দৃশ্যমান হতে যাচ্ছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। বাস্তবতার চূড়ান্ত ধাপে আর মাত্র প্রয়োজন দুটি স্প্যান বসানো বাকি। আজ শুক্রবার দুপুর ১২টা ২০ মিনিটের দিকে বসানো হয়েছে ৩৯তম স্প্যান (২-ডি)। পদ্মা সেতুর মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে ১০ ও ১১ নম্বর পিয়ারের (খুঁটি) ওপর বসানো হয় স্প্যানটি। এরই সাথে দৃশ্যমান হলো সেতুর ৫ দশমিক ৮৫০ কিলোমিটার।
জানা যায়, ৩৮তম স্প্যানটি বসানোর মাত্র সাত (৭) দিনের মাথায় আজকে ৩৯তম স্প্যানটি বসানো হলো। আর চলতি নভেম্বর মাসে এনিয়ে সেতুতে মোট ৪টি স্প্যান বাসানোর কাজ সম্ভব হলো।
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ৩৯ নং স্প্যানটি বসানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেন পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী (মূলসেতু) দেওয়ান মো. আব্দুর কাদের। তিনি বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে ও কারিগরি জটিলতা না থাকলে স্প্যানটি শুক্রবার (আজ) বাসানো হবে।
উল্লেখ্য যে, ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে প্রথম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় পদ্মা সেতু। আজ তার ৩৯ তম স্প্যানটি বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হলো সেতুর ৫ দশমিক ৮৫০ কিলোমিটার।
এদিকে পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী (মূলসেতু) দেওয়ান মো. আব্দুর কাদের জানান, মাওয়া প্রান্তে পিয়ারে বাসানোর জন্য প্রস্তুতির কাজ সকাল থেকেই শুরু হয়। সম্পূর্ণ অনুকূল পরিবেশে ক্রেণে তোলা ও আনুষঙ্গিক কার্যক্রম সম্পন্ন হয়।
আজ শুক্রবার সকাল ৯টা এর মধ্যেই কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে ভাসমান ক্রেণ তিয়াইন-ই ১৫০মিটার দৈর্ঘ্যের ৩৭তম স্প্যানটি নিয়ে নির্ধারিত পিয়ারে উদ্যেশ্যে রওনা হয়। সম্পূর্ণ অনুকূল পরিবেশে মাঝ পদ্মায় দুই খুঁটির উপর স্প্যানটি বসানো সম্পন্ন হয়।
মূল সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী আরও জানান, “আগামী ৬ বা ৭ ডিসেম্বর ১১ ও ১২ নম্বর খুঁটিতে ৪০তম স্প্যান হবে। পরবর্তী স্প্যান দুটি মাওয়া কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে প্রস্তুত আছে।”
অন্যদিকে, সেতুতে রেলে লাইনের জন্য প্রয়োজন হবে ২ হাজার ৯১৭টি রোডওয়ে স্ল্যাব। এর মধ্যে গত ৩১ অক্টোবরের হিসাব অনুযায়ী ১ হাজার ১৬৫টির বেশি রোড স্ল্যাব বসানো হয়েছে। এ ছাড়া ২ হাজার ৯৫৯টি রেলওয়ে স্ল্যাব বসানো হবে। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত বসানো হয়েছে ১ হাজার ৬৪৬টি।
জানা যায় যে, প্রায় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৯ লক্ষ টাকার প্রকল্পের কাজটির অগ্রগতি ৯০.৫০ ভাগ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৮৮.০৩ ভাগ।
মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি)।
নদীশাসন কাজের বাস্তব অগ্রগতি ৭৫ ভাগ। নদীশাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন।
৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা।
কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে পদ্মা সেতুর কাঠামো। সেতুর ওপরের অংশে যানবাহন ও নিচ দিয়ে চলবে ট্রেন।
এ বছরের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ২৩৭৯৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা। সংশোধিত তারিখ অনুসারে ২০২১ সালের জুন মাসে সেতুর সব ধরনের কাজ শেষ করার কথা রয়েছে।