মো. সুজন মোল্লা, বানারীপাড়া
বরিশালের বানারীপাড়ায় স্ত্রীর পায়ের রগ কেটে দিয়েছে স্বামী। ৩ অক্টোবর শনিবার সকাল ৯টার দিকে বানারীপাড়া পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের দুলাল বালীর বাসার সামনের রাস্তার ওপরে বসে মধ্যযুগীয় সময়ের মতো এ বর্বরতা ঘটায় স্বামী মো. রাসেল।
স্ত্রী হ্যাপী আক্তার ও স্বামী রাসেলের বাড়ি বানারীপাড়া উপজেলার সৈয়দকাঠি ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের হাওড়া বাড়ি এলাকায়।
মো. রাজ্জাক হাওলাদারের মেয়ে হ্যাপী ও মো. হাসান বালীর ছেলে রাসেলের প্রায় ১১ বছর আগে পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয়। দাম্পত্য জীবনে রাতুল (৯) ও রিমি নামের সাড়ে ৩ বছরের দুটি সন্তান রয়েছে। ভালই চলছিলো তাদের সাংসারিক জীবন। তবে ১১টি বছর পেরিয়ে যাবার পরে ৩ লাখ টাকা যৌতুক দাবী করে স্বামী রাসেল। এমনটাই জানাগেলো স্ত্রী হ্যাপীর পরিবার থেকে। স্বর্ণের গহনা বন্ধক রেখে নাকি স্বামীর হাতে ৩৬ হাজার টাকাও দেয়া হয়েছিলো। তার পরেও হ্যাপীকে নাকি মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করতো স্বামী রাসেল।
এর মধ্যেই হ্যাপীর গাইনি সমস্যা দেখা দেয়। বার বার স্বামীকে ডাক্তার দেখাতে বললেও রাসেল স্ত্রীকে চিকিৎসা করাতে অপরগতা প্রকাশ করে। তবে অনেক অনুরোধের পরে ২ অক্টোবর শুক্রবার সকালে হ্যাপীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এসে কেবলমাত্র আল্ট্রাসনোগ্রাম করিয়ে বাড়িতে নিয়ে যায় বলে হ্যাপীর পরিবার দাবী করে।
শুক্রবার রাতে হ্যাপীর গাইনি সমস্যা প্রকট ভাবে দেখা দিলে স্বামী রাসেলকে তাকে উন্নত চিকিৎসা করাতে আবারও অনুরোধ করেণ । পরে বাবার বাড়ি থেকে টাকা এনে স্ত্রীকে ডাক্তার দেখাতে বলে রাসেল।
স্বামীর কাছ থেকে কোন প্রকার সাড়া না পেয়ে বাধ্য হয়ে ৩ অক্টোবর শনিবার সকালে সাড়ে ৩ বছরের শিশু সন্তান রাতুলকে সাথে নিয়ে বানারীপাড়ায় ডাক্তার দেখাতে আসেন অসুস্থ হ্যাপী।
হ্যাপীর পিছনে পিছনে আসেন তার স্বামী রাসেল ও শ্বশুর হাসানবালী। পরে সকাল ৯টার দিকে বানারীপাড়া পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের হাইস্কুল সংলগ্ন দুলাল বালীর বাসার সামনের রাস্তার ওপরে হ্যাপীর রিক্সার গতিরোধ করেন স্বামী রাসেল।
রিক্সা থেকে তাকে টেনে হিচরে নামিয়ে মারধর করে স্বামী ও শ্বশুর। এর এক পর্যায়ে হ্যাপী রাস্তার ওপরে পরে গেলে শ্বশুর তাকে ধরে রাখে আর স্বামী রাসেলের সাথে থাকা দাড়ালো দেশিয় ছুরি দিয়ে সে স্ত্রীর বা-পায়ের রগ কেটে দেয়। তবে কি স্ত্রীকে হত্যার জন্যই রাসেল সাথে করে ছুরি নিয়ে এসেছিলো।
ওই সময় হ্যাপী ও শিশু সন্তান রাতুলের আত্মচিৎকারে পথচারিরা এগিয়ে আসার আগেই ঘাতকরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
পরে পথচারিরা হ্যাপীকে উদ্ধার করে বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।
সেখানে তার প্রাথমিক চিকিৎসার পরে কর্তব্যরত ডাত্তার উন্নত চিকিৎসার জন্য হ্যাপীকে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন।
এ বিষয়ে স্বামী রাসেল জানায়, তার স্ত্রীর পায়ের রগ সে একাই কর্তন করেছে। সে সময়ে তার পিতা সঙ্গে ছিলনা। স্ত্রীর একাধিক প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে এবং সে তার সাথে থাকতে চাচ্ছিল না। যাতে করে তাকে ছেড়ে অন্যত্র ঘর করতে না পারে তার জন্যই সে স্ত্রীর পায়ের রগ কেটে দিয়েছে। সে আরও জানায় শনিবার সকালে তার স্ত্রী হ্যাপী কাপড়-চোপর নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছিল। ডাক্তার দেখাতে আসেনি। কেননা আগের দিন তাকে ডাক্তার দেখানো হয়েছিল।
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল অপরাজিতবাংলা ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন oporajitobangla24@yahoo.com ঠিকানায়।