ঢাকাবুধবার , ২ সেপ্টেম্বর ২০২০
  1. অনান্য
  2. অপরাধ ও আইন
  3. অভিবাসীদের নির্মম জীবন
  4. অর্থনীতি
  5. আত্মসাৎ
  6. আন্তর্জাতিক
  7. ইতিহাস
  8. উদ্যোক্তা
  9. এশিয়া
  10. কৃষি
  11. ক্যাম্পাস
  12. খেলাধুলা
  13. গণমাধ্যম
  14. গল্প ক‌বিতা
  15. চট্টগ্রাম বিভাগ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

রোহিঙ্গা সঙ্কটঃ আঞ্চলিক সংঘাতের অশনিসঙ্কেত

অনলাইন ডেস্ক
সেপ্টেম্বর ২, ২০২০ ১:৪৩ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

রো‌হিঙ্গা ইস্যু‌তে ভারত বাংলাদেশকে ‘লিপ সার্ভিস’ দিয়ে মিয়ানমারের সাথে কৌশলগত সম্পর্ক দৃঢ় করার প্রতি বেশি নজর দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়; বিশেষত পাশ্চাত্যের দেশগুলো রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে যতটা বিশ্ব ফোরামে কথা বলছে, ততটা সমস্যাটির বাস্তব সমাধানের ব্যাপারে মিয়ানমার বা সংশ্লিষ্ট অন্য পক্ষগুলোর ওপর চাপ দিচ্ছে বলে মনে হয় না

তিন বছর পেরিয়ে গেলেও রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধান চেষ্টায় কোনো অগ্রগতি নেই, বরং ধীরে ধীরে জটিল হয়ে উঠছে পরিস্থিতি। সমাধানহীন অবস্থায় রোহিঙ্গা সমস্যা চলতে থাকলে এটি পুরো অঞ্চলকেই অস্থির করে তুলতে পারে। এর ফলে শুধু বাংলাদেশ নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে মিয়ানমার, ভারত; এমনকি চীনও। কিন্তু এই সঙ্কট দেশি-বিদেশি ফোরামে নানাভাবে আলোচিত হলেও এর সমাধান সূত্র বের করার ব্যাপারে আন্তরিক প্রচেষ্টা কমই দেখা যাচ্ছে। মিয়ানমার এই ইস্যুতে কেবলই দীর্ঘসূত্রতার আশ্রয় নিয়ে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের বাস্তবতাটিকে অস্বীকার করতে চাইছে। চীন এই ইস্যুতে চাপে রেখে বাংলাদেশকে তার নিজস্ব বলয়ে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করতে চাইছে।

প্রশ্ন হলো রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো কী ভাবছে? পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন বলেছেন, অবিলম্বে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে চায় বাংলাদেশ। রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমি রাখাইন রাজ্যে ফেরত পাঠাতে অবিলম্বে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চায় বাংলাদেশ। কিন্তু মিয়ানমার কি সেটি চায়? সম্প্রতি জাপানের কিওডো বার্তা সংস্থার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে মোমেন বলেন, করোনা ভাইরাস ও নির্বাচনের অজুহাত দেখিয়ে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়া বিলম্বিত করছে। বাংলাদেশ এরই মধ্যে মিয়ানমারের কাছে ছয় লাখ রোহিঙ্গার নামের তালিকা পাঠিয়েছে, যারা শুদ্ধি অভিযানের সময় পালিয়ে আসে। জবাবে মিয়ানমার মাত্র ৩০ হাজার নাম অনুমোদন করেছে। রাখাইন রাজ্যে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির লড়াই চলতে থাকায় সেখানে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের উপযুক্ত পরিবেশ নেই। এক লাখ রোহিঙ্গাকে বঙ্গোপসাগরের দ্বীপ ভাসানচরে পাঠানোর জন্য বাংলাদেশ এরই মধ্যে ৩০০ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছে। রোহিঙ্গারা নাগরিকত্ব, চলাচলের অধিকার ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চাচ্ছে। নাগরিকত্ব ইস্যুটি কেবল মিয়ানমার সরকারই সমাধান করতে পারে বলে মোমেন মনে করেন।

