প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ বাছাইয়ের তৃতীয় রাউন্ডে উঠতে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে জয়ের বিকল্প ছিল না ভারতের। কিন্তু প্রতিপক্ষ কাতার র্যাঙ্কিং কিংবা শক্তির বিচারে অনেকটাই এগিয়ে। ম্যাচটাও আবার কাতারের মাটিতে। তার ওপর গত সপ্তাহে অবসর নিয়েছেন অনেকের চোখে ভারতের ইতিহাসে সেরা ফুটবলার সুনীল ছেত্রী।
এমন প্রতিকূল অবস্থাতেও ইতিহাস গড়ার দিকেই ছিল ভারত। কাতার দ্বিতীয় সারির দল নামিয়েছে, তাদের বিপক্ষে ম্যাচের ৭০ মিনিট পর্যন্ত ১-০ গোলে এগিয়ে ছিল ইগর স্তিমাচের দল। কিন্তু ম্যাচের ৭৩ মিনিটে বিতর্কিত গোলে সমতায় ফেরে কাতার। শেষদিকে আরেকটি গোল দিয়ে ভারতের স্বপ্ন ভেঙে ২-১ গোলের জয় তুলে নিয়েছে ২০২২ বিশ্বকাপের আয়োজক দেশটি।
গতকাল ম্যাচজুড়ে আক্রমণ-বলের দখল সব জায়গাতেই এগিয়ে ছিল কাতার। স্তিমাচের দল খেলেছে প্রতিআক্রমণ নির্ভর ফুটবল। ৩৭ মিনিটে কাউন্টার অ্যাটাকে গোল করে ভারতকে এগিয়ে দেন লালিয়ানজুয়ালা সাংতে। ১-০ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় ভারত।
ম্যাচে ফিরতে মরিয়া কাতার দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণের ধার বাড়িয়ে যায়। এরই ধারাবাহিকতায় ম্যাচের ৭৩ মিনিটে পেয়ে যায় কাঙ্ক্ষিত গোল। ইউসুফ আইমেনের করা গোলে সমতায় ফেরে কাতার। কিন্তু এ গোল নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক। ভারতের দাবি, বল আগেই আউট হয়ে গিয়েছিল, সেটিকে টেনে এনে গোল করেছে কাতার।
ভিডিও রিপ্লে দেখেও সাদা চোখে তেমনই মনে হয়েছে। ভারত বক্সের বাইরে ফ্রি কিক পেয়েছিল কাতার, সেখান থেকে ক্রসে দুর্বল হেড নিয়েছিলেন আইমেন। সেটি ঠিকঠাক নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেননি ভারতের গোলকিপার গুরপ্রীত সিং সান্ধু। ভারত গোলকিপারের গায়ে লেগে বল গোল পোস্ট ঘেঁষে লাইন অতিক্রম করে। অর্থাৎ কর্নার পাওয়ার কথা কাতারের। কিন্তু তখনই গোলমাল বেঁধে গেল!
বল গোললাইন পেরিয়ে ইঞ্চিখানেকও যায়নি তখনো। ভারতের গোলকিপার আর ডিফেন্ডাররা বল আউট ভেবে ছেড়ে দিয়েছেন। সেই সুযোগে লাইনের বাইরে থেকে ব্যাকহিলে কাটব্যাক করেন আল হুসাইন। সেটাতে আলতো করে পা লাগিয়ে গোল করেন আইমেন। এ সময় ভারতের ফুটবলাররা রেফারিকে ঘিরে ধরে প্রতিবাদ জানালেও কাজ হয়নি।
মাঠের রেফারির অবশ্য বল বাইরে গেছে কি না, সেটা বোঝার কথা নয়। তাঁর সামনে তখন বক্সে দুই দলের খেলোয়াড়ের ভিড় ছিল। সহকারি রেফারি ছিলেন বল গোলপোস্টের যে পাশের লাইন অতিক্রম করেছে, তার উল্টো পাশে। দূর থেকে তাঁরও ওই ইঞ্চিখানেকের ব্যবধান বুঝতে পারার কথা নয়।
ম্যাচ সমতায় ফেরার পর আর প্রতিরোধ গড়তে পারেনি ভারত। উল্টো ৮৫ মিনিটে দ্বিতীয় গোল খেয়ে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিশ্চিত হয় স্তিমাচের শিষ্যদের। তবে এমন বিদায় মানতে পারছেন না ভারতের কোচ। ম্যাচ শেষে বলেছেন, ‘এভাবে প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে যাওয়াটা ভীষণ হতাশার। ভুলে গেলে চলবে না, আমাদের দল ওদের মতো অভিজ্ঞ নয়। এরপরও গোটা ম্যাচেই আমরা দাপটে ফুটবল খেলেছি, ছেলেরা ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের দখলে রেখেছিল।’
এমন বিতর্কিত বিষয়গুলো সামনে যাতে ফুটবলে না ঘটে, বাড়তি নজর দেওয়ার জন্য ফিফার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন স্তিমাচ, ‘আমাদের দলের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। আমরা প্রমাণ করে দিয়েছি আমরা সব ধরনের ফর্মেশনে খেলতে পারি, ৩-৪-৩, ৩-২-৩-২। কিন্তু ফিফার উচিত বিষয়গুলো দেখা। ওদের দায়িত্ব খেলাকে রক্ষা করা। আমি ফিফাকে দোষ দিচ্ছি না, কিন্তু এত ভালো খেলার পরেও যদি এভাবে ছিটকে যেতে হয়, তাহলে সেটা ভীষণ যন্ত্রণার।’