পদত্যাগ করে শেখ হাসিনার দেশছাড়ার খবর পেয়ে উল্লাসে ফেটে পড়ে জনতা। এ সময় ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে দেওয়া হয় আগুন। শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত বাসভবন সুধাসদনসহ রাজধানীতে বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগ সরকারের সদ্যবিদায়ী মন্ত্রী, দলীয় সংসদ সদস্য ও নেতাদের বাসভবন ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনা ঘটে।
সোমবার (৫ আগস্ট) রাত ১০টা পর্যন্ত অন্তত ৪৪ জেলায় এসব হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে বিদায়ী সরকারের ৯ জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ অন্তত ২৭ জন সংসদ সদস্যের বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। বহু সরকারি স্থাপনায় হামলার খবর পাওয়া যায়।
সোমবার ছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি। কারফিউ অমান্য করে হাজার হাজার মানুষ রাজপথে নেমে আসতে শুরু করেন। দুপুরের দিকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের কথা জানাজানি হলে ঢাকার রাজপথে নেমে আসেন লাখো জনতা। খণ্ড খণ্ড মিছিল বিভিন্ন এলাকায় যেতে থাকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, সোমবার বিকেলে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে ভাঙচুর করা হয়। বিকেল ৫টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, বেশ কিছু মানুষ ১৯ হেয়ার রোডে অবস্থিত প্রধান বিচারপতির বাসভবনে ঢুকে ভাঙচুরের পাশাপাশি বাসভবনে থাকা বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে যাচ্ছেন। তখন বিদ্যুৎ–সংযোগ ছিল বিচ্ছিন্ন। এস ঘটনার কিছুক্ষণ আগে প্রধান বিচারপতি বাসভবন থেকে বের হন।
বেলা ৩টার দিকে ধানমন্ডির ৫ নম্বরে অবস্থিত শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত বাসভবন সুধাসদনে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। অনেককে বাড়ি থেকে জিনিসপত্র বের করে নিয়ে চলে যেতে দেখা যায়। গুলশানে শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার জন্য বরাদ্দ করা বাড়িতেও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
এ ছাড়া বিভিন্ন স্থাপনার সামনে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি, শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি ভাঙচুর করা হয়। রাজধানীতে বিভিন্ন দোকানে ভাঙচুর চালাতে দেখা গেছে।
ধানমন্ডির ৩/এ-তে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার কার্যালয়েও অগ্নিসংযোগ করা হয়। কার্যালয়ের সামনে নানা স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা।
ধানমন্ডিতে সদ্য সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের বাসায়ও হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। গতকাল বেলা সাড়ে ৩টার দিকে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ফটক ভেঙে অনেকে তার বাসায় ঢুকে পড়েন। বাসার ভেতর থেকে ধোঁয়াও বের হতে দেখা গেছে।
এ ছাড়া বিভিন্ন স্থাপনার সামনে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি, শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি ভাঙচুর করা হয়। রাজধানীতে বিভিন্ন দোকানে ভাঙচুর চালাতে দেখা গেছে।
ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় হাসিনা সরকারের সদ্য সাবেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের নিজ এলাকার বাসভবনে হামলা–ভাংচুর হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলায় সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, নওগাঁ শহরের পোস্টঅফিস পাড়ায় সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, কিশোরগঞ্জের ভৈরবে সাবেক যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসান, চাঁদপুরে সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও মেহেরপুরে সাবেক জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের বাসভবনে ভাঙচুর করে আগুন দেওয়া হয়।
পাবনায় ডেপুটি স্পিকার শামসুল হকের বাসায়ও ভাঙচুর চালানো হয়। নাটোরের সিংড়া উপজেলা সদরের গোডাউনপাড়ায় সদ্য সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলকের বাড়িতে জনতা আগুন জ্বালিয়ে দেন। সিলেট নগরের শাপলাবাগে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরীর বাসভবন ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। খাগড়াছড়িতে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক সাবেক প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার বাসভবনেও হামলা হয়েছে।
এ ছাড়া সংসদ সদস্যদের মধ্যে নড়াইলে মাশরাফি বিন মর্তুজা, বরিশালে আমির হোসেন আমু, নারায়ণগঞ্জে সেলিম ওসমান ও শামীম ওসমান, নওগাঁয় নিজাম উদ্দিন জলিল, সিলেটে রণজিত চন্দ্র সরকার, মাদারীপুরে শাজাহান খান, ময়মনসিংহে শরীফ আহমেদ ও মোহিত উর রহমান, নাটোরে শফিকুল ইসলাম, বগুড়ায় মজিবর রহমান, খুলনায় মন্নুজান সুফিয়ান ও এস এম কামাল হোসেন, পঞ্চগড়ে নাঈমুজ্জামান ভূঁইয়া, ফেনীতে নিজাম উদ্দিন হাজারী, চাঁপাইনবাবগঞ্জে আবদুল ওদুদ, লক্ষ্মীপুরে নুরুউদ্দীন চৌধুরী, জামালপুরে মির্জা আজম, বরগুনায় গোলাম সরোয়ার, মাদারীপুরে আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, শেরপুরে ছানুয়ার হোসেন, সাতক্ষীরায় ফিরোজ আহমেদ, বান্দরবানে বীর বাহাদুর উশৈসিং, চুয়াডাঙ্গায় সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ও আলী আজগরের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।