ঢাকাবুধবার , ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০
  1. অনান্য
  2. অপরাধ ও আইন
  3. অভিবাসীদের নির্মম জীবন
  4. অর্থনীতি
  5. আত্মসাৎ
  6. আন্তর্জাতিক
  7. ইতিহাস
  8. উদ্যোক্তা
  9. এশিয়া
  10. কৃষি
  11. ক্যাম্পাস
  12. খেলাধুলা
  13. গণমাধ্যম
  14. গল্প ক‌বিতা
  15. চট্টগ্রাম বিভাগ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হা‌সিনার কা‌ছে পেঁয়াজ কূটনী‌তিতে হে‌রে গেল ভারত।

অনলাইন ডেস্ক
সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২০ ৬:৫৯ অপরাহ্ণ
Link Copied!

প্রেক্ষাপটঃ ০১

তুরষ্কে বাংলাদেশ দূতাবাস ভবন উদ্বোধন করা হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী করোনাকালে তুরষ্ক সফর করবেন কিনা এই নিয়ে দ্বিধান্বিত ছিলেন। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী তাকে বললেন যে, তুরষ্কে যেতে হবে আর তিনি বাংলাদেশ থেকেই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যুক্ত হবেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বুঝতে পারলেন না যে কেন প্রধানমন্ত্রী তাকে এই সময়ে তুরষ্কে যেতে বলছেন এবং এই করোনা সঙ্কটের সময়ে দূতাবাস ভবন উদ্বোধনের গুরুত্ব এবং রাজনৈতিক তাৎপর্য কি। তারপরেও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ তাকে মানতেই হবে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন গেলেন তুরষ্কে। উল্লেখ্য, তুরষ্ক বিশ্বে অন্যতম পেঁয়াজ উৎপাদনকারী দেশ এবং রপ্তানিকারকও বটে।

প্রেক্ষাপটঃ ০২

বাংলাদেশে গত কয়েক বছর ধরেই ইলিশ উৎপাদনে একের পর এক রেকর্ড গড়ছে। বিশেষ করে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের কিছু ব্যবস্থা- যেমন জাটকা ধরা নিষিদ্ধ করা, প্রজনন মৌসুমে ইলিশ নিধন বন্ধ করা ইত্যাদি কারণে বাংলাদেশে ইলিশের ফলন এখন বাড়বাড়ন্ত। স্বল্প মূল্যে যেমন মানুষ ইলিশে স্বাদ পাচ্ছে, তেমনি দেশের চাহিদা মিটিয়ে ইলিশ দেশের বাইরেও রপ্তানিও করা যাচ্ছে। আর এজন্যেই ইলিশ রপ্তানি করে বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করছে। ভারতে ইলিশ রপ্তানি করা হবে কিনা তা নিয়ে এক ধরণের দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বললেন যে, পূজোর সময়ে ভারতে ইলিশের চাহিদা থাকে, কাজেই ইলিশ রপ্তানি করা হবে। গতকালই প্রথম ইলিশের চালান বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতে চলে গেছে।

প্রেক্ষাপটঃ ০৩

সন্ধ্যায় ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হলো যে তারা বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে এবং এখন থেকে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি করা হবে না। ভারতের এই আকস্মিক সিদ্ধান্তে সবাই অবাক হয়ে গেল এবং নূন্যতম বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের শিষ্টাচারটুকু ভুলে ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে এই ধরণের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলো।

এই ঘটনা তিনটি প্রেক্ষাপট‌কে একত্রে মেলানো গেলে দেখা যাবে যে, শেখ হাসিনার কূটনীতিক দূরদর্শিতার কাছে কিভাবে ভারত পরাজিত হল। এর আগেও কিছু ঘটনা রয়েছে যা এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন।

