আজ সকাল ১১-০০টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ পাট ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবন্দের বক্তব্য থেকে বিজেএমসির কাছে ২৬৫ কোটি টাকা পাওনা সংক্রান্ত তথ্য সমূহ হুবুহু তুলে ধরা হলো।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকলগুলোর কাছে বিগত ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত পাট সরবরাহ বাবদ দেশের প্রান্তিক চাষী ও পাট ব্যবসায়ীদের প্রায় ২৬৫ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। অথচ সেই টাকা পরিশোধের ব্যাপারে দুঃখজনকভাবে উদাসীন হয়ে আছে বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশন (বিজেএমসি)। পরিণতিতে, ব্যবসা হারিয়ে পুঁজিশূন্য ও সর্বস্বান্ত হয়ে পথে বসার উপক্রম ঘটেছে এই মানুষগুলো ও তাদের পরিবারের। মরিয়া হয়ে তাই দেশের ব্যবসায়ী নেতারা এর আশু প্রতিকার ও পাওনা টাকা আদায়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে গত ২০ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি পেশ করেন।
পাট ব্যবসায়ী নেতারা জানান, সরকার সম্প্রতি দেশের রাষ্ট্রায়ত্ব ২৫টি পাটকল বন্ধ ঘোষণা করেছেন। এই সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে সরকারের মন্ত্রী পর্যায়ে শ্রমিক নেতাসহ বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করা হলেও পাট ব্যবসায়ীদের সাথে কোনোরূপ আলোচনা করা হয়নি। অথচ দেশের সুসময় ও দুঃসময়ে বিজেএমসির পাটকলগুলোতে নিয়মিত পাট সরবরাহ করে তারাই কিন্তু মিলের চাকা সচল রেখেছেন।
পাট সরবরাহকারী এসব প্রন্তিক চাষী ও ব্যবসায়ীরা অধিকাংশই বর্তমানে বিভিন্ন ব্যাংকে ঋণগ্রস্ত। ব্যবসা বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি ব্যাংক ঋণ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দেনার চাপে তারা আজ দিশেহারা। উল্লেখ্য, ব্যবসায়ীদের সরবরাহকৃত পাট থেকে উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করেই বিজেএমসি কর্মকর্তা-কর্মচারির বেতন পরিশোধসহ শ্রমিকের মঞ্জুরি ব্যয় মোটনো হলেও ব্যবসায়ীদের কাছে দেনা পরিশোধের বিষয়ে দুঃখজনকভাবে উদাসীন হয়ে আছে বিজেএমসি।
জাতীয় সংসদে শাজাহান খান এমপি প্রশ্নোত্তর পর্বে মাননীয় পাটমন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছিলেন, পাট ব্যবসায়ীদের পাওনা টাকা কবে পরিশোধ হবে। উত্তরে পাটমন্ত্রী বলেন, পাটকলগুলোতে পাট পণ্য মজুত রয়েছে। সেগুলি বিক্রি করে ব্যবসায়ীদের টাকা পরিশোধ করা হবে। কিছুদিন আগেই ৩৩২ কোটি টাকায় এসব পাটপণ্য বিক্রিও করেছে বিজেএমসি, যা দিয়ে পাট ব্যবসায়ীদের এই পাওনা টাকা পরিশোধ করা সম্ভব। অথচ এই পাওনা পরিশোধের বিষয়ে বিজেএমসির কাছ থেকে আজ অবধি কোনো ধরনের আশ্বাস পাওয়া যায়নি।
ব্যবসায়ী নেতারা দুঃখ করে বলেন, চিরকাল তারা দেশের পাটকলে পাট সরবরাহকারী হিসেবে এসব কল চালু রাখার মূল ইন্ধন জুগিয়ে এলেও এ সংক্রান্ত নীতিমালায় ব্যবসায়ীদের কাছে কর্তৃপক্ষের দেনার ব্যপারেই সুনির্দিষ্ট কোনো দিক-নির্দেশনা রাখা হয়নি। আজ বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ আক্রান্ত দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা করার জন্য সরকার যখন বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীদের একের পর এক প্রণোদনা ঘোষণা করছেন, আমরা পাট ব্যবসায়ীরা তখন বিজেএমসির কাছে শুধু পাওনা টাকাটুকুই ফেরত না পাওয়ার পরিণতিতে ব্যবসাহারা, পুঁজিহারা ও সর্বস্বান্ত হয়ে পথে বসতে চলেছি।
এরই ধারাবাহিকতায় জাতীয় পর্যায়ে সমন্বয়ের মাধ্যমে আগামী ১৮ আগস্ট, মঙ্গলবার, সকাল ১০-০০টায় রাজধানীর মতিঝিলে বিজেএমসি প্রধান কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচিসহ, প্রয়োজনে, আরো কঠোর কর্মসূচি হাতে নেবেন পাট ব্যবসায়ীরা।
সবশেষে, বিজেএমসির কাছে পাওনা টাকা আদায়ের মাধ্যমে দেশের সংকটাপন্ন প্রান্তিক পাট চাষী ও ব্যবসায়ীদের বাঁচাতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সহৃদয় হস্তক্ষেপ ও আশু নির্দেশনা চাওয়ার পাশাপাশি, ব্যবসায়ী নেতারা আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার পথে বাংলার সোনালি আঁশ পাটের সুরক্ষার কোনো বিকল্প নেই। এ লক্ষ্যে দেশে পাটের গৌরবময় ঐতিহ্য আবার ফিরিয়ে আনতে বদ্ধপরিকর বর্তমান সরকারের সাথে সব সময়ই সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়ে যাবেন দেশের পাট ব্যবসায়ীরা।
সূত্রঃ মোঃ সিয়াম, কার্যকরী সদস্য, বাংলাদেশ পাট ব্যবসায়ী সমিতি।
সংবাদ সম্মেলনে সমিতির আহ্বায়ক শামীম আহমেদ মোড়ল এবং কার্যকরী সদস্য মো. সিয়াম হোসেনসহ অন্যান্য নেতারা বক্তব্য রাখেন। এদের মধ্যে ছিলেন মো. টিপু সুলতান, আবদুল হাই, আলহাজ¦ নজরুল ইসলাম, আলহাজ¦ মোস্তাক ভুঁইয়া, আলহাজ¦ এহতেসাম খান, হাসান আলি, মুজিব হোসেন চৌধুরী তুরান, নাদেম দত্ত, মধুসূদন দে, মো. সোহেল মিয়া এবং শামিনুল ইসলাম শাওন।