যশোরে শনিবার আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন করা হয়েছে। দলীয় কোন্দলের কারণে জেলা যুবলীগের চার পক্ষ পৃথকভাবে কর্মসূচি পালন করেছে। তবে পক্ষগুলো আলাদাভাবে কর্মসূচি পালন করলেও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
যুবলীগের এই অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জন্য জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের দলীয় কোন্দল ও যুবলীগের জেলা কমিটির নেতৃত্বকে দায়ী করেছেন নেতা–কর্মীরা।
যুবলীগের নেতা–কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যুবলীগের ৫১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সকালে জেলা যুবলীগের সভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী তাঁর অনুসারীদের নিয়ে শহরের গরীবশাহ সড়কে অবস্থিত বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার সাবেক মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদারের নেতৃত্বে শহরে আনন্দমিছিল বের করা হয়। মিছিলটি শহরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দুপুর ১২টার দিকে সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনকে নিয়ে শহরে আনন্দ শোভাযাত্রা বের করে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ।
একই সময়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনের সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদারের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে কেক কেটে ও পরে মিছিল নিয়ে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তাঁর অনুসারীরা। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম, পৌর কাউন্সিলর আলমগীর কবির প্রমুখ।
চার ভাগে বিভক্ত হয়ে কর্মসূচি পালন করায় সংঘর্ষের আশঙ্কা ছিল। এ কারণে সকাল থেকেই শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল। পুলিশ সদস্যরা সতর্ক অবস্থায় ছিলেন। শেষ পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
যুবলীগের তৃণমূলের কয়েকজন নেতা বলেন, ‘২০ বছর ধরে একই কমিটি দিয়ে জেলা যুবলীগের কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। মেয়াদোত্তীর্ণ এই কমিটির নেতৃত্বে অনেকে আসতে চান। এ কারণে এখন আর সংগঠনের নেতাদের প্রতি বর্তমান নেতৃত্বের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। ফলে এই সংগঠনের ব্যানার ব্যবহার করে যে যার মতো কর্মসূচি পালন করছেন। সংগঠনের নেতাদের মধ্যে কোনো সমন্বয় না থাকায় বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হচ্ছে। কার্যত সংগঠনটি চার ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে যশোর জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম চাকলাদার বলেন, ‘সংগঠনের সভাপতি মোস্তফা ফরিদ চৌধুরী যুবলীগের রাজনীতি আর করবেন না বলে জেলা আওয়ামী লীগে সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ পেয়েছেন। আবার তিনি আলাদা ব্যানার নিয়ে বর্মসূচি পালন করেন। আমার সঙ্গে নৈতিকভাবে তাঁর মতামত মেলে না বলে আলাদাভাবে কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। এ ছাড়া যাদের যুবলীগের কমিটিতে কোনো পদপদবি নেই, তাঁদের অনেকে এই সংগঠনের ব্যানার ব্যবহার করে কর্মসূচি পালন করছেন। তা উচিত না।’
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৩ সালের ১৯ জুলাই যশোর জেলা যুবলীগের সম্মেলন হয়। এতে মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরীকে সভাপতি ও জহিরুল ইসলাম চাকলাদারকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা যুবলীগের কমিটি গঠন করা হয়। ৫৩ সদস্যবিশিষ্ট এই কমিটির মেয়াদ ২০০৬ সালে শেষ হয়েছে। মেয়াদোত্তীর্ণ এই কমিটি ২০২২ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হলেও জেলার শীর্ষ নেতাদের দ্বন্দ্বের কারণে সে প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়।
দলীয় নেতা–কর্মীরা জানান, যশোর জেলা যুবলীগের একক নিয়ন্ত্রণ ছিল যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের। এরপর ২০১৪ সালের পর থেকে যশোর জেলা যুবলীগে বিভক্তি দেখা দেয়। একটি পক্ষের নেতৃত্ব দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার ও অন্যটির নেতৃত্ব দেন যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ।
একসময় শাহীন চাকলাদারের পক্ষে থাকা জহিরুল ইসলাম চাকলাদার ও কাজী নাবিলের পক্ষে থাকা মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী নিজেদের অনুসারীদের নিয়ে আলাদাভাবে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি পালন করেন। অন্যদিকে কাজী নাবিল ও শাহীন চাকলাদারের অনুসারীরাও পৃথকভাবে কর্মসূচি পালন করেন।
জেলা যুবলীগের নেতা–কর্মীদের ভাষ্য, সম্মেলন বা নতুন কমিটি না হওয়ায় নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অভিমান রয়েছে। এখন নতুন কমিটি গঠন করার সম্ভাবনা দেখা দেওয়ায় সবাই আলাদাভাবে কর্মসূচি পালন করে নিজেদের তুলে ধরতে চাচ্ছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী এক নেতা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে কমিটি না হওয়ায় তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। নতুন কমিটি গঠন করা হলে সবাই একসঙ্গে কাজ করবেন বলে তিনি আশা করছেন।