রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ৯টি বাসে আগুন দেয়ার ঘটনায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের চার শতাধিক নেতাকর্মীকে আসামী করা হয়েছে। কয়েকটি থানার মামলায় যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীরাও রয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে ও গতকাল শুক্রবার সকালে পুলিশ বাদি হয়ে এই মামলাগুলো দায়ের করে। এসব মামলায় গ্রেফতারদের মধ্যে গতকাল শুক্রবার ২৮ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মামলার অন্য আসামীদের গ্রেফতার করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাদের দলের নেতা-কর্মীদের হয়রানি করতে পুলিশ মিথ্যা মামলা করেছে। ক্ষমতাসীন দলের লোকজন নিজেরাই গাড়ি পুড়িয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিচ্ছে।
বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মতিঝিল থানায় দুটি মামলা, শাহবাগ থানায় দুটি, পল্টন থানায় দুটি, বংশাল থানায় একটি, ভাটারা থানায় একটি ও কলাবাগান থানায় একটি মামলা করা হয়। এতে সংশ্লিষ্ট থানা ছাত্রদল, যুবদল ও বিএনপির অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীসহ মোট ৪৪৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন ও বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলাগুলো করা হয়েছে। এসব মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামিও রয়েছেন। মতিঝিল থানায় দায়ের হওয়া মামলার আসামীর তালিকায় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেনের নাম ছাড়াও রয়েছে থানা বিএনপির আহ্বায়ক ফজলুল হক ফজলু, থানা যুবদলের সভাপতি ইকবাল হোসেন বাবু এবং যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের শ খানেক নেতাকর্মীকে আসামী করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, গত বৃহস্পতিবার ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচন চলাকালে রাজধানীতে বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় বিভিন্ন থানায় দায়ের করা মামলায় ২৮ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। ঢাকার পৃথক দুই মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এই আদেশ দেন। শাহবাগ থানায় দায়ের করা পৃথক দুই মামলায় ছয় আসামির তিন দিন করে রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ধীমান চন্দ্র মণ্ডল এ আদেশ দেন। রিমান্ডে যাওয়া আসামীরা হলেন- হযরত আলী, মঈনউদ্দিন, আবু সাঈদ শান্ত, আবুল কালাম আজাদ, আবু সুফিয়ান ও সোহেল। এদের মধ্যে প্রথম তিনজন এক মামলায় এবং পরের তিনজন আরেক মামলার আসামি। পল্টন থানায় করা একটি মামলায় নয়জনের বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড দিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দেবদাস চন্দ্র অধিকারী। এর মধ্যে আলিজা আল আহমেদ মিটু ও মেহেদী হাসান ইয়াছিনের তিন দিন করে এবং এ কে ফজলুর বারী, আলতাফ হোসেন, নাঈম প্রধান, আলিফ মাহমুদ, হুমায়ুন রশীদ টুটুল, খন্দকার মাশুকুর রহমান ও রাশেদুজ্জামানের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। তাঁদের বিরুদ্ধে আদালতে সাত দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন পল্টন থানা পুলিশ।
মতিঝিল থানায় দায়ের করা একটি মামলায় ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দেবদাস চন্দ্র অধিকারী দুই আসামীর বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। এর মধ্যে আবদুর রহমান তাহেরের দুই দিন ও আরেক মামলায় জাকির হোসেনের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তাঁদের বিরুদ্ধে আদালতে পাঁচ দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়।
বংশাল থানায় দায়ের করা একটি মামলায় দুই আসামীর দুই দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ধীমান চন্দ্র মণ্ডল। রিমান্ডে নেওয়া আসামিরা হলেন সফিউদ্দিন আহমেদ সেন্টু ও মৃদু রহমান জনি ওরফে মোরশেদুর রহমান জনি। তাঁদের বিরুদ্ধে আদালতে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। কলাবাগান থানায় দায়ের করা মামলায় দুই আসামির দুই দিনের রিমান্ডের আদেশ দিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ধীমান চন্দ্র মণ্ডল। রিমান্ড মঞ্জুর করা আসামিরা হলেন মাহিফুর রহমান টিপু ও মাঈনউদ্দিন চৌধুরী। তাঁদের বিরুদ্ধে সাত দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে পুলিশ।