প্রধানমন্ত্রী বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশীকে ডেকে বললেন যে, পেঁয়াজের সামনে সঙ্কট হতে পারে। কাজেই এখন থেকেই পেঁয়াজ আমদানি করার উদ্যোগ নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী টিপু মুনশির নেতৃত্বে বাণিজ্য মন্ত্রনালয় বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজের জন্য এলসি আমদানির সিদ্ধান্ত নিল। বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। এখানেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দূরদর্শিতার প্রমাণ।

প্রধানমন্ত্রী জানতেন, গত বছরের সেপ্টেম্বরের মতো এই বছরের সেপ্টেম্বরেও ভারত বাংলাদেশে পেঁয়াজ আমদানি নিষিদ্ধ করতে পারে। আর এই কারণেই তিনি বাণিজ্যমন্ত্রীকে আগে থেকেই পেঁয়াজ আমদানির প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে তুরস্কে পাঠিয়েছিলেন, যেন তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্কটা আরও প্রগাঢ় হয়। এই সম্পর্কের সূত্র ধরে তুরস্ক থেকে দ্রুত গতিতে পেঁয়াজ আনা যায়।

আবার তিনি প্রতিহিংসার কূটনীতি না করে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধ করার পরও ভারতে ইলিশের চালান পাঠান। অর্থাৎ সংকীর্ণ কূটনীতি, সংকীর্ণ প্রতিবেশী সুলভ রাষ্ট্রের আচরণের প্রতিবাদ তিনি করলেন উদারতা দিয়ে।

এটাই হল কূটনীতির এক নতুন ব্যাকরণ। এই ব্যাকরণ রচনা করেছেন শেখ হাসিনা। তিনি কূটনীতিক শিষ্টাচার ও উদার কূটনীতির এক নতুন নজির স্থাপন করে ভারতকে কূটনীতিকভাবে পরাজিত করলেন।

বাংলাদেশে গতকাল ভারতের পেঁয়াজ নিষিদ্ধ হওয়ার পর আকস্মিকভাবে পেঁয়াজের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। কিন্তু বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি বেশিক্ষণ থাকবে না। পেঁয়াজের ঘাটতি থাকবে না। আগামী দুই চারদিনের মধ্যেই চীন, তুরস্কসহ বেশ কিছু দেশ থেকে পেঁয়াজ আসবে। সেই পেঁয়াজ আসার প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। এখন বাংলাদেশেও পেঁয়াজ আছে। কৃত্রিমভাবে যে সমস্ত ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের দাম বাড়াচ্ছে তারা অচিরেই স্তিমিত হয়ে যাবে, বাংলাদেশে পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল হবে।

এখানে শেখ হাসিনার প্রাজ্ঞতা এবং রাজনৈতিক দুরদৃষ্টিতার দুটি দিক পাওয়া যায়-
প্রথমতঃ তিনি আগে থেকেই বুঝতে পেরেছিলেন যে আরেকটি পেঁয়াজ কূটনীতি হতে যাচ্ছে। এজন্য তিনি সম্ভব্য যে সমস্ত দেশগুলো পেঁয়াজ রপ্তানি করে তাদের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ করেছিলেন। তুরস্কতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে পাঠিয়ে তিনি সম্পর্কের একটা নতুন মেলবন্ধনও তৈরী করে রেখেছিলেন।
দ্বিতীয়তঃ তিনি ভারতের সংকীর্ণ পেঁয়াজনীতির জবাব দিলেন ইলিশ উদারতা দিয়ে। এরফলে ভারত আরেকবার শেখ হাসিনার কাছে কূটনীতিকভাবে পরাজিত হলো। যেমন অতীতে বহুবার এভাবেই কূটনীতিক উদারতা দিয়ে শেখ হাসিনা বিজয়ী হয়েছিলেন এবং বিশ্বরাজনীতিতে নিজের জায়গা দখল করেছিলেন। এবার পেঁয়াজ কূটনীতিতেও তিনি দেখালেন, সংকীর্নতা করে জয়ী হওয়া যায় না, জয়ী হতে হয় উদারতা দিয়ে।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল অপরাজিতবাংলা ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন oporajitobangla24@yahoo.com ঠিকানায়।