পুঁজিবাজার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের অনাস্থা কেটে যাচ্ছে। চাঙ্গা হয়ে উঠছে করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত পুঁজিবাজার। গতকাল রবিবার এক দিনেই মূল্যসূচক ২০০ পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়ে লেনদেন ছাড়িয়েছে ১১ হাজার কোটি টাকা। এ প্রসঙ্গে বিনিয়োগকারী ও বাজার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ভালো কম্পানির আইপিও আনতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কড়া অবস্থান এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠা এই ক্ষেত্রে বড় সহায়ক হয়েছে।
সাধারন সময়ে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত পুঁজিবাজারে চার ঘণ্টা লেনদেন হয়। কিন্তু মন্দাবস্থা কাটিয়ে ওঠাতে পুঁজিবাজারে শেয়ার কেনাবেচা করতে মূলধন বিনিয়োগকারীদের মাঝে আগ্রহ দেখা দেয়। তাই গতকাল আধাঘণ্টা সময় বাড়িযেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) কর্তৃপক্ষ। বর্ধিত এ সময়ে প্রচুর শেয়ার লেনদেনের কারনে পুঁজিবাজারে শেয়ার কেনাবেচায় বড় চমক দেখা গেছে। মূল্যসূচকে বড় উত্থান হয়েছে শেয়ার কেনার চাপে, লেনদেনও এক হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ৮২ শতাংশ কম্পানির শেয়ারের দাম বেড়ে এক দিনে পুঁজিবাজারে ১১ হাজার ৪৪৮ কোটি টাকা বাজার মূলধন ফিরেছে।
করোনাভাইরাস সংক্রমন শনাক্ত শুরু হয় চলতি বছরের ৮ই মার্চ। অর্থনীতিতে বড় রকমের মন্দার শংকার সংক্রমন ছড়িয়ে পরে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। পুঁজিবাজার ছাড়তে নিজেদের মূলধন উঠাতে রীতিমতো হুমড়ি খেয়ে পড়ে বিনিয়োগকারীরা যা উপর্যুপরি শেয়ার বিক্রির চাপে মূল্যসূচক ও বাজার মূলধন বিগত সাত বছর পেছনের কথা মনে করিয়ে দেয়। এ অবস্থায় পুঁজিবাজারের পতন ঠেকাতে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) তড়িঘড়ি করে ১৮ মার্চ শেয়ারের দামের সর্বনিম্ন সীমা (ফ্লোর প্রাইস) বেঁধে দেয়। শেয়ার মূল্য নির্ধারন করে দেওয়ার পর পুঁজি বাজারে লেনদেন হয়েছে মাত্র কয়েক দিন। এরপর টানা ৬৬ দিন বন্ধ থাকে পুঁজিবাজার সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির কারণে।
ঘোষিত সাধারন ছুটির মাঝেই পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার শীর্ষ পদে বড় রদবদল হয়, সে সাথে মেয়াদ শেষ হয়ে যায় পূর্ববর্তী চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের।
নতুন চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম এবং কমিশনার হিসেবে যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরো দুই অধ্যাপক।
দায়িত্বগ্রহনের পর পুঁজিবাজারে গতি ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেন শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশন। কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের যথাক্রমে ২ ও ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণে কঠোরতা ও আল্টিমেটাম, দুর্বল কম্পানির আইপিও বাতিল এবং বন্ড মার্কেট সচল করতে উদ্যোগী হয় কমিশন।
বিএসইসি চেয়ারম্যান ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, “পুঁজিবাজার গতিশীল করতে নানামুখী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিনিয়োগকারীর আস্থা ফেরাতে কাজ করছে কমিশন। বিনিয়োগকারীর স্বার্থ রক্ষায় নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। বিনিয়োগকারীরা পুঁজি বিনিয়োগ করে যেন ক্ষতির সম্মুখীন না হন, সে বিষয়ে জোর দেওয়া হচ্ছে।”
বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজান-উর রশীদ জানান “পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার দূরদর্শী সিদ্ধান্তে বিনিয়োগকারীরা আস্থা ফিরে পেয়েছে। দীর্ঘদিন মূলধন খোয়ানোর কারণে পুঁজিবাজার থেকে বিনিয়োগকারীরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল।”
আরো জানা যায়, ব্যাংকে আমানতের সুদের হার এখন অনেক কম হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারে ঢুকছে। আমানতে সুদের হার ৬ শতাংশ ও ঋণে ৯ শতাংশ। তবে তালিকাভুক্ত কম্পানিগুলো অন্তত ১০ শতাংশ লভ্যাংশ দেয় এবং অনেক তালিকাভুক্ত ব্যাংক ও কোম্পানি ১০ শতাংশের চেয়ে বেশি লভ্যাংশও দিয়ে থাকে। অবশ্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে আয় কম হলে লভ্যাংশ কম দেওয়া হয়।
চলতি আগস্ট মাসে পুঁজিবাজারের দৃশ্যঃ
~মোট পাঁচ কার্যদিবস লেনদেন হয়েছে।
~এই সময়ে বাজার মূলধন বেড়েছে ১৯ হাজার ৪০১ কোটি টাকা।
~মূল্যসূচক বেড়েছে ৩৩০ পয়েন্ট (গত ৩০ জুলাই ডিএসইতে বাজার মূলধন ছিল তিন লাখ ২৫ হাজার ৭৩২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা) গতকাল এই মূলধন দাঁড়িয়েছে তিন লাখ ৪৫ হাজার ১৩৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।
বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, “ব্যাংকের চেয়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ অনেক বেশি সম্ভাবনাময়। বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ করলে ভালো মুনাফা করতে পারবেন।