অবশেষে সারা রাত দু’পক্ষ থানায় উপস্থিত থাকার পর ধানমন্ডি থানায় একটি মামলা করেছেন মো. ওয়াসিফ আহমেদ খান নামে নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট পদমর্যাদার ওই কর্মকর্তা।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের ছেলে মোহাম্মদ এরফান সেলিমের বিরুদ্ধে নৌবাহিনী অফিসারকে মারধর ও হত্যার হুমকির অভিযোগে আজ ভোরে মামলাটি এন্ট্রি হয়েছে বলে থানার অফিসার ইনচার্জ ইকরাম আলী মিয়া নিশ্চিৎ করেন।
একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, গতকাল রোববার সন্ধ্যার পর ধানমন্ডিতে কলাবাগান ক্রসিংয়ের কাছে এ ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে ওয়াসিম আহমেদকে রক্তাক্ত দেখা যায়। ভিডিওতে তাকে মারধর করে তার দাঁত ভেঙে ফেলা হয়েছে দাবি করলেও জিডিতে এ কথা উল্লেখ করা হয়নি।
জিডিতে ওয়াসিফ আহমেদ উল্লেখ করেছেন, তিনি ও তার স্ত্রী মোটরসাইকেলে করে যাচ্ছিলেন। সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের গাড়ি তার মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। ধাক্কা সামলে সড়কের পাশে মোটরসাইকেল থেকে নেমে গাড়িটির সামনে দাঁড়ান ওয়াসিম। তাদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করলে গাড়ি থেকে জাহিদ ও আবু বক্কর সিদ্দিকসহ আরও ২-৩ জন তাকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে। তাকে ও তার স্ত্রীকে হত্যার হুমকিসহ তুলে নেয়ার হুমকি দেয় তারা।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ঘটনার সময় এই প্রত্যক্ষদর্শী তার মুঠোফোনে ভিডিও ধারণ করেন। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, আহত নৌবাহিনীর কর্মকর্তা নিজেকে লেফটেন্যান্ট ওয়াসিম বলে পরিচয় দেন। তিনি বলেন, বই কিনে স্ত্রীসহ মোটরবাইকে ফিরছিলেন। ওই গাড়িটি তাঁর মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। তিনি তখনই মোটরসাইকেল থামান এবং নিজের পরিচয় দেন। গাড়ি থেকে নেমে দুই ব্যক্তি তাঁকে মারধর শুরু করেন। মারধরের কারণে তাঁর (ওয়াসিম) দাঁত ভেঙে গেছে। তাঁর স্ত্রীর গায়েও হাত দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
পরে ঘটনাস্থলে লোকজন জমে গেলে সাংসদের গাড়ি ফেলে মারধরকারীরা সরে যান। পরে পুলিশ এসে গাড়ি ও মোটরসাইকেলটি থানায় নিয়ে যায়। ভিডিওতে গাড়ির নম্বর দেখা যায় ঢাকা মেট্টো– ঘ ১১-৫৭৩৬।
ঘটনার পর গত রাত সোয়া ১০টায় ধানমন্ডি থানার সহকারী উপপরিদর্শক আবদুল্লাহ জাহিদ জানান, ওই গাড়িটি সাংসদ হাজী সেলিমের। ঘটনার সময় সাংসদ গাড়িতে ছিলেন না। তাঁর ছেলে ও নিরাপত্তারক্ষী ছিলেন। পুলিশ সাংসদের গাড়ি ও নৌবাহিনীর কর্মকর্তার মোটরসাইকেল ধানমন্ডি থানায় নিয়ে এসেছে। তিনি জানান, দুই পক্ষই থানায়। আলাপ-আলোচনার পর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে।
পরে গতকাল রাত ১২ টার দিকে যোগাযোগ করা হলে ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি ইকরাম আলী মিয়া বলেন, “দুপক্ষই থানায় আছেন। এ ব্যাপারে এখনো কোনো মামলা হয়নি। যেহেতু বিষয়টিতে বাহিনীর সংশ্লিষ্টতা আছে তাই তাঁরা অপেক্ষা করছেন। গাড়ি ও মোটরসাইকেল থানায় আছে।”
পরে আজ ভোরে মামলাটি এন্ট্রি করা হয় বলে থানা থেকে নিশ্চিৎ করা হয়। এ সময় নৌবাহিনীর আরও কয়েকজন কর্মকর্তা থানায় উপস্থিত ছিলেন বলে জানা যায়। সার্বিক ঘটনাটির বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে সাংসদ হাজী সেলিম সাহেবের সাথে যোগাযোগ করা যায় নি।
উল্লেখ্য যে, সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশের হাতে সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত মেজর নিহত হবার পর রাজধানীতে জনসম্মুখে সাংসদ পুত্রের গতকালকে সশস্ত্র বাহিনীর কোন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে মারধর করে আহত ও তাঁর স্ত্রীকে নাজেহাল করার ঘটনাটি সর্বোমহলে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।