মাদকের কড়াল গ্রাসে পর্যদুস্থ সমাজ। কোন ভাবেই নিয়ন্ত্রন করা যাচ্ছে না এ মরন নেশাকে। অনেক ক্ষেত্রেই আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর স্বদিচ্ছা থাকলেও প্রভাবশালী কিংবা রাজনৈতিক কারনে একে নিয়ন্ত্রন অনেকটাই কঠিন হয়ে পড়েছে।
চট্টগ্রাম-ঢাকা বা বাংলাদেশের যেকোন জেলা থেকে চট্টগ্রামে প্রবেশের আগে ফেনী একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। ফেনী মহিপালের উপর দিয়েই ঢাকা~চট্টগ্রামের আসা যাওয়া। এ ফেনীতে এখন চলছে অবাধে মাদক ব্যবসা।
মদ, গাঁজা, ইয়াবা ও ফেনসিডিল সহ সকল শ্রেণীর মাদকে সয়লাব এখন ফেনী শহরের বিভিন্ন স্পট।
ফেনী পৌরসভা সংলগ্ন নির্মাণাধীন মার্কেট এর স্থান এখন মাদক ব্যবসা ও মাদক সেবীদের জন্য অবাধ বিচরনের স্থান। এমন কোন মাদক নেই এখানে পাওয়া যায় না। এ নির্মাণাধীন মার্কেটের পিছনে চলছে দিনরাত লাগামহীন মাদকের কারবার।
প্রায়ই এ স্থানে চলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এমনকি ভ্রাম্যমান আদালতের বারবার অভিযানেও থামানো যাচ্ছে না মাদক কেনা বেচা।
দিনে রাতে প্রকাশ্যে মাদকসেবীদের বিচরনে অনেকটা জিম্মি হয়ে পড়েছেন আশপাশের লোকজন। পথচারীদের সম্মুখেই চলছে মাদকসেবীদের মাদক সেবন। প্রতিনিয়ত বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছেন পথচারীরা।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে একজন স্থানীয় রাজনৈতিক কর্মী জানান, “মাদকের এ স্থানটি সর্বোপরিচিত। প্রায়ই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান চলে কিন্তু তারা আসার আগেই খবর পেয়ে যায় ব্যবসায়ীরা। এসব মাদক ব্যবসার পিছনে আছে এলাকার রাজনৈতিক প্রভাব।” কারা কারা এসব মাদকের বিক্রির সাথে জড়িত জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বেশীর ভাগই দরিদ্র শ্রেণীর। মূল যে ব্যবসায়ী তারা থাকে আড়ালে। বিশেষ করে কিশোর শ্রেণীর ছোট ছোট ছেলে~মেয়েদের দিয়ে এধরনের ব্যবসা চালানো হচ্ছে। মোবাইলে যোগাযোগের মাধ্যমে মাদকসেবীরা মাদক কিনে। পুরুষদের পাশাপাশি মহিলারাও মাদক বিক্রিকে পেশা হিসেবে নিচ্ছে।”
খোঁজ নিয়ে জানা যায় শহরের কম বেশী ১৫~২০ টি স্পট আছে যেখানে বলতে গেলে প্রকাশ্যে বেপোরোয়া ভাবে মাদকের পাইকারী ও খুচরো বেচা কেনা হয়।
শহরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট মহিপাল ফ্লাইওভার সংলগ্ন স্থান। এখানে প্রায়ই দেখা যায় দূর দুরান্ত থেকে আসা যুবকরা গাড়ী থেকে নেমে আশে পাশে ছড়িয়ে থাকা মাদক বিক্রেতাদের কাছ থেকে ফেন্সিডিল, ইয়াবা ক্রয় করে।
এছাড়াও দেখা গেছে, শহরের রেল ষ্টেশন, মাষ্টারপাড়ায়, ভাষা শহীদ সালাম স্টেডিয়াম সংলগ্ন বনানী পাড়ার পরিত্যক্ত বাড়ি, সার্কিট হাউজ এলাকার কলোনী, বিরিঞ্চি, সহদেবপুর, জিএ একাডেমী স্কুলের পেছন, কানন সিনেমা হল সংলগ্ন স্থান, শান্তিধারা আবাসিক এলাকা, লালপোল এলাকার শামীমের কলোনী, কদলগাজী রোডের বস্ত্র হর্কাস মার্কেট সংলগ্ন স্থানে প্রতিদিন অনেকটা প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে বাংলা মদ, গাঁজা, ইয়াবা ও ফেনসিডিল সহ বিভিন্ন প্রকারের মাদকদ্রব্য।
জেলা প্রশাসন মাদক বিরোধী টাস্কফোর্স অভিযান, গোয়েন্দা পুলিশ, মডেল থানা পুলিশ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযান কোনভাবেই বিক্রেতাদের থামাতে পারছেনা। অভিযান টের পেয়ে উল্লেখিত স্পটে ২/৩ ঘন্টা মাদক বিক্রি বন্ধ থাকে। এরপর আবার পুরোদমেই শুরু হয় কেনাবেচা।
প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিতে কখনো কখনো সাময়িক স্থান পরিবর্তন করা হয়। একটি সূত্র জানায়, লালপোল এলাকার একটি বস্তিতে প্রতিদিন দুই শতাধিক ব্যক্তি গাঁজা সংগ্রহ করতে আসে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত শহর সহ জেলায় ৯শ ৮৪টি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০২টি মামলার মধ্যে ১২২টিতে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে দন্ড দিয়ে মাদক কারবার ও সেবনে জড়িতদের কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন থানায় ৮০টি নিয়মিত মামলা হয়েছে। (সূত্রঃ হাজারিকা)
জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো আবদুল হামিদ জানান, জেলায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের অধীনস্থ জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত ১শ ৭০ জন মাদক ব্যবসায়ী রয়েছে। এদের মধ্যে বেশিরভাগ মাদক ব্যবসায়ী আটক করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, মাদক ব্যবসায়ীরা একবার আটকের পর ব্যবসার ধরন পরিবর্তন করে। এরপরও প্রতিমাসে গড়ে ১২ থেকে ১৫টি নিয়মিত মামলা দায়ের ও ১২ থেকে ১৫ জন মাদক কারবারীকে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে কারাদন্ড ও অর্থদন্ড করা হচ্ছে। (সূত্রঃ হাজারিকা)
প্রবীণ সাংবাদিক আবু তাহের জানান, সমাজে মাদক রন্দ্রে রন্দ্রে ছেয়ে গেছে। সামাজিক সচেতনতা ও সামজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে পারলে মাদক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে। এজন্য সকলকে মাদক নির্মূলে সরকারের পাশাপাশি পারিবারিকভাবে কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে সন্তানদের ব্যাপারে বেশি বেশি নজরদারী রাখতে হবে।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি এএনএম নুরুজ্জামান জানান, প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক জেলা পুলিশ সুপার খোন্দকার নুরুন্নবীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে জেলায় মাদক নির্মূলে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ সদস্যরা সর্বাত্মক কাজ করছেন। মাদক বিরোধী অভিযান চালিয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের আটক করে মামলা দায়ের করা হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, প্রশাসন ফেনী শহরকে মাদকমুক্ত করতে বদ্ধ পরিকর। কোন প্রভাব মাদক মুক্ত করতে প্রশাসনকে প্রভাবিত করতে পারবে না। বর্তমানে প্রশাসনের প্রতিটি ইউনিট মাদক অভিযানে নিজেদের কঠোর অবস্থানে আছে। এঅবস্থায় তিনি সমাজের সর্বোস্তরের সহযোগীতা কামনা করেন।