গত ১৮ অক্টোবর থেকে ইরানের ওপর জাতিসংঘের আরোপিত অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রত্যাহার হয়ে গেছে। এর পরপরই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, যেসব দেশ বা ব্যক্তি এখন থেকে ইরানের সঙ্গে অস্ত্র কেনাবেচা করবে, সেসব দেশ ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। গতকাল রোববার (১৮ অক্টোবর) থেকে ইরানের ওপর জাতিসংঘের আরোপিত অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রত্যাহার হয়ে যাওয়ার পর পম্পেও এ প্রতিক্রিয়া জানালেন। ২০১৫ সালে ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে ইরানের স্বাক্ষরিত পরমাণু সমঝোতা ও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ২২৩১ নম্বর প্রস্তাবের ভিত্তিতে এ নিষেধাজ্ঞা উঠে গেছে।
জবাবে, ইরান তার প্রতিক্রিয়ায় জানায়, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ইরান নিজস্ব নীতিতে অটল থাকবে বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাওয়াদ জারিফ। শনিবার কাতারের রাজধানী দোহায় অনুষ্ঠিত একটি আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সম্মেলনে একথা জানান তিনি।
তিনি বলেন, ইরান মার্কিন কোন নিষেধাজ্ঞায় মোটেই বিচলিত না। মার্কিন উপর্যোপরি নিষেধাজ্ঞা সামাল দিয়েই ইরান বর্তমান অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, “এটা স্পষ্ট যে, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে আমরা চাপের মুখে আছি। কিন্তু এই চাপের কারণে আমরা কি আমাদের নীতিতে পরিবর্তন আনব? আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি, সে দিন কখনোই আসবে না। কারন ইরান জানে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা থেকে বাঁচার উপায়।”
তিনি বলেন, “বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে শিক্ষা দেবে তেহরান।”
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনা পুরোপুরি নাকচ করে দিয়ে তিনি বলেন, “যে দেশটি ইরানের জন্য ১২টি পূর্বশর্ত আরোপ করে সে দেশের সঙ্গে কোনো অবস্থাতেই আলোচনায় বসবে না তেহরান। নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ইরান বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ ও তেল রপ্তানি চালিয়ে যাবে আর যারা ইরানের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে তারাই পরাজিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।”
এর আগে গত ১৯ অক্টোবর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও ওয়াশিংটনে এক বক্তব্যে বলেন, “কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা দেশ ইরানে অস্ত্র বিক্রি করলে বা ইরান থেকে অস্ত্র কিনলে ওয়াশিংটন সেই ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা দেশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে।’ এ ছাড়া পম্পেও দাবি করেন, ইরানের কাছে প্রচলিত সমরাস্ত্র বিক্রি কিংবা তেহরানের কাছ থেকে অস্ত্র কেনা হবে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব লঙ্ঘনের শামিল।”
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাওয়াদ জারিফ গত শনিবার কাতারের রাজধানী দোহায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সম্মেলনে আরও, “এমন কোনো শিল্প যদি থেকে থাকে যার ওপর ইরান পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে এবং সেটা অন্যকে শিক্ষা দিতে পারে তা হচ্ছে নিষেধাজ্ঞাকে পাশ কাটিয়ে কীভাবে স্বাভাবিক জীবনযাপন অব্যাহত রাখা যায়।” পারমাণবিক চুক্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইরানের স্বার্থ রক্ষিত হলে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিজের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করলে তার দেশ এই চুক্তিতে অটল থাকবে।
ইরানের বিরুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক হস্তক্ষেপ করার যে অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্র তুলছে তা নাকচ করে দিয়ে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রই বরং সাত সমুদ্রের ওপার থেকে এসে মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক হস্তক্ষেপ করছে। অন্যদিকে ইরান সিরিয়ায় সে দেশের সরকারের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে সামরিক উপদেষ্টা পাঠিয়েছে। দামেস্ক সরকার অনুরোধ করলেই ইরান সিরিয়া থেকে সামরিক উপদেষ্টা প্রত্যাহার করবে বলেও জানান তিনি।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এর আগে দাবি করেন, ‘ইরানের কাছে অস্ত্র বিক্রি করলে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বাড়বে এবং সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর হাতে বিপজ্জনক সমরাস্ত্র চলে যাবে।’ সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে এই নিষেধাজ্ঞা নবায়নের চেষ্টা করলেও পরিষদের বেশিরভাগ সদস্য দেশ এর বিরোধিতা করে।