জাতীর জনক বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকীতে সরাদেশে যখন ফলজ বৃক্ষরোপন কর্মসূচী পালন করা হচ্ছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন বৃক্ষরোপন কর্মকান্ডকে সফল করার জন্য সারাদেশে সবাইকে উৎসাহিত করে যাচ্ছেন ঠিক তখনই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে আর প্রধানমন্ত্রীর আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ সকাল ১০ টার দিকে বিনা নোটিশে বন বিভাগের সহকারী কমিশনার জামাল হোসেন তালুকদারের নেতৃত্বে বাসন্তী রেমা নামক এক হতদরিদ্র আদিবাসী মহিলার ৫০ শতাংশ জমির সকল কলা গাছ কেটে ফেলে। হত্যা করা হয় বাসন্তী রেমার জীবিকার একমাত্র অবলম্বন।
ক্ষুদ্র দরিদ্র আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সাথে ঘটে যাচ্ছে একের পর এক ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড। সাম্প্রতিক বাসন্তী রেমার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার আগে গত ৫ সেপ্টেম্বর রাতে বিষ প্রয়োগ করে নষ্ট করে ফেলা হয়েছিলো নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলার উত্তর চকবেনী গ্রামের আদিবাসীদের রোপনকৃত ৭ বিঘা রোপাধান। সেসময় জাতীয় আদিবাসী পরিষদ ও বাসদ জেলা নেতৃবৃন্দ এলাকা পরিদর্শন করেন এবং স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত আদিবাসীদের সাথে কথা বলেছেন। তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের ক্ষতিপূরণ ও অপরাধীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবি করেছিলেন।
কিন্তু এবার সরাসরি সন্ত্রাসী কর্মকান্ডটি করেন স্বয়ং বন বিভাগের সহকারী কমিশনার জামাল হোসেন তালুকদার।
উল্লেখ্য যে, টাঙ্গাইলের মধুপুরের ১১ নং শোলাকুড়ী ইউনিয়নের পেগামারী গ্রামের সরকারী খাস জমিতে আদিবাসীরা বংশপরম্পরায় বসবাস ও চাষাবাদ করে আসছেন। বাসন্তী রেমাও তাঁর ৫০ শতাংশ আবাদি জমিটিতে কলা চাষ করেছিলেন। ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ সকাল ১০ টার দিকে বিনা নোটিশে বন বিভাগের সহকারী কমিশনার জামাল হোসেন তালুকদারের নেতৃত্বে বাসন্তী রেমার ওই জমির সকল কলা গাছ কেটে ফেলা হয়। যার আবাদি মূল্য প্রায় ৩ লক্ষ টাকা।
সরজমিনে পরিস্থিতি অবলোকনে জানা যায়, কোন ধরনের নোটিশ ছাড়াই বন বিভাগের কর্মকর্তা তার লোকজন নিয়ে জমির সব কলাগাছ কেটে ফেলে। বনকর্মকর্তা জামাল হোসেন তালুকদারের আকৎষিক কর্মকান্ডে হতবিহম্বল হয়ে পরে বাসন্তী রেমা।
উপস্থিত প্রদক্ষদর্শীরা জানান, বনকর্মকর্তা জামাল হোসেন তালুকদার কারো কোন অনুরোধই রাখেন নি। তারা জানান, আদিবাসীরা অসহায় ও দুর্বল হওয়ার কারনে তাদের কোন কথাই বন কর্মকর্তারা শুনেননি।
এদিকে স্থানীয় রাজনৈতিক কর্মীরা বলেন, বঙ্গবন্ধুর সংগঠন কৃষক লীগ নেতারা এখন কোথায়? এমন ঘটনায় তাদের কোন কর্মকান্ড এযাবৎ পর্যন্ত কারো চোখে পরে নাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন স্থানীয় নেতা বলেন, এ ধরনের অন্যায় কর্মকান্ডে যদি আওয়ামী লীগ-কৃষক লীগ সংগঠন বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ বাস্তবায়ন না করে তাহলে এসব নেতা কর্মীদের কোন দরকার নেই। তারা শুধু এলাকার ধান্ধ্যা ফিকিরে থাকে সামাজিক কোন কর্মকান্ডে তাদের পাওয়া যায় না।
সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, টাঙ্গাইলের মধুপুরের ১১ নং শোলাকুড়ী ইউনিয়নের পেগামারী গ্রামের এইসব জমিতে আদিবাসীরা বংশপরম্পরায় বসবাস ও চাষাবাদ করে আসছেন। সিমাও রাও নামে একজন বর্ষীয়ান আদিবাসী বলেন, “কলাগাছগুলো তো আর কাঠ গাছ না যে দীর্ঘ সময় ধরে এগাছগুলো থাকবে। বছর দুইয়েকেরই তো বিষয় ছিলো। বছরের পর বছর তো এভাবেই আদিবাসীরা চাষাবাদ করে আসতেছে, সরকারের কেউ তো কখনো কিছু বলেন নাই। তারা যদি আগে থেকে বলতেন তাহলে না হয় কথা ছিলো। গরীব এ মহিলা এখন কি করবে? ঋণ নিয়ে এ জমিতে গাছগুলো লাগিয়ে ছিলো, এখন কিভাবে চলবে তার সংসার?”
এদিকে বাসন্তী রেমাকে সহযোগীতার জন্য বেশ কিছু সামজিক সেবামূলক ব্যাক্তিরা এগিয়ে এসেছেন। এগিয়ে এসেছেন প্রবাসীরাও। ইতিমধ্যে আর্থিক ভাবে বাসন্তী রেমাকে সহযোগীতা করেছেন এবং করছেন। কেউ কেউ তাকে বাজার করে দিচ্ছেন।
স্থানীয়রা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে এর দৃষ্টান্ত বিচার চেয়েছেন। তারা বন বিভাগের সহকারী কমিশনার জামাল হোসেন তালুকদারের শাস্তি দাবী করেছেন।
অনেকে ক্ষোভের সাথে বলেন, এ সব বনবিভাগের কর্মকর্তারা বছরের পর বছর সরকারী গাছ কেটে বন উজার করে ফেলছে, তখন কেউ তাদের কিছু বলার নেই। এদের সাথে আরও আছে স্থানীয় ধান্ধাবাজ নেতারা।”