ঢাকাসোমবার , ১২ অক্টোবর ২০২০
  1. অনান্য
  2. অপরাধ ও আইন
  3. অভিবাসীদের নির্মম জীবন
  4. অর্থনীতি
  5. আত্মসাৎ
  6. আন্তর্জাতিক
  7. ইতিহাস
  8. উদ্যোক্তা
  9. এশিয়া
  10. কৃষি
  11. ক্যাম্পাস
  12. খেলাধুলা
  13. গণমাধ্যম
  14. গল্প ক‌বিতা
  15. চট্টগ্রাম বিভাগ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ভাসমান জীবনের অধিকারী মা ও মেয়ে মিজানুর রহমান মিজান।

মিজানুর রহমান মিজান।
অক্টোবর ১২, ২০২০ ৪:৫৯ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলেই মা ও মেয়ে বাজারের যে দোকানটার সাটার বন্ধ থাকে, সেটার বারান্দায় আশ্রয় নেয় তারা। শীত, বর্ষা, ঝড়-বৃষ্টিতে বারমাসই এভাবে চলে তাদের। স্থানীয় মানুষের দয়া পরবসে যে যা দেয় তাতে আহার মুখে উঠে দুজনের। মানুষ নামের অনেকের অবহেলা অবজ্ঞায় এদুয়ার ওদুয়ারে, এগলি ওগলিতে তাড়া খেয়ে যুগ পার হয়ে যাচ্ছে। তাদের স্বজন কিংবা নিকট আত্মীয় কেউ আছে কি না জানা যায় না। মা যিনি তার মুখের ভাষা ও কথা স্পষ্ট নয়, তবে মেয়েটি এই স্থানে জন্মানোয় স্থানীয় কথা বার্তা শিখেছে বিধায় তার কথা বার্তা স্পষ্ট। সে যা বলে বুঝা যায়।

সিলেট জেলার বিশ্বনাথ উপজেলার ১নং লামাকাজী ইউনিয়নের লামাকাজি বাজারে ঘর বাড়ী বিহীন শিউলি ও শিউলির মা’র কথা। লামাকাজি বাজারে তাদের দেখছি প্রায় ১৬-১৭ বছর ধরে। আজকের কিশোরী শিউলিকে পেটে নিয়ে এসেছিল তার মা। এখন শিউলির বয়স আনুমানিক ১৫/১৬ বছর হবে। শিউলির মা বড্ড বেপরোয়া এবং সংযমী। সে তার বাড়ি-ঘরের ঠিকানা এতো বছরেও কাউকে বলেনি। কোথাও থেকে এসেছে তাও বলে না কাউকে। কপাল ভাঁজ করে নিজে নিজেকে নিয়ে থাকে। কেবল হু-হা বা শিউলির সাথে নন-সিলেটি ভাষায় কি সব বলে ! দেখলে মনে হয় কোন আদিবাসী অথবা পার্শ্ববর্তী কোন দেশ থেকে ভাগ্য তাকে এখানে নিয়ে এসেছে। গায়ে রং উজ্জ্বল ফর্সা। বয়স তার ৩০/৩২এর উপরে। লামাকাজিতে প্রথম যখন আসে তখন ২০এর মত বয়স ছিল বলে ধারনা করা হয়।কারোর কাছে ভিক্ষাবৃত্তির ভাবে দু-চার টাকাও কখনো চাইতে দেখা যায়নি। প্রথম প্রথম কাজকর্ম জানতো না এবং অভ্যস্ত ছিলনা। এরপর বাজারের রেস্টুরেন্ট বা কারোর বাসন-কোসন ধুঁয়ে কেবল পেট বাঁচানোর দায় কাঁধে নেয় একবেলা খাবারের আশায়। গুণ ছাড়া কোনও মানুষ নেই, তেমনি বিশেষ একটি গুণে গুনান্বিত শিউলির মা। সে বসে বসে ঘুমায় প্রায় মাঝরাতের শেষ অবধি। আর হাতের পাখাটি দিয়ে মেয়েকে বাতাস করতে থাকে, হাত যেন তার অটোমেটিক ফ্যান।

শিউলি ঘুমায় মায়ের কোলে। জন্মের পর কত বছর হয়ে গেল শিউলির, কিন্তু সে আজও জানে না তার বাড়িঘর কোথায়, তার আত্মীয় স্বজন কে, কে তার জন্মদাতা পিতা? বছর যতই হোক, তবু তার মা ফিরে যায় না, তাকেও কোল থেকে ছেড়ে রাখে না।

তাদের ঘর নেই, দুয়ার নেই। সহানুভুতি দেখানোর মত মানুষ তাদের পাশে নেই, অথচ সরকার ছিন্নমূল মানুষের আশ্রয় ও খাদ্য নিরাপত্তার জন্য কতো প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।

সরকার বহু ভিটে-মাটিহীন মানুষদের ঘর বাড়ী বানিয়ে দিচ্ছে কিন্তু শিউলির মায়ের জন্য কেউ কিছু করে না। ঘর জোটে না, চিকিৎসার বন্দোবস্ত হয়না। মশার সাথে সখ্যতা আর ঝড় ঝাপটা মাথায় নিয়ে জীবন কাটাতে হচ্ছে। এরকম হাজারো শিউলি পথে-প্রান্তরে, হাট-বাজারে মানবেতর জীবন যাপন করছে। তাদের দেখ ভালো করার দায়িত্ব এসমাজ এড়াতে পারে না। শিউলির মতো যাদের মাথা গোঁজার টাই নেই এদেরকে পেছনে ফেলে সোনার বাংলার স্বার্থকতা বোধহয় আদৌ হবে না । বিষয়টি গল্পের মত হলেও এটি একটি বাস্তব ঘটনা।

স্থানীয় এলাকার এমন কোন পুরুষ নেই যারা এই দুটি মানুষ, মা-মেয়েকে নিয়ে কৌতুহলী হন নাই। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ইউপি চেয়ারম্যান, ওয়ার্ডের মেম্বারগণ এদের প্রতি একটু সদয় হলে কিংবা উপজেলা প্রশাসন তাদের দেখভালোর দায়িত্ব নিলে মানুষের মানবিকতা রক্ষা পেত। বিষয়টি সরজমিনে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্তা নেওয়া জরুরী বলে অনুভূত।

এব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মমতাময়ী, জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি বিনীত আবেদন জানাচ্ছি যে, আপনার সোনার বাংলায় শিউলি ও শিউলির মায়ের মতো আরো যারা আছে তাদেরকে একটা ঘর (ভিটে) উপহার দেওয়া হোক তাদের দেখাশোনা করার দায়িত্ব নেওয়া হোক ।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল অপরাজিতবাংলা ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন oporajitobangla24@yahoo.com ঠিকানায়।