সরকারের দিন যত যাচ্ছে ততই বাড়ছে দলের আভ্যন্তরীন কোন্দল। অর্থ ও পেশীশক্তিতে তৈরী হচ্ছে নতুন নতুন এলাকাভিত্তিক নেতৃত্ব। বহু গ্রুপ রাজনীতির কালো ছায়ায় দেশের সবচেয়ে প্রবীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ।
প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও আওয়ামী লীগের প্রকাশ্য অন্তঃকলহের খবর পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় ক্ষেত্রেই এই অন্তঃকলহ সহিংসতায় রূপ নিচ্ছে। দুই মাসে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায়ে অন্তত এক ডজন নেতা-কর্মী নিহত হয়েছেন। কোথাও সড়ক অবরোধ হয়েছে, কোথাও সহিংসতায় এলাকা হয়েছে সন্তস্ত্র। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলছেন, কমিটি গঠন এবং এলাকায় কর্তৃত্ব নিয়েই এসব সহিংসতার ঘটনা ঘটছে।
গত ১ আগস্ট টাঙ্গাইলের গোপালপুরে খুন হন আওয়ামী লীগ নেতা নিক্সন। নিক্সন ছিলেন গোপালপুর উপজেলার হাদিরা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক।
৫ আগস্ট হবিগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতা কামাল মিয়া নিহত হন। তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ওই হত্যার পেছনে আওয়ামী লীগেরই এক নেতা যিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, তার হাত আছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
২০ আগস্ট খুলনায় নিহত হন ছাত্রলীগ কর্মী নিয়াজ। ৩০ আগস্ট কুষ্টিয়ায় হত্যা করা হয় আওয়ামী লীগ নেতা হাসিনুর রহমানকে। এছাড়াও সিরাজগঞ্জ, নাটোর, বান্দরবন, নড়াইল, ফরিদপুর, চট্টগ্রাম, চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা খুন হচ্ছেন। কেন এই ঘটনা হঠাৎ করে বেড়েছে, এ ব্যাপারে অনুসন্ধান করে কিছু অভিন্ন কারণ পাওয়া গেছে। এগুলো হলো-
এলাকায় আধিপত্য: এসব অন্তঃকলহ এবং হত্যার প্রধান কারণ হলো এলাকায় আধিপত্য বিস্তার। দেশজুড়ে আওয়ামী লীগের উপদলীয় কোন্দলের নৃশংস প্রকাশ এসব হত্যা ও সন্ত্রাস।
কমিটি: সারাদেশে আওয়ামী লীগের কমিটি গঠনের কাজ চলছে। এই কমিটিতে থাকা না থাকা নিয়ে আওয়ামী লীগের তৃণমুলে এখন উত্তেজনা চরমে। অনেক স্থানেই এই উত্তেজনার সহিংস বহিঃপ্রকাশ ঘটছে।
অনুপ্রবেশকারী বনাম মূল আওয়ামী লীগ: অনেক স্থানেই এখন আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে সরব হচ্ছে দলের ত্যাগী, পরিক্ষীত নেতা-কর্মীরা। এক্ষেত্রে অনুপ্রবেশকারীরা কোথাও কোথাও সহিংস ভাবে এর জবাব দিচ্ছেন।
নেতৃত্বের শূন্যতা: সিরাজগঞ্জে মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুর পর ফরিদপুরে ইঞ্জিনিয়ার মোশারফের স্বেচ্ছা নির্বাসনের পর আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ে শূণ্যতা তৈরি হয়। ওই শূন্যতার কারণে অনেক ক্ষেত্রে সহিংসতার ঘটনা ঘটছে।
বিএনপি-জামাত: কোথাও কোথাও বিএনপি-জামাত কিংবা অন্য রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ প্রতিশোধের অংশ হিসেবে অতর্কিত হামলা করছে আওয়ামী লীগের নেতাদের ওপর।
তবে আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতাই মনে করেন এসব ঘটনাকে আর প্রশ্রয় দেয়া উচিত নয়। এখনই এসব অন্তর্ঘাত বন্ধ করা প্রয়োজন।
এছাড়াও ইদানিং কালের ছাত্রলীগের কিছু পাশবিক ঘটনা দলটিকে আরও নেতিবাচক ভাবে কুক্ষিগত করছে। তৃনমুল পর্যায়ের ত্যাগী নেতারা হচ্ছেন নিষ্পেষিত। দলের নীচর সারির নেতাদের আর্থিক এবং পেশী শক্তির কারনে প্রবীন সৎ নেতারা হচ্ছেন নির্যাতিত, নিষ্পেষিত। যদি দলের শীর্ষ নিতীনির্ধারকরা অতি সত্বর হস্তক্ষেপ না করেন তা হলে দলটি আরও বিপদজনক অবস্থায় নিপতিত হবে।