সূত্রাপুর থানায় দায়ের করা মামলায় চার আসামীর তিন দিন করে রিমান্ড দিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দেবদাস চন্দ্র অধিকারী। রিমান্ড মঞ্জুর করা আসামিরা হলেন সাব্বির ভূঁইয়া, হাজি মো. আহসান উল্লাহ, আহম্মেদ মাসুদ কাজল ও নবগোপাল দত্ত। তাঁদের বিরুদ্ধে সাত দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়। খিলক্ষেত থানায় করা মামলায় দুই আসামীর দুই দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দেন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ধীমান চন্দ্র মণ্ডল। আসামীরা হলেন মশিউর রহমান মসি ও ইঞ্জিনিয়ার নজরুল ইসলাম। তাদের প্রত্যেককে সাত দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে পুলিশ। তুরাগ থানায় দায়ের করা একটি মামলায় সোহেল মিয়া নামের এক আসামির তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ধীমান চন্দ্র মণ্ডল। তাঁর বিরুদ্ধে সাত দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়।
ডিএমপি মিডিয়া শাখার পরিচালক মো. ওয়ালিদ হোসেন বলেন, সুপরিকল্পিতভাবে যেহেতু করেছে সেহেতু তাদের দলীয় পরিচয় আছে। বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ১০টি বাসে অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। তবে এসব ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। আমরা সেগুলো নিয়ে বিস্তারিত যাচাই-বাচাই করছি। এর মধ্যে বেশ কয়েকজন ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীও আছে। বিশেষ করে কয়েকজন ককটেলসহ হাতে নাতে ধরা পড়েছে। জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই বাস পোড়ানো হয় জানিয়ে তিনি আরো বলেন, রাজনৈতিক পরিচয়ধারী অনেক আসামি রয়েছেন যারা আগেও এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনটা নির্বিঘ্নভাবে সংঘটিত হয়েছে। সেখানে মানুষের দৃষ্টিকে অন্য দিকে সরানোর চেষ্টা করেছে। শহরে জনমনে আতংক সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছে। মিডিয়া শাখার পরিচালক আরো জানান, বৃহস্পতিবারের ঘটনার পর রাজধানীজুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
এদিকে ভাটারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোক্তারুজ্জামান বলেন, ‘বাস পোড়ানোর ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। ৯০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত অনেককে আসামি করা হয়েছে।’ বংশাল থানার ওসি শাহীন ফকির বলেন, ‘বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে দুজনকে।’ এর আগে ডিএমপির মতিঝিল জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) জাহিদুল ইসলাম জাহিদ গণমাধ্যমকে জানান, মতিঝিল ও পল্টন মডেল থানার চারটি মামলায় ছয়-সাতজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। অপরদিকে আজ সকালে শাহবাগ থানার ওসি মামুন অর রশিদ বলেন, ‘এখানে দুটি মামলায় ছয়জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।’ ডিএমপির উত্তরা বিভাগের ডিসি মো. শহিদুল্লাহ বলেন, উত্তরায় গাড়ি পোড়ানোর ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে।
এ ছাড়া রাতে রাজধানীর পান্থপথের বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স এলাকার মশাল মিছিল থেকে ছাত্রদলের দুই নেতাকর্মীকে আটক করে কলাবাগান থানা পুলিশ। কলাবাগান থানার ওসি পরিতোষ চন্দ্র বলেন, পুলিশের ওপর হামলা ও কাজে বাধাদানের অভিযোগ এনে একটি মামলা হয়েছে। সেই মামলায় দুজনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এ ব্যাপারে ডিএমপির রমনা বিভাগের ডিসি সাজ্জাদুর রহমান দাবি করেছিলেন, ‘বসুন্ধরার উল্টা দিকে সন্ধ্যার পর একটি মশাল মিছিল যাচ্ছিল। সে সময় পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার চেষ্টা করলে তারা পুলিশের ওপর হামলা ও নাশকতা করার চেষ্টা করে। সে সময় পুলিশ দুজন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে।’