অন্যদিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সফল করার জন্য রাখাইনে একটি সেফ জোন তৈরি করার ওপর জোর দিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। এজন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি মিয়ানমারকে চাপ দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই সেফ জোন প্রতিষ্ঠার এই প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু চীন বা মিয়ানমার কোনো পক্ষ এতে সাড়া দেয়নি। এখন পুনরায় বিষয়টি জোরালোভাবে উপস্থাপন করার কথা বলা হচ্ছে।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিবের পর্যবেক্ষণ হলো, প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশের সদিচ্ছা থাকলেও মিয়ানমারের অনীহার কারণে রাখাইনে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে না। ফলে রোহিঙ্গারা ফেরত যেতে ভয় পাচ্ছে। রোহিঙ্গারা নিরাপদে থাকবে এমন অঞ্চল রাখাইনে প্রতিষ্ঠা করা হতে পারে এর সমাধান, যেটি বেসামরিক লোকেরা পর্যবেক্ষণ করবেন এবং এজন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে হবে। প্রত্যাবাসনের বিষয়ে দায়বদ্ধতার জন্য যে আইনি প্রক্রিয়া চলমান আছে, সেটি দীর্ঘায়িত হতে পারে। দীর্ঘসময় অপেক্ষা করলে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া জটিল হয়ে পড়বে। আর প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় কোনো অগ্রগতি না হলে রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগণ হতাশ হয়ে পড়বে। সেই সাথে এই সমস্যা দীর্ঘায়িত হলে একটি বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হবে।

পররাষ্ট্র সচিব এই ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থান প্রসঙ্গে জানান, রোহিঙ্গাদের জন্য বড় ধরনের কোনো বিনিয়োগ বাংলাদেশ চায় না। কারণ এর ফলে রাখাইন থেকে রোহিঙ্গারা দলে দলে আবার বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে উৎসাহিত হবে। রোহিঙ্গা সমস্যা একটি জনগোষ্ঠীকে প্রান্তিকীকরণের জ্বলন্ত উদাহরণ। এর সমাধান মিয়ানমারেই আছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার রীতিনীতি ভঙ্গ করে রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার চালানো হয়েছে এবং সেই কারণে দায়বদ্ধতার বিষয়টি আন্তর্জাতিকীকরণ হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ কোর্ট ও আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে বিচার প্রক্রিয়া চলছে।

বাংলাদেশের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সচিব আরো বলেন, আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে সবসময় সব বিষয়ে যোগাযোগ রেখেছি। কিন্তু স্পষ্টভাবে বলতে গেলে, প্রতিবেশী দেশ আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণের মর্যাদা দেয়নি। দুইবার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সফল হয়নি। এর কারণ হচ্ছে রোহিঙ্গারা ফেরত যেতে ভয় পাচ্ছে। রাখাইনে প্রত্যাবাসনের পরে রোহিঙ্গারা যেন জীবন-জীবিকা অর্জন করতে পারে, তার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

ভাসানচরে স্থানান্তরের বিষয়ে মাসুদ বলেন, আমরা সেখানে রোহিঙ্গাদের সরেজমিন নিয়ে যাব। সেখানকার অবস্থা ভালো মনে করলে বর্ষা মৌসুমের পরে তাদের সেখানে স্থানান্তর করা হবে।

মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে মূল কাম্য হলো, তাদের আর মিয়ানমারে ফিরিয়ে না নেয়া। নানা অজুহাতে এটিকে বিলম্বিত করা হলে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশের মূল এলাকায় ছড়িয়ে যেতে পারে। একই সাথে অনেক রোহিঙ্গা নানাভাবে অন্য দেশেও আশ্রয় নিতে পারে। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে আগের মতো বিভিন্ন দেশ রোহিঙ্গাদের অভিবাসন দিতে পারে। এতে করে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের বড় একটি অংশ চলে গেলে কিছু রোহিঙ্গাকে দেশটি মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিয়ে তাদের পরিকল্পনা অনুসারে পুনর্বাসন করবে। এ কারণেই বাংলাদেশের দেয়া ৬ লাখের তালিকা থেকে ৩০ হাজার রোহিঙ্গার অনুমোদন দিয়েছে নেপিদো। তাদের মূল পরিকল্পনা অনুসারে এক থেকে দেড় লাখ রোহিঙ্গাকে রাখাইনে পুনর্বাসন করা হতে পারেÑ যাতে তারা সেখানে এমন একটি সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী হয়ে পড়ে, যেন তাদের কোনো ভূমিকা সেখানে না থাকে। মিয়ানমার এক্ষেত্রে সরাসরি ভূমিকা রাখতে না পারলেও বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে চীনকে দিয়ে চাপ প্রয়োগ করছে। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের সীমান্ত থেকে ভাসানচরের মতো দূরের এলাকায় পুনর্বাসন সেই প্রক্রিয়ারই একটি অংশ। সীমান্ত এলাকায় রোহিঙ্গারা থাকলে যে চাপ মিয়ানমার অনুভব করে, সেটি তাদের দুর্গম ভাসানচরে পাঠালে আর সেটি অনুভব করবে না। আর রোহিঙ্গাদের নিয়ে মিয়ানমারের বড় ভয় হলো তারা সশস্ত্র প্রতিরোধ তৈরি করে রাখাইনের ওপর চাপ প্রয়োগ করলে এই অঞ্চলে মিয়ানমার ও চীনের যে অর্থ‌নৈ‌তিক পরিকল্পনা রয়েছে, সেটি বাস্তবায়ন করা যাবে না।

