এবারো পহেলা জানুয়ারিতেই হচ্ছে বই উৎসব। তবে এখনও সব স্কুলে পৌঁছায়নি নবম শ্রেণির পাঠ্য বই। প্রতিষ্ঠান প্রধানরা বলছেন, দেরিতে বই পৌঁছলে ভোগান্তিতে পড়তে পারে শিক্ষার্থীরা। পাঠ্যপুস্তক বোর্ড অবশ্য বলছে, ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে সব শ্রেণির বই পৌঁছে যাবে। সর্বোচ্চ নতুন বছরের সাত দিন পর্যন্ত বাড়তি সময় লাগতে পারে। শিক্ষাক্রম ও পাঠ্য পুস্তক বোর্ড সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিকের প্রায় সব। মাধ্যমিকের ষষ্ঠ আর সপ্তমের বই। অষ্টমের কিছু আর নবম শ্রেণির কোনো বই যায়নি অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে। শিক্ষকরা বলছেন, পুরো সেট বই না পেলে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ছন্দপতন হবে। কয়েকজন শিক্ষক বলেন, নবম শ্রেণির বই হাতে না পেলেও কতদিনের মধ্যে তা পাওয়া যাবে- সে তথ্যও তাদের কাছে নেই। সেইসাথে পিডিএফ ফাইল প্রিন্ট করার ব্যবস্থা থাকলেও কিছুটা উপকার হতো। নতুন শিক্ষাক্রম তাই অষ্টম আর নবম শ্রেণির পান্ডুলিপির অনুমোদন পেতে লেগে যায় অনেকটা সময়। দেরিতে শুরু হয় এই দুই শ্রেণির বই ছাপা। যদিও পাঠ্য পুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান বলছেন ৩০ ডিসেম্বরই স্কুলে বই পৌঁছে যাবে। প্রয়োজনে সর্বোচ্চ নতুন বছরের সাত দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্য পুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম বলেন, আমাদের সবচেয়ে সুবিধা হলো- আমাদের বইগুলো বড় চারটা প্রেসের হাতে আছে। তাদের দৈনিক সক্ষমতা, ১০ লাখ বই। বড় প্রতিষ্ঠানগুলো চাইলে শ্রেণি ভাগ করে কয়েকদিন ধরে বই বিতরণের কাজ করতে পারে। তবে একযুগের বেশি সময়ের ধারাবাহিকতায় এবারও বই উৎসব হচ্ছে পহেলা জানুয়ারি। আগামী বছর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের কয়েকটি শ্রেণিতে নতুন একটি কারিকুলাম বা শিক্ষাক্রম চালু করতে যাচ্ছে সরকার। এতে পাঠ্যসূচি ও মূল্যায়ন পদ্ধতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসছে। নতুন শিক্ষাক্রমে দশম শ্রেণির আগের সব পাবলিক পরীক্ষা তুলে দেওয়া হয়েছে। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা পদ্ধতিতেও আনা হয়েছে পরিবর্তন। থাকছে না নবম শ্রেণিতে বিভাগ পছন্দের সুযোগ। এর বদলে একাদশ শ্রেণিতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা পছন্দমতো বিভাগে পড়তে পারবেন। চলতি বছর প্রথম, দ্বিতীয়, ষষ্ঠ এবং সপ্তম শ্রেণিতে নতুন পাঠ্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে। আগামী বছর বাস্তবায়ন করা হবে তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে। এরপর ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে, ২০২৬ সালে একাদশ শ্রেণিতে এবং ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণিতে ধাপে ধাপে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হওয়ার কথা রয়েছে। শিক্ষার্থীদের আনন্দময় পরিবেশে পড়ানোর পাশাপাশি মুখস্থনির্ভরতার পরিবর্তে দক্ষতা, সৃজনশীলতা, জ্ঞান ও নতুন দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে শেখাতেই নতুন এই শিক্ষাক্রম চালু করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড। নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী, প্রাক-প্রাথমিক স্তর, অর্থাৎ নার্সারি ও প্লে-তে শিশুদের জন্য এখন আর কোনও বই থাকবে না। শ্রেণিকক্ষেই শিক্ষকরাই তাদেরকে সরাসরি শেখাবেন। প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত তাদেরকে মাত্র তিনটি বই পড়ানো হবে। কোনও পরীক্ষা নেওয়া হবে না। