কোমলমতি মাদ্রাসা শিশুদের উপর প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে কওমি মাদ্রাসা শিক্ষকদের বলৎকারের ঘটনা। বলা যায় সমকামিতার এক আখড়া যেনো দেশের কওমি মাদ্রাসাগুলোতে।
ছাত্র বলৎকারের অভিযোগে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলায় কফিলউদ্দীন হাফেজিয়া মাদরাসার শিক্ষক হাফেজ আনোয়ারুল ইসলাম (৩৫) ও পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলা হেফাজতে ইসলামের সভাপতি প্রিন্সিপাল মাওলানা মুফতি মতিউর রহমান (৫০) কে বিকৃত যৌনাচারেন অভিযোগে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। অন্যদিকে, কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে মাদ্রাসা শিক্ষক মুফতী ইয়াকুব আলীকে ১১ বৎসরের এক ছাত্রকে বলৎকারের অভিযোগে পুলিশ খুঁজছে।
জানা যায়, সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলায় শিশুদের সাথে বিকৃত যৌনাচারের অভিযোগে কফিলউদ্দীন হাফেজিয়া মাদরাসার শিক্ষক হাফেজ আনোয়ারুল ইসলামকে আটক করেছে ডিবি পুলিশ। বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) ভোরে তাকে আটক করা হয়।
আটককৃত আনোয়ারুল ইসলাম, কালিগঞ্জ উপজেলার কালিকাপুর মোড়লপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল জব্বার মোড়লের ছেলে। তিনি উপজেলার কফিলউদ্দীন হাফেজিয়া মাদরাসার হেফজ বিভাগের শিক্ষক।
সাতক্ষীরা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াছিন আলম চৌধুরী জানান, অভিযুক্ত শিক্ষক আনোয়ারুল ইসলাম মাদরাসার উঠতি বয়সী শিশুদের সাথে বিকৃত যৌনাচার করতেন। হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে গ্রুপ চ্যাটিংয়ের মাধ্যমে বিকৃত যৌনাচারে লিপ্ত থাকতেন তিনি। তাছাড়া এসব ছবি ব্যবহার করে পর্নোগ্রাফি তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে আসছিলেন আনোয়ারুল।
ওসি আরও জানান, যৌনাচারের শিকার এসব উঠতি বয়সীদের বয়স ১২ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মাদরাসা শিক্ষক জানিয়েছে দুই ছাত্রের সাথে বিকৃত যৌনাচার করেছেন তিনি। দুপুর ১২টার দিকে ওই শিক্ষককে মামলা দিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
অপরদিকে, নিজের মাদ্রাসার এক ছাত্রকে বলাৎকার করার অভিযােগে পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলা হেফাজতে ইসলামের সভাপতি প্রিন্সিপাল মাওলানা মুফতি মতিউর রহমান (৫০)কে পুলিশ আটক করেছে।
ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিমান কুমার দাশ এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, বুধবার দুপুরে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানাে হয়েছে।
ওসি জানান, মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে তাকে আটক করা হয়। তিনি দারুল তালিম মাদ্রাসার প্রিন্সিপ্যাল ও কাচারী পাড়া জামে মসজিদের ইমাম। একইসাথে তিনি ঈশ্বরদী উপজেলা হেফাজতে ইসলামের সভাপতি বলে জানা গেছে।
থানা সূত্র জানায়, সােমবার রাত ১১টার দিকে দারুল তালিম মাদ্রাসার ছাত্র কাচারীপাড়া মহল্লার মজিবুর রহমানের ছেলে আব্দুর রাজ্জাক ওরফে রাজুকে বলাৎকার করেন। পরদিন মঙ্গলবার সকালে শিশুটি অসুস্থ হয়। এবং ঘটনাটি পরিবারসহ স্থানীয়দের জানায়। বিষয়টি চেপে যাওয়ার জন্য দিনভর নানা দেনদরবার শেষে অবশেষে তাকে স্থানীয়রা আটক করে মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে পুলিশের কাছে সােপর্দ করে। পুলিশ তাকে আটক করে বুধবার জেল হাজতে পাঠিয়েছে।
আটককৃত মুফতি মতিউর ঈশ্বরদী পৌর এলাকার পশ্চিম টেংরী মহল্লার মৃত বাদল মােল্লার ছেলে। এর আগেও তার বিরুদ্ধে একাধিক বলাৎকারের অভিযােগ রয়েছে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে। এ ব্যাপারে থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে।
এদিকে, কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে মাদ্রাসা শিক্ষকের হাতে বলাৎকারে শিকার ১১ বছরের এক শিশুর কাণ্ড দেখে সবাই হতবাক হয়ে গেছে।
জানা গেছে, বাবা-মায়ের চাপে পড়ে মাদ্রাসার গেটে হাজির হয় ১১ বছরের শিশুটি। কিন্তু ভেতরে না ঢুকে সেখানকার এক শিক্ষকের নাম ধরে গালাগাল করতে থাকে। এক পর্যায়ে মাদ্রাসার গেট থেকে সে দৌঁড়ে যায় থানার সামনে। সেখানে গিয়ে সে জানায় তার ওপর চলা অত্যাচারের কথা।
বুধবারের ঘটনায় বৃহস্পতিবার সকালে নির্যাতিত শিশুটির মা জানান, তার ছেলে উপজেলার বড়খারচর আদর্শ নূরানী হাফিজিয়া মাদ্রাসার তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। গত বৃহস্পতিবার ওই শিক্ষার্থী গায়ে জ্বর নিয়ে বাড়ি আসে। জ্বরের জন্য শিশুটিকে ওষুধ খাওয়ানো হয়। এরপর তাকে মাদ্রাসায় যেতে চাপাচাপি করা হলেও সে যেতে রাজি হয়নি। পরে বুধবার জোর করে শিশুটিকে বাড়ির পাশের ওই মাদ্রাসায় নেওয়া হলেও সে মাদ্রাসার ভেতরে ঢুকতে চায়নি। বরং গেটের সামনে দাঁড়িয়ে সে মাদ্রাসার মুহ্তামিম মুফতি ইয়াকুব আলীকে (৩৫) উদ্দেশ্য করে গালাগাল শুরু করে।
শিশুটির মা আরও জানান, এক পর্যায়ে তার ছেলে দৌড়ে মাদ্রাসার অদূরে থানার সামনে চলে যায়। পেছন পেছন মা ছুটে গেলে শিশুটি তাকে জানায়, এটাই তার বিচারের স্থান। থানায় বিষয়টি জানানোর পর শিশুটিকে কুলিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়।
এদিকে শিশুটি বলাৎকারের শিকার হয়েছে বলে আলামত পাওয়া যায় বলে জানায় কুলিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরা।
জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. নূর মোহাম্মদ রফিক জানান, শিশুটি তার কাছে বলাৎকারের বর্ণনা দিয়েছে। পরে পরীক্ষা করে তাকে বলাৎকারের আলামত মিলেছে।
নির্যাতনের শিকার শিশুটির মা ছেলের বরাত দিয়ে জানান, বাড়িতে আসার আগে ছেলেটিকে গত মঙ্গল ও বুধবার রাতে মুফতি ইয়াকুব আলী বলাৎকার করেন। এ ছাড়া ঘটনা প্রকাশ করলে শিশুটিকে তিনি মেরে ফেলার হুমকিও দেন।
কুলিয়ারচর থানার উপ-পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. শহিদুর রহমান জানান, নির্যাতিত শিশুটিকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য কিশোরগঞ্জে পাঠানো হচ্ছে। আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।