এ কারণে মিয়ানমার এবং তার বাইরের মিত্ররা তিনটি জিনিস চায়। প্রথমত, রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের সীমান্ত থেকে দূরে কোথাও সরিয়ে নেয়া। দ্বিতীয়ত, রোহিঙ্গাদের ক্ষোভ যাতে সশন্ত্র কোনো প্রতিরোধে পরিণত না হয়, সেটি নিশ্চিত করা। তৃতীয়ত, রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের মূল ভূখন্ডে আত্মীকরণ অথবা বিদেশে অভিবাসনের ব্যবস্থা করা। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব সাম্প্রতিক এ আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশে আত্মীকরণের কোনো ধরনের চিন্তাকে নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, এ ধরনের কোনো চিন্তা বাংলাদেশ সরকারের নেই। তৃতীয় দেশে তাদের পাঠানোর বিষয়টিও নাকচ করে দেয়া হয়। এই অনুষ্ঠানে শান্তি প্রতিষ্ঠার কোনো ইচ্ছা ছাড়াই শান্তি আলোচনায় মিয়ানমার অংশগ্রহণ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা মিয়ানমার জান্তাকে বিশ্বাস করে না এবং এই সমস্যা সমাধানের কোনো চেষ্টা মিয়ানমার কখনও করেনি।

বাংলাদেশ চায়, রোহিঙ্গাদের এমন একটি ব্যবস্থায় নিজ দেশে প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে যাতে তাঁদের এদেশে আর কখনো ফিরে আসতে না হয়। পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এ প্রসঙ্গে বলেন, তার দেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের দুই দফা ফেরত নেয়ার জন্য মিয়ানমার ও অন্য কয়েকটি দেশ চেষ্টা করলেও তা সফল হয়নি। কারণ রোহিঙ্গারা মনে করে, রাখাইনে তাদের জন্য এখনো পরিস্থিতি নিরাপদ নয় এবং দেশটি তাদের নাগরিকত্ব ও মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা দেয়নি। রোহিঙ্গা সমস্যার শুরু থেকে বাংলাদেশ সুপ্রতিবেশী সুলভ আচরণের মাধ্যমে কূটনৈতিকভাবে এর সমাধান করতে চাইলেও মিয়ানমারের অসহযোগিতার কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না।