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে বছরব্যাপী চলা বিভিন্ন শিখন কার্যক্রমের ভিত্তিতে। পরবর্তী শ্রেণিগুলোর মূল্যায়ন পদ্ধতিতে অবশ্য পরীক্ষা ও ধারাবাহিক শিখন কার্যক্রম- দুটোই থাকছে। এক্ষেত্রে শ্রেণিভেদে ত্রিশ থেকে ষাট ভাগ পর্যন্ত মূল্যায়নই করা হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিখনকালীন সময়ে। বাকিটা আগের মতোই পরীক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হবে। শিখনকালীন মূল্যায়নের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের যোগাযোগের দক্ষতা, উপস্থাপন, ক্লাস অ্যাসাইনমেন্ট বা বাড়ির কাজসহ বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে। নতুন শিক্ষাক্রমে দশম শ্রেণি পর্যন্ত মোট দশটি বিষয়ে পড়ানো হবে। এগুলো হলো- ভাষা ও যোগাযোগ, গণিত ও যুক্তি, বিজ্ঞান ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, জীবন ও জীবিকা, সমাজ ও বিশ্ব নাগরিকত্ব, পরিবেশ ও জলবায়ু, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা, মূল্যবোধ ও নৈতিকতা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি। এর মধ্যে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান এবং সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ে শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে ৬০ শতাংশ। আর সামষ্টিক মূল্যায়ন অর্থাৎ পরীক্ষা হবে ৪০ শতাংশ। এছাড়া শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ধর্ম শিক্ষা, শিল্প কলায় শতভাগ ধারাবাহিক মূল্যায়ন হবে। ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণিতে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের শিখনকালীন মূল্যায়ন ৬০ শতাংশ ও সামষ্টিক মূল্যায়ন বা বছর শেষে পরীক্ষায় থাকবে ৪০ শতাংশ। বাকি বিষয় জীবন ও জীবিকা, তথ্যপ্রযুক্তি, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ধর্ম শিক্ষা, শিল্প ও সংস্কৃতিতে শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে শতভাগ। শিক্ষার্থীদের নবম ও দশম শ্রেণিতে অভিন্ন সিলেবাসে পড়ানো হবে। এর মধ্যে নবম ও দশম শ্রেণির বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান এবং সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের শিখনকালীন মূল্যায়ন ৫০ শতাংশ আর সামষ্টিক মূল্যায়ন হবে ৫০ শতাংশ। বাকি বিষয়গুলোর শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে শতভাগ। একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান, মানবিক এবং বাণিজ্য- এই তিন বিভাগে ভাগ হবে৷ এখান থেকে শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দমতো বিভাগ বেছে নিতে পারবেন। এছাড়া নতুন পাঠক্রমে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে। এখন কেবল দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচি অনুসারেই অভিন্ন দশটি বিষয়ের ওপর এসএসসি পরীক্ষা নেওয়া হবে। একইভাবে, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ধরনেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। এইচএসসি পরীক্ষার পরিবর্তে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে দু’টি আলাদা পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর দুই পরীক্ষার ফলের সমন্বয়ন করে এইচএসসি’র চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা হবে। এক্ষেত্রে আবশ্যিক বিষয়ে শিখনকালীন মূল্যায়ন ৩০ শতাংশ এবং সামষ্টিক মূল্যায়ন বা পরীক্ষা হবে ৭০ শতাংশ। আর প্রায়োগিক বা ঐচ্ছিক বিষয় শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে শতভাগ।