বিশ্ব য়খন করোনার প্রথম ধাপ সামলে দ্বিতীয় ধাপের ভয়াবহতায় পড়েছে ঠিক তখনই বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি এখনো আসেনি বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন স্বাস্থ্যবিষয়ক গবেষণা সাময়িকী ‘দ্য ল্যানসেট’। তবে সাময়িকীটি আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে, যেকোন মুহুর্তে করোনা পরিস্থিতি বাংলাদেশে লাগামহীন হয়ে যেতে পারে বলে তাদরে প্রতিবেদনে প্রকাশ করে।
সাময়িকীটি তাদের স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রতিবেদনে কিছু কারন উল্লেখ করেছে যে কারনে বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি লাগামহীন হয়ে যেতে পারে। গবেষনায় কারনগুলো হিসাবে উল্লেখ করে বলে যে, একদিকে বর্ষা, অন্যদিকে ডেঙ্গু; এর ভেতর আবার করোনা ভাইরাস, যা ভয়ঙ্কর রূপ ধারন করতে পারে বাংলাদেশে।
প্রতিবেদনটিতে বাংলাদেশে বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে করোনা পরীক্ষার সরকারী ফি নির্ধারনের বিষয়টি নিয়ে তীব্র সমালোচনা করা হয়। এতে বলা হয়, “ফি নির্ধারণের পর পরীক্ষার হার আশ্চর্য রকম গেছে। যা কমে প্রতিদিন এক হাজার মানুষে ০ দশমিক ৮ জনে দাঁড়িয়েছে। আগস্টে প্রতি এক হাজার মানুষে ০ দশমিক ৬ হারে টেস্ট হয়েছে। বাংলাদেশের আইইডিসিআর-এর সাবেক পরিচালক মাহমুদুর রহমানও টেস্টের জন্য ফি নির্ধারণ করার সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলেছেন, “মহামারির সময়ে মানুষের কাজ নেই। টাকা নেই। এমন অবস্থায় সরকারের টাকা নেওয়া উচিত হচ্ছে না।”
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান এমিনেন্সের প্রধান শামীম তালুকদার দ্য ল্যানসেটকে বলেন, এ মহামারি বাংলাদেশের “অনৈতিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে’ উন্মোচিত করেছে।” তালুকদার দাবি করেন, “শুরুতে বেসরকারি খাতকে টেস্ট করতে দেওয়া হয়নি। এখন আবার ফি নেওয়া হচ্ছে। এতে গরীব মানুষরা বাদ পড়ছেন।” প্রতিবেদটিতে তাঁর উদ্বৃতি দিয়ে আরও প্রকাশ করে যে, “ঢাকার কয়েকটি কবরস্থান ঘুরে সেখানকার কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছেন তালুকদার। কবরস্থান পরিচালনাকারীরা তাঁকে বলেছেন, সরকারি হিসাবের চেয়ে দেশে চারগুণ বেশি মৃত্যু হচ্ছে। অনেকে উপসর্গ নিয়ে মারা যাচ্ছেন, কিন্তু করোনা পরীক্ষা হয়নি। ঢাকার আরেকজন চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য ল্যানসেটকে বলেন, “সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের দেশে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টেস্ট হচ্ছে, এটি আসলে কিছুই না।” ওই চিকিৎসক শঙ্কা প্রকাশ করে আরো বলেন, এই মহামারি আরো অনেক দিন থাকবে। আমি ভয় পাচ্ছি শীত আসলে কী হবে। মানুষও ভয় পাচ্ছে।”
অন্যদিকে বাংলাদেশের কয়েকজন বিশেষজ্ঞকে উদ্ধৃত করে অস্ট্রেলিয়ার পুরস্কারপ্রাপ্ত দক্ষিণ এশিয়ান বিষয়ক লেখিকা সোফি কাজিন্স তার প্রতিবেদনে বলেছেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বাজে অবস্থা এখনও আসেনি। কঠিন সময় অপেক্ষা করছে খুব নিকট ভবিষ্যতে।
প্রতিবেদনটিতে আরও উল্লেখ করা হয় যে, করোনার ভুয়া রিপোর্ট দেওয়ার জন্য জুলাই মাসে বাংলাদেশের একজন হাসপাতাল মালিককে গ্রেফতার করা হয়। যা দেশটির ভঙ্গুর বেসরকারি স্বাস্থ্যখাতকে সামনে তুলে আনে। আইইডিসিআর-এর সাবেক পরিচালক মাহমুদুর রহমান মনে করেন এমন জালিয়াতি বন্ধে সরকারে জরুরিভাবে নজরদারি ব্যবস্থা স্থাপন করা উচিৎ যাতে মানুষের মধ্যে করোনার পরীক্ষা নিয়ে বিশ্বাস বৃদ্ধি পায়।
আন্তর্জাতিক জরিপকারী সংস্থা ওয়ার্ল্ডমিটারের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ৬ হাজার ৭৯৪ জন। মারা গেছেন ৪ হাজার ১৭৪ জন।
এবিষয়ে সাময়িকীটির প্রতিওবদকের সাথে কথা বলার জন্য বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কোনও কর্মকর্তা কথা বলতে রাজি হননি।