র্যাবের বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম আর নির্যাতনের অভিযোগ ও নির্যাতনের অভিযোগ এনেছেন মার্কিন সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটির ১০ সদস্য। তাঁরা র্যাবের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করার জন্য ট্রাম্প প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছেন।
গত মঙ্গলবার মার্কিন সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটির ওয়েবসাইটে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
মার্কিন সিনেটে ডেমোক্রেটিক পার্টির সিনেটর বব মেনেনডেজ ও রিপাবলিকান পার্টির সিনেটর টড ইয়াং এবং তাঁদের আট সিনেট সহকর্মী স্বাক্ষরিত চিঠিতে গত মঙ্গলবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এবং অর্থমন্ত্রী স্টিভেন মানুচিনকে র্যাবের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারির অনুরোধ জানিয়েছেন। ঐ চিঠিতে আরও সই করেছেন রিপাবলিকান পার্টির সদস্য করি গার্ডনার, মার্কো রুবিও এবং ডেমোক্রেটিক পার্টির বেন কার্ডিন, জিন শাহিন, ক্রিস মার্ফি, ক্রিস কোনস, জেফ মার্কলে ও করি বুকার।
উল্লেখ্য যে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র সারা বিশ্বে নির্দিষ্ট ব্যক্তির ওপর গ্লোবাল মেগনিটস্কি হিউম্যান রাইটস অ্যাকাউন্টেবিলিটি অ্যাক্ট প্রয়োগ করে থাকে। এতে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা ব্যক্তির যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারির পাশাপাশি তাঁর সম্পত্তি জব্দ করার অধিকার থাকে বলে মার্কিন কংগ্রেস ও মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের তথ্যানুযায়ী জানা যায়।
চিঠিতে সিনেটররা লিখেছেন, “বাংলাদেশ পুলিশের র্যাবের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অব্যাহত অভিযোগের বিষয়ে চরম উদ্বেগ জানিয়ে আমরা লিখছি। ২০১৫ সাল থেকে র্যাবের বিরুদ্ধে চার শতাধিক মানুষকে বিচারবহির্ভূভাবে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। গুম ও নির্যাতনের অনেক ঘটনায় র্যাবের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে। আপাতদৃষ্টে মনে হচ্ছে, এটি ভিন্নমতাবলম্বীদের কণ্ঠরোধের বিষয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বৃহত্তর অভিযানের অংশ এবং এতে র্যাবকে বিচারের মুখোমুখি হতে হয় না। তাই মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাবের সুনির্দিষ্ট জ্যেষ্ঠ সদস্যদের বিরুদ্ধে গ্লোবাল মেগনিটস্কি হিউম্যান রাইটস অ্যাকাউন্টেবিলিটি অ্যাক্ট এবং ফারদার কনসোলিডেটেড অ্যাপ্রোপ্রিয়েশনস অ্যাক্ট-২০২০–এর ৭০৩১ (সি) ধারাসহ প্রয়োজনীয় কাঠামোর আওতায় র্যাবের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের অনুরোধ করছি।”
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ক্ষোভের সাথে বলেন, “এভাবে একটি দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীদের বিষয়ে মন্তব্য করা দুঃখজনক। র্যাব কাউকে গুম করেনি বা নির্যাতনও করে না।
ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে লেখা চিঠিতে মার্কিন সিনেটররা আরোও লিখেছেন, “২০১৮ সালের নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসার আগে বাংলাদেশ সরকার মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করলে র্যাবের বিচারবহির্ভূত হত্যার হার বাড়ার অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ রেপোর্টিয়ারসহ জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বিচারবহির্ভূত কিংবা নির্বতনমূলক হত্যা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে চিঠিতে মন্তব্য করা হয়েছে ‘মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান’ ‘বিচারবহির্ভূত হত্যার ইচ্ছাকৃতনীতি বলে প্রতীয়মান’। তাই তাঁরা এটি বন্ধ করে আইনের শাসন ও মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে বলেছেন বাংলাদেশ সরকারকে। কিন্তু সরকার এসব অপকর্ম বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছে। র্যাব অব্যাহতভাবে বিচারবহির্ভূত হত্যা চালিয়ে যাচ্ছে এবং তাদের কোনো বিচার হচ্ছে না। মাদকবিরোধী অভিযানের সময় কক্সবাজারে একরামুল হকের মৃত্যুর ঘটনার কথা উল্লেখ করে ওই সময় একটি ‘অডিও রেকর্ড’ প্রকাশ হওয়ার বিষয়টিও সিনেটররা চিঠিতে উল্লেখ করেছেন।”
র্যাবের বিরুদ্ধে সিনেটরদের মাদক অভিযানে বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগের বিষয়টি নাকচ করে দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, “মাদক ব্যবসায়ীরা সশস্ত্র থাকেন। তাঁরা যখন হামলা চালান, তখনই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আত্মরক্ষার্থে গুলি চালায়। এ ছাড়া প্রতিটি গুলিবর্ষণের ঘটনা জেলা প্রশাসক তদন্ত করে।”
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, “বিচারবহির্ভূত হত্যার পাশাপাশি মানবাধিকার সংগঠনগুলো, জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা ও গণমাধ্যমকর্মীরা র্যাবের বিরুদ্ধে গুম ও ব্যাপক নির্যাতনের অভিযোগ লিপিবদ্ধ করেছেন।”
চিঠিতে র্যাবের নির্যাতনের বিভিন্ন অভিযোগের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ সরকারের উচ্চপদস্থ ব্যক্তির সঙ্গে এক ব্যক্তির বিবাদের জেরে তাঁর তিন কর্মীকে অপহরণ করে নির্যাতনের ঘটনাকে যা চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা। এ জন্য র্যাবের জ্যেষ্ঠ নেতৃত্বের ফল ভোগ করা উচিত।
উল্লেখ্য যে, ফারদার কনসোলিডেটেড অ্যাপ্রোপ্রিয়েশনস অ্যাক্ট-২০২০–এর ৭০৩১ (সি) ধারা মানবাধিকার লঙ্ঘন ও দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা হয়। এর ফলে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। চলতি বছর এই ধারার আওতায় শ্রীলঙ্কায় তামিলবিরোধী অভিযানে গণহত্যার অভিযোগে দেশটির বর্তমান সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল শাভেন্দ্র সিলভার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে যা এখনো বলবৎ আছে।