাতে সাংসদের নিজ বাসভবন থেকে গ্রেফতার হন হাজী সেলিম পুত্র। সে মামলায় ইরফান সেলিম ও তাঁর দেহরক্ষী জাহিদের আজ বুধবার রিমান্ড শুনানি হবে।
গ্রেফতারের পর পর দিনভর সাংসদের চকবাজারের ২৬, দেবীদাস ঘাট লেনের “চাঁন সরদার দাদা বাড়ি” আটতলা ভবনে দিনভর অভিযান চালান র্যাবের ভ্রাম্যমান আদালত।
উক্ত অভিযানে একটি অস্ত্র, একটি দোনলা বন্দুক, প্রচুর ওয়াকিটকি, অবৈধ ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস, বিদেশী মদ, বিয়ার, একটি ব্রিফকেইস, হ্যান্ডকাফ জব্দ করা হয়।
অবৈধ ওয়াকিটকি ও মাদক রাখার দায়ে সংসদ সদস্য হাজি সেলিমের দ্বিতীয় ছেলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ এরফান সেলিম ও দেহরক্ষী মো. জাহিদকে এক বছর করে কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
গত সোমবার সন্ধ্যায় র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ রাজধানীর চকবাজারে হাজি সেলিমের বাসার নিচে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। এছাড়া এরফান ও জাহিদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে আলাদা মামলা করবে বলে জানান র্যাব।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আজকের এ শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতে দণ্ডিত এরফান সেলিম ও তাঁর দেহরক্ষী জাহিদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিতে চায় পুলিশ। তাঁদের সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে গতকাল মঙ্গলবার আদালতে আবেদন করেছে পুলিশ।
ইতিমধ্যে এরফান সেলিমকে নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধ এবং অসদাচরণের অভিযোগে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গতকাল স্থানীয় সরকার বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে এ কথা জানানো হয়েছে।
এদিকে গত সোমবার টাঙ্গাইল থেকে গ্রেফতার হওয়া এ মামলার আরেক আসামি এ বি সিদ্দিক ওরফে দীপুকে গতকাল আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাঁর তিন দিনের পুলিশি রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগের দিন এরফানের গাড়ির চালক মিজানুর রহমানকে এক দিনের রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি পায় পুলিশ।
জানা যায়, এ বি সিদ্দিক ওরফে দীপু একসময় সাংসদ হাজি সেলিমের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ছিলেন, পরে তাঁর ছেলে এরফান সেলিমের সঙ্গে থাকেন।
উল্লেখ্য যে, এর আগে গত রোববার রাতে এমপি হাজী মোহাম্মদ সেলিমের ‘সংসদ সদস্য’ লেখা সরকারি গাড়ি থেকে নেমে নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ওয়াসিফ আহমেদ খানকে মারধর করা হয়। রাজধানীর কলাবাগান সিগন্যালের পাশে এ ঘটনা ঘটে। ঐ রাতে এ ঘটনায় জিডি হলেও গত সোমবার ভোরে হাজী সেলিমের ছেলে ও সাময়িক বরখাস্ত ৩০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ঢাকা-৭ আসনের সরকার দলীয় সাংসদ হাজী সেলিমের মেঝ ছেলে মোহাম্মদ এরফান সেলিম সহ সাতজনের বিরুদ্ধে নৌবাহিনীর অফিসার ক্যাপ্টেন ওয়াসিফ আহমেদ মামলা করেন।
এজহারে ওয়াসিফ আহমেদ উল্লেখ করেছেন, তিনি ও তার স্ত্রী মোটরসাইকেলে করে যাচ্ছিলেন। সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের গাড়ি তার মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। ধাক্কা সামলে সড়কের পাশে মোটরসাইকেল থেকে নেমে গাড়িটির সামনে দাঁড়ান ওয়াসিম। তাদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করলে গাড়ি থেকে জাহিদ ও আবু বক্কর সিদ্দিকসহ আরও ২-৩ জন তাকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে। তাকে ও তার স্ত্রীকে হত্যার হুমকিসহ তুলে নেয়ার হুমকি দেয় তারা। তারা মারধর করে ওয়াসিমকে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে যান। তার স্ত্রী, স্থানীয় জনতা এবং পাশে ডিউটিরত ধানমন্ডির ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তা তাকে উদ্ধার করে আনোয়ার খান মডেল হাসপাতালে নিয়ে যান।