বিএনপি-জামায়াতের ডাকা দ্বিতীয় দফা অবরোধের দ্বিতীয় দিনে যেকোনো ধরনের নাশকতা ঠেকাতে মিছিল ও মহড়া নিয়ে রাজধানী জুড়ে সতর্ক অবস্থানে ছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। রাজপথে যেকোনো অপতৎপরতা রুখে দিতে খণ্ড খণ্ড মিছিল ও মোটরবাইকে মহড়া দিয়েছে থানা-ওয়ার্ড নেতারা। গতকাল সকাল থেকে রাজধানীর রাজপথ দখলে নিয়ে মিছিল-মিটিং, সমাবেশ এবং অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এ ছাড়া নগরীর বিভিন্ন এলাকায় মোটরসাইকেল মিছিল করতে দেখা যায় কর্মীদের। সকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এসে দুপুরে অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হাবিবুর রহমান সিরাজ। এ ছাড়া সকাল থেকেই নগর আওয়ামী লীগের সাবেক ও বর্তমান নেতারা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। তাদের মধ্যে ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি হেদায়েতুল ইসলাম স্বপন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোরশেদ কামাল, মিরাজ হোসেন, মহিউদ্দিন মহি, সাংগঠনিক সম্পাদক আকতার হোসেন, দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ প্রমুখ।
এ প্রসঙ্গে মো. রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ বলেন, আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছি। বিএনপি-জামায়াত অবরোধে যেন কোনোভাবেই গাড়ি ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করতে না পারে সেজন্য সকল থানা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং দলীয় কাউন্সিলরদেরও নির্দেশনা দেয়া আছে। গাড়ি ভাঙচুর করলে সন্ত্রাসীদের ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে তুলে দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
সকাল থেকে গুলিস্তান দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি ও প্রতিবাদ মিছিল করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ ও থানা-ওয়ার্ডের নেতারা। দুপুরে মিছিল- পূর্ব সমাবেশে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সহ-সভাপতি সোহরাব হোসেন স্বপনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য হাবিবুর রহমান পবন, মোয়াজ্জেম হোসেন, তাজউদ্দীন আহমেদ তাজ, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল আলম সোহাগ প্রমুখ। পরে নেতাকর্মীরা প্রতিবাদ মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। দ্বিতীয় দিনে অবরোধের নামে আগুন সন্ত্রাস, নৈরাজ্যের প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ। মিছিল-পূর্ব সমাবেশে বক্তব্য রাখেন স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু, সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু, সহ-সভাপতি মুজিবুর রহমান স্বপন, শামীম শাহরিয়ার শামীম, ড. জমির হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোবাশ্বের চৌধুরী, একেএম আজিম, খায়রুল হাসান জুয়েল, উপদেষ্টা আশিষ কুমার মজুমদার, অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক নাফিউল করিম নাফা, আবদুল্লাহ আল সায়েম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি কামরুল হাসান রিপন, ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি ইসহাক মিয়া, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সাধারণ সম্পাদক তারেক সাঈদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সাধারণ সম্পাদক আনিছুর রহমান নাঈমসহ কেন্দ্রীয়, জাতীয়, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের অধীন বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। পরে মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি জিরো পয়েন্ট হয়ে পুনরায় দলীয় কার্যালয়ে এসে শেষ হয়। যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক শারমীন সুলতানা লিলির নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় যুব মহিলা লীগের নেত্রীরা দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় তারা অবরোধবিরোধী মিছিল ও বিক্ষোভ করেন। এদিকে ঢাকার প্রবেশপথ ডেমরা-যাত্রাবাড়ী এলাকায় সতর্ক অবস্থান ও ৫ শতাধিক মোটরবাইক, ৫০টি মাইক্রো সহকারে প্রায় ২ হাজার নেতাকর্মী নিয়ে মিছিল-শোডাউন ও মহড়া দেন ঢাকা-৫ আসনের প্রয়াত এমপি আলহাজ হাবিবুর রহমান মোল্লার বড় ছেলে ও ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলহাজ মশিউর রহমান মোল্লা সজল। ডেমরার স্টাফ কোয়ার্টার থেকে সোমবার বেলা ১১টায় মিছিলটি বের হয়ে যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, ধলপুর, সাইনবোর্ড, সানারপাড় সড়কে মহড়া দিয়ে সুলতানা কামাল সেতুর সামনে গিয়ে শেষ হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন ডেমরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মো. হাবিবুর রহমান হাবু, সারুলিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী, ডেমরা থানা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর নিলুফা ইয়াসমিন লাকী, বৃহত্তর ডেমরা থানা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি কৌশিক আহমেদ জসিম ও সাধারণ সম্পাদক রায়হান জামিল রিপন, ৬৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাসুদুর রহমান মোল্লা বাবুল, ৬৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সালাহউদ্দিন আহমেদ, ডেমরা ইউনিয়ন যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুর রহমান, সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলর মাহফুজা আক্তার হিমেল, ডেমরা থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক একরামুল হক সাগর প্রমুখ। এ ছাড়াও ঢাকা-৫ আসনের বিভিন্ন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং বর্তমান ও সাবেক ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। এ ছাড়াও ঢাকা-৫ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী, ঢাকা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ দক্ষিণের সভাপতি কামরুল হাসান রিপনের নেতৃত্বে দনিয়া, কদমতলী এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। সকাল সাড়ে ১০টায় জয়কালী মন্দির ও ঠাঁটারীবাজার থেকে ওয়ারী থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি চৌধুরী আশিকুর রহমান লাভলু ও সাধারণ সম্পাদক হাজী আবুল হোসেনের নেতৃত্বে একটি মিছিল বের হয়। তারা ৫ শতাধিক নেতাকে নিয়ে সতর্ক অবস্থানে পাহারায় থাকতে দেখা যায়। এদিকে উত্তরা, গাবতলী, বাড্ডা, মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ মিছিল করে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ। এসব শান্তি সমাবেশ ও মিছিলের নেতৃত্ব দেন সংগঠনের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি।
এ প্রসঙ্গে এস এম মান্নান কচি বলেন, সকাল থেকে আমরা সতর্ক অবস্থানে থেকে রাজপথ পাহারা দিয়েছি। যেকোনো ধরনের অঘটন রুখে দেয়াই আমাদের লক্ষ্য। সামনের অবরোধ কর্মসূচির বিপরীতেও রাজপথে আমাদের শক্ত অবস্থান থাকবে। তিনি বলেন, নির্বাচন পর্যন্ত রাজপথে থেকে নাশকতা মোকাবিলা করার প্রত্যয় রয়েছে আমাদের। জনগণের জানমালের কোনো ক্ষতি হতে দেয়া যাবে না। কারণ আমরা আগুন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, নাশকতার বিরুদ্ধে। এ ছাড়া ঢাকা-১৮ আসনের এমপি মোহাম্মদ হাবিব হাসানের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল করা হয়। উত্তরার জসিমউদ্দিন এলাকায় হলিল্যাব সেন্টার এলাকায় নেতাকর্মীদের নিয়ে সতর্ক পাহারা ও প্রতিবাদ মিছিল করেন মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক খসরু চৌধুরী। ৯৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন সোহেলের নেতৃত্বে রাজধানীর গ্রীণ সুপার মার্কেটের সামনে অবরোধবিরোধী মিছিল করে। ধানমণ্ডির জিগাতলায় হরতারবিরোধী মিছিল বের করে ধানমণ্ডি মহিলা লীগের সভানেত্রী শেখ মিলি। এসময় দুই শতাধিক নারীনেত্রী অংশ নেন।