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য বাংলাদেশ পাঁচটি মৌলিক নীতিকে সামনে রেখে এগোতে পারে। প্রথমত, রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে অথবা তৃতীয় কোনো দেশে পাঠানোর প্রস্তাব নাকচ করে দেয়া। আর তাদের মিয়ানমারের নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করে সেখানে নিরাপত্তার সাথে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। দ্বিতীয়ত, রোহিঙ্গাদের কোনোভাবেই মিয়ানমার সীমান্ত থেকে দূরের কোনো স্থানে না নিয়ে যাওয়া। দূরে নেয়া হলে মিয়ানমার তাদের ব্যাপারে পুনর্বাসনের কোনো চাপ অনুভব করবে না। তৃতীয়ত, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান না করলে এটি যে রাখাইনে বড় ধরনের এক বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনে পরিণত হবার ঝুঁকি রয়েছে, সেটি মিয়ানমারকে অনুভব করতে দেয়া। চতুর্থত, আন্তর্জাতিক ফোরামগুলোয় যুদ্ধাপরাধ মামলার বিচার, অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ, বৈশ্বিক ফোরাম থেকে বহিষ্কার ইত্যাদির মাধ্যমে এই সঙ্কট সমাধানের ব্যাপারে চাপ সৃষ্টি করা। পঞ্চমত, ইয়াবা ঢুকিয়ে বাংলাদেশে মিয়ানমার যে মাদক আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে, সেটি বৈশ্বিক ফোরামে তুলে ধরে এই ব্যাপারে চাপ সৃষ্টি করা। এসব ব্যবস্থার জন্য জাতিসংঘ মানবাধিকার গোষ্ঠীর পাশাপাশি ওআইসি’কেও সংগঠিত করা প্রয়োজন।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনী শুদ্ধি অভিযানের নামে নির্যাতন চালালে সেখান থেকে সাড়ে সাত লাখের বেশি জাতিগত সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। এর আগেও অনেক রোহিঙ্গা পালিয়ে আসায় বাংলাদেশে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা বাস করছে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমার চুক্তি স্বাক্ষর করলেও মিয়ানমারের অনাগ্রহের কারণে এই চুক্তি বাস্তবায়িত হয়নি। গত ২৫ আগস্ট তাদের নিজ দেশ থেকে জোরপূর্বক নির্বাসনের তৃতীয় বর্ষপূর্তি হয়েছে। ২০১৭ সাল থেকে বাংলাদেশের কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলোয় ৭৫ হাজারের বেশি শিশু জন্মগ্রহণ করেছে।
রোহিঙ্গা হলো পশ্চিম মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের একটি ইন্দো-আর্য জনগোষ্ঠী। আরাকান বা রাখাইন হলো তাদের আদি নিবাস। ১৯৭৮ সালের আগে ২৩ লাখের মতো রোহিঙ্গা আরাকানে বসবাস করতো। একাধিকবার নিপীড়নের মাধ্যমে তাদের দেশের বাইরে ঠেলে দেয়া হয়। সৌদি আরব, পাকিস্তান, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে এখন ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা রয়েছে। ২০১৬-১৭ সালে মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের পূর্বে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা মিয়ানমারে বসবাস করত। অধিকাংশ রোহিঙ্গা ইসলাম ধর্মের অনুসারী। ২০১৩ সালে জাতিসংঘ রোহিঙ্গাদের বিশ্বের অন্যতম নিগৃহীত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী হিসেবে উল্লেখ করেছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের তথ্যমতে, ১৯৮২ সালের আইনে ‘রোহিঙ্গাদের জাতীয়তা অর্জনের সম্ভাবনা কার্যকরভাবে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। ৮ম শতাব্দী পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের ইতিহাসের সন্ধান পাওয়া সত্ত্বেও, বার্মার আইন এই সংখ্যালঘু নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীকে তাদের জাতীয় নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করছে।’ এছাড়া তাদের আন্দোলনের স্বাধীনতা, রাষ্ট্রীয় শিক্ষা এবং সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। রোহিঙ্গারা ১৯৭৮, ১৯৯১-১৯৯২, ২০১২, ২০১৫ ও ২০১৬-১৭ সালে সামরিক নির্যাতন এবং দমনের সম্মুখীন হয়েছে। জাতিসংঘ ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো দমন ও নির্যাতনকে জাতিগত নির্মূলতা হিসেবে আখ্যা দিয়েছে, যেখানে গণহত্যার মতো অপরাধের তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যেতে পারে। জাতিসংঘে নিযুক্ত মিয়ানমারের বিশেষ তদন্তকারী ইয়ংহি লি বিশ্বাস করেন, মিয়ানমার পুরোপুরি তাদের দেশ থেকে রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করতে চায়। ২০০৮ সালের সংবিধান অনুসারে, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এখনো সরকারের অধিকাংশ বিষয় নিয়ন্ত্রণ করে থাকে, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা ও সীমান্ত বিষয়ক মন্ত্রণালয়। সেনাবাহিনীর জন্য সংসদে ২৫% আসন বরাদ্দ রয়েছে এবং তাদের মধ্য থেকে একজন উপ-রাষ্ট্রপতি থাকেন।

রোহিঙ্গারা বলে আসছে, তাদের বংশধররা প্রাক-ঔপনিবেশিক ও ঔপনিবেশিক আমল থেকে আরাকানের বাসিন্দা ছিল। বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে নির্যাতন শুরু হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত রোহিঙ্গারা আইনপ্রণেতা ও সংসদ সদস্য হিসেবে মিয়ানমারের সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। হঠাৎই মিয়ানমারের সরকারি মনোভাব বদলে যায় এবং রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে মিয়ানমার সরকারের অফিসিয়াল মন্তব্য দাঁড়ায় তারা জাতীয় জনগোষ্ঠী নয় বরং তারা বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসী। মিয়ানমারের সরকার তখন থেকে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি ব্যবহার বন্ধ করে তাদের বাঙালি বলে সম্বোধন করতে থাকে। রোহিঙ্গাদের অধিকার আন্দোলনের বিভিন্ন সংগঠন, বিশেষ করে আরাকান রোহিঙ্গা জাতীয় সংস্থা তাদেরকে মিয়ানমারের মধ্যে জাতিসত্তার পরিচয় দেওয়ার দাবি করে আসছে।
জাতিসংঘের তদন্তের প্রতিবেদন অনুসারে, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের ভিতরে অতি-জাতীয়তাবাদী বৌদ্ধদের দ্বারা ঘৃণা এবং ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার শিকার হচ্ছে। একই সাথে মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী কর্তৃক বিচারবহির্ভূত হত্যা, অবৈধ গ্রেফতার, নির্যাতন, ধর্ষণ এবং অপব্যবহারের শিকার হওয়ার পাশাপাশি তাদের জোরপূর্বক শ্রমে বাধ্য করছে। জাতিসংঘের মতানুসারে, রোহিঙ্গাদের ওপর চলা এ নির্যাতনকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে বলা যেতে পারে।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল অপরাজিতবাংলা ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন oporajitobangla24@yahoo.com ঠিকানায়।