বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়ার করোনা ভ্যাকসিন আবিষ্কারের ঘোষনার পরই এর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও বিজ্ঞানীরা। ট্রায়ালের সম্পূর্ণ তথ্য ছাড়াই ভ্যাকসিনটির সুরক্ষা ও কার্যকারিতার ব্যাপারটি মানবদেহে প্রয়োগের দুই মাসেরও কম সময়ের মধ্যে রাশিয়া করোনার যে ভ্যাকসিনটি ব্যবহারের জন্য অনুমোদন দিয়েছে, তা কতটুকু কার্যকারিতা পাবে তা নিয়ে সতর্ক প্রশ্ন তুলেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় সর্বপ্রথম মহাশূন্যে তারা যে স্যাটেলাইট প্রেরণ করে তার নাম ছিল স্পুটনিক। প্রথম দেশ হিসেবে সাফল্যের ঘোষণা দেওয়া রাশিয়া তাদের ভ্যাকসিনটির নামও রেখেছে ‘স্পুটনিক-৫’!
মহামারি করোনা প্রতিরোধে বিশ্বজুড়ে ভ্যাকসিন তৈরির প্রতিযোগিতায় প্রথম হতে চেয়েছিল রাশিয়া।
রাশিয়ার ভ্যাকসিন ব্যবহারের এই অনুমোদনকে ‘বেপরোয়া ও বোকামি সিদ্ধান্ত’ বলে অভিহিত করে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের জেনেটিক্স ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞ ফ্রান্সিস বেলাক্স বলেন, “যথাযথভাবে পরীক্ষা-নিরিক্ষা না করেই গণহারে মানুষের জন্য ভ্যাকসিন ব্যবহারের এমন অনুমোদন অনৈতিক।”
জার্মানির ইউনিভার্সিটি হসপিটালের বিশেষজ্ঞ পিটার ক্রেমসনারও মস্কোর তৈরি ভ্যাকসিনের এমন অনুমোদনের বিষয়টিকে ‘বেপরোয়া’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
অনেকে মনে করছেন অতিতের রাশিয়ার ‘প্রথম’ হওয়ার তাড়নার সঙ্গে করোনা ভ্যাকসিনের মিল খুঁজে পাচ্ছেন। তাইতো বৃহৎ পরিসরে পরীক্ষা চালিয়ে নিরাপদ ও কার্যকরিতা ভালোভাবে যাচাই না করেই ভ্যাকসিন ব্যবহারে মস্কোর অনুমোদনকে বিশেষজ্ঞরা অভিহিত করেছেন ‘বেপরোয়া পদক্ষেপ’ হিসেবে। যদিও গতকাল প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছেন, “প্রয়োজনীয় সব ধাপ অতিক্রম করেই তা কার্যকর হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।” তিনি ভ্যাকসিনটির চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়ে বলেছেন “আমাদের তৈরি ভ্যাকসিনটি স্থায়ী বা টেকসই প্রতিরোধী সক্ষমতা দেখাতে সক্ষম।”
রয়টার্সকে ব্রিটেন ওয়ারউইক বিজনেস স্কুলের ওষুধ বিশেষজ্ঞ ও গবেষক আয়ফার আলি বলেন, “এত দ্রুত ভ্যাকসিন ব্যবহারের এমন অনুমোদনের অর্থ হচ্ছে এর দ্বারা বিরুপ প্রভাবের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। এটা বিরল। এ কারণে এই ভ্যাকসিন মারাত্মক ও নেতিবাচক ফল বয়ে আনতে পারে।”
“নিরাপদ ও কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়নি, এমন কোনো ভ্যাকসিন মানুষের ব্যবহারের জন্য অনুমোদন দেওয়ায় ভ্যাকসিনের কল্যাণে মানুষ যতটা উপকৃত হওয়ার কথা ছিল সমান্তরালভাবে ঠিক ততটাই ক্ষতি হবে”~বলে মন্তব্য করেছেন ইম্পেরিয়াল কলেজ অব লন্ডনের ইমিউনোলোজির অধ্যাপক ড্যানি আল্টম্যান।
তিনি বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবে ভ্যাকসিন তৈরির বিষয়টি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। কোনো ভ্যাকসিন ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়ার পূর্বে আপনাকে অবশ্যই বৃহৎ পরিসরে মানবদেহে প্রয়োগ করার মাধ্যমে এর সুরক্ষা ও কার্যকারিতা নিশ্চিতে পরীক্ষা চালাতে হবে। আমি মনে করি তারা (রাশিয়া) এটা করেনি।’
“রাশিয়ার তৈরি করোনার ভ্যাকসিন কার্যকর ও নিরাপদ কিনা এটা তো আমরা জানতে পারছি না। কারণ এর বৈজ্ঞানিক ফলাফল তারা কোথাও প্রকাশ করেনি”~ বলে আশংকা প্রকাশ করেন নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক রোগ ও মহামারি বিশেষজ্ঞ কেইথ নিল।
শুধু বিজ্ঞানী আর বিশেষজ্ঞ নয় খোদ স্বাস্থ্য বিষয়ক জাতিসংঘের সংস্থা ডব্লিউএইচও রাশিয়ার তৈরি ও অনুমোদন পাওয়া ভ্যাকসিন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে।
এসব বিষয় নিয়ে রাশিয়া বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ না করায়, বিজ্ঞানী, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং সাধারণ মানুষ ধোঁয়াশার মধ্যে পড়েছেন। মস্কোভিত্তিক গামালেয়া ইনস্টিটিউটের তৈরি ওই ভ্যাকসিনটির কোনো প্রকার বৈজ্ঞানিক ফলাফল কোনো বিজ্ঞান সাময়িকীতে প্রকাশ করা হয়নি যা নিয়ে স্বাস্থ্যখাতে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের মধ্যে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ উৎকন্ঠা।