করোনাভাইরাসের কারনে ফ্রান্সে গত ১৭ মার্চ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু মে’ মাসে পুনরায় স্কুল খুলে দিলে খোলার সাথে সাথেই ৭০ জন শিক্ষার্থী করোনায় আক্রান্তের কারনে এক সপ্তাহের মধ্যে আবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয় দেশটি। এ অবস্থায় গত ১লা সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার পুনরায় স্কুল খোলে দিলে আজকে পর্যন্ত অর্থাৎ গত ৪ দিনে আবারও ২২ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করোনা ভাইরাসের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে।
শ্ক্ষিা অধিদপ্তর থেকে নিশ্চিৎ করা হয় যে, “এটা নিশ্চিত যে যাদের কারণে স্কুল বন্ধ হয়েছে তারা কেও স্কুল খোলার পর আক্রান্ত হয়নি। তারা আক্রান্ত অবস্থাতেই স্কুলে এসেছিলো।”
উল্লেখ্য যে, ২২ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১০ টি ফ্রান্স মেট্রোপলিটান এ বাকি ১২ টি La Réunion এ। ফ্রান্সে ৬০ ০০০ এর বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বর্তমানে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যদি ৩ জনের বেশি আক্রান্ত অবস্থায় পাওয়া যায়, তবেই স্কুল বন্ধ করে দেয়। উপসর্গ নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধরা পড়ছে। এদের মধ্যে যেমন ছাত্র/ছাত্রী আছে তেমন আছে ওই প্রতিঠানে কর্মরত। এখানে বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য যে এদের কেও স্কুলে আসার পর আক্রান্ত হয় নি। কারো মধ্যে উপসর্গ দেখা দিলেই তাকে কোয়ারেন্টাইনে নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রো বলেছেন, “আমাদের কৌশল হচ্ছে ভাইরাস নিয়ে বেঁচে থাকার”। তাঁর এই একটি উক্তিতেই বোঝা যাচ্ছে, ফ্রান্সে আবার লক-ডাউন হবার সম্ভবনা খুবই কম।
সরকার জনগণের উপর সব ছেড়ে দিয়েছে। প্যারিসে ইতিমধ্যে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
সরকারের কথা : মাস্ক ব্যবহার করতে হবে, নিয়মিত সাবান বা জেল দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে হবে, সামাজিক দূরত্ত্ব বজায় রাখতে হবে, যতদূর সম্ভব সামাজিক/পারিবারিক উৎসব থেকে দূরে থাকতে হবে, শপিং বা নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস ক্রয় করার জন্য বাসার যত কাছ থেকে করা যায় ততই ভালো, পাবলিক ট্রান্সপোর্ট এড়িয়ে চলা উত্তম কাজ, রেস্টুরেন্ট এড়িয়ে চলতে হবে এবং যতদূর সম্ভব ঘরে থাকতে হবে । শুধু মাত্র ঘরের বাজার করার জন্য বা টাকা পাঠানোর জন্য পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করে আরেক জায়গায় যাওয়ার চেয়ে, নিকটবর্তী কোথাও থেকে এইসব কাজ করতে হবে।
সরকারের ভাষ্য, করোনা মোকাবেলায় দায়বদ্ধতা শুধু সরকারেরই নয়, জনগনের উপরই বেশী বর্তায়। লকডাউনে সরকার জনগনকে ঘরে বসে খাওয়ালো এবং তখন ভাইরাসও কমে গেলো কিন্তু যেইনা লক-ডাউন তুলে নিলো তখন সব কিছু আহের মতো। সুতরাং, লক ডাউন কোন সমাধান হতে পারে না, বরং যেই পর্যন্ত স্হায়ী কোনো চিকিৎসা বের না হয়, সেই পর্যন্ত আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনেই চলতে হবে।
করোনার দ্বিতীয় দফা সংক্রমণে ফ্রান্সে খুবই দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে আক্রান্তের সংখ্যা। ৪ সেপ্টেম্বর শুক্রবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে যে রিপোর্ট এসেছে তাতে দেখা যায় ৭৩৭৯ জন আক্রান্ত হয়েছে, এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত ৮৯৭৫ জন, যা বৃহস্পতিবার ছিল ৬১১১ জন এবং বুধবার ছিল ৫৪২৯ জন।
ফ্রান্সে এ পর্যন্ত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী করোনা সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ৯ হাজার ১৮১ জন এবং মৃত্যু হয়েছে মোট ৩০ হাজার ৭০৬ জনের । ১৯ শে আগস্ট থেকে ২৫ শে আগস্ট, এই ৭ দিনে যে পরিমান টেস্ট হয়েছে তার ৩.৯% পজিটিভ ধরা পড়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় ৩২ টি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত গ্রূপ ধরা পড়েছে। এখন পর্যন্ত ১৩৫১ টি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত গ্রূপ ধরা পড়েছে।
দ্বিতীয় দফা এই সংক্রমণে এ পর্যন্ত ৯ জনের বেশি বাংলাদেশি করোনা আক্রান্তের সংবাদ পাওয়া গেছে।
করোনা সংক্রমণে স্বাস্থ্য নির্দেশনা মেনে চলতে ফ্রান্স সরকার কঠোর স্বাস্থ্য নির্দেশনা জারি করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় সমগ্র প্যারিসে মাস্ক পরিধান করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কর্মক্ষেত্রে ও গণপরিবহন সহ জনবহুল স্থানে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে মাস্ক পরিধান করা।