এবার চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আগে নগরের সকল ওয়ার্ড থেকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করার জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবী জানালেন বিএনপি দল মনোনীত মেয়র প্রার্থী ডাঃ শাহাদাত হোসেন।
বিএনপি মেয়র প্রার্থী ডাঃ শাহাদাত হোসেন বলেন, “সাম্প্রতিক সময়ে চসিক নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে সমস্ত হতাহত সংগঠিত হয়েছে তাতে স্পষ্ঠ যে নির্বাচনকে আরও সহিংস করতে সন্ত্রাসীদের হাতে প্রচুর অবৈধ অস্ত্র আছে। তাই এ মুহুর্তে নির্বাচনের পূর্বে সকল বৈধ অস্ত্র জমা নিয়ে সন্ত্রাসীদের হাতে থাকা অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে সাড়াঁশি অভিযান পরিচালনার জন্য প্রশাসনের কাছে জোড় দাবী জানাচ্ছি।”
গতকাল শুক্রবার (১৫ জানুয়ারী) দুপুরে নগরীর ১৬নং চকবাজার ওয়ার্ডে ধানের শীষের পক্ষে নির্বাচনী গণসংযোগকালে বিএনপি মেয়র প্রার্থী ডাঃ শাহাদাত এ দাবী জানান।
ডাঃ শাহাদাত হোসেন তার দলীয় নেকা কর্মীদের নিয়ে সকালে নগরীর চকবাজার ধনিরপুলস্থ ডিসি রোড়ে মেয়র প্রার্থীর নির্বাচনী কার্যালয় উদ্বোধন করেন। পরে তিনি ধনিরপুল থেকে চকবাজার ওয়ার্ডের গণসংযোগ শুরু করে সিরাজউদৌলা রোড়, চন্দনপুরা, গনি বেকারী, কলেজ রোড়, অলি খাঁ মসজিদ মোড়, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও সেভরন এলাকা, পাঁচলাইশ বড় গ্যারেজ, কাতালগঞ্জ হয়ে তেলিপট্টি মোড় এলাকায় শেষ করেন।
গনসংযোগে ডাঃ শাহাদাত বলেন, “প্রতিটি নির্বাচনের আগে নিয়ম অনুযায়ী সকল বৈধ অস্ত্র জমা নিয়ে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে প্রশাসন তৎপর থাকেন। কিন্তু চসিক নির্বাচনে প্রশাসন এখনো পর্যন্ত অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান কিংবা বৈধ অস্ত্র জমা নেয়ার কোন ধরণের উদ্যোগ নেননি। ফলে প্রতিদিন ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীদের অস্ত্রের ঝঁনঝনানি, হানাহানি চলছে।”
তিনি আরও বলেন, “সম্প্রতি নগরীর রামপুরা, পাঠানটুলী, বাকলিয়া তে নির্বাচনী সহিংসতায় একটি দলের নিজেদের মধ্যে নির্বাচনী সংঘর্ষে নিহত ও আহত হওয়ার ঘটনার একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ভায়বহ কারন হলো সন্ত্রাসীদের হাতে বিপুল পরিমান বৈধ ও অবৈধ অস্ত্র।”
ডাঃ শাহাদাত হোসেন আরও বলেন, “বৃহস্পতিবার গভীর রাতে নগরীর হালিশহর রামপুর ১১ নং ওয়ার্ডের বড়পুকুর পাড়ে ধানের শীষ প্রতিকের পোষ্টার লাগাতে গেলে যুবলীগ কর্মীরা হামলা আমাদের কর্মীদের উপর হামলা চালায়।” তিনি আরও বলেন, “এ ধরনের হামলার ঘটনা প্রতিটি ওয়ার্ডেই ঘটছে। আমাদের প্রার্থীরা কোন ওয়ার্ডে স্বাধীনভাবে প্রার্থী অফিস গিয়ে বসতে পারছেন না। কোন কোন ওয়ার্ডে কোন ভাবে কিছু পোষ্টার লাগানো হলেও পরের দিন দেখা যায় পোষ্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে।”
গনসংযোগে অংশগ্রহনকারী বেশ কিছু নেতা কর্মীদের সাথে অপরাজিত বাংলার প্রতিনিধির সাথে কথা হলে তারা তাদের প্রতিক্রিয়ায় জানান, বর্তমানে নগরীর শীর্ষ কিশোর গ্যাংয়ের নেতারা সরকার দলীয় হয়ে নির্বাচন করছেন, অনেক বিদ্রোহীরা কিশোর গ্যাংকে ব্যবহার করে নির্বাচনী পরিবেশকে সহিংসতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এতে আমাদের বিএনপি প্রার্থীরা তাদের নেতা কর্মীদের নিয়ে মাঠে কাজ করতে পারছেন না। সরকারী দলের ক্যাডার বাহিনীর হুমকি ধমকীর কারনে রাস্তায় বের হতে পারছেন না।
বিএনপি নেতাদের বলেন, নগরীর ৯, ১১, ১৭, ২৫, ২৬, ২৮ সহ অনেক ওয়ার্ডেই সরকার দলীয় নেতাদের হাতে বৈধ অস্ত্র রয়েছে, যা কিনা নিয়ম অনুযায়ী যে কোন নির্বাচনের আগে প্রশাসনের কাছে জমা দিতে হয়, কিন্তু আমরা জেনেছি যে, এসব উল্লেখিত ওয়ার্ডের প্রত্যেকটিতে যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাদের কাছে লাইসেন্স অস্ত্র রয়েছে, কিন্তু তারা প্রশাসনের কাছে অদ্যবধি কোন অস্ত্র জমা দেন নাই বা প্রশাসনেরও এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হচ্ছে না।
বিএনপির অনান্য নেতাদের মতো ডাঃ শাহাদাত হোসেনও বলেন, “ছাত্রলীগ যুবলীগ সন্ত্রাসীদের হাতে থাকা অবৈধ অস্ত্র সাধারণ ভোটার ও বিএনপি নেতা কর্মীদের মধ্যে ভয়ভীতি ছড়ানোর জন্য ব্যবহার করতে পারে। নির্বাচনের আগে আরও হামলা এবং হতাহতের ঘটনা ঘটার আশঙ্কা সাধারণ ভোটাররা শঙ্কিত। এসব খুনাখুনি বন্ধে ও সাধারণ ভোটার এবং বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের জানমালের নিরাপত্তায় অবিলম্বে লাইসেন্স করা অস্ত্র জমা নিয়ে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে সাড়াশি অভিযান পরিচালনার জন্য জোর দাবী জানাচ্ছি।”
পথসভায় নেতারা আরও বলেন, আমাদের কোন বিদ্রোহী প্রার্থী নেই, এখন পর্যন্ত বিএনপির নিজ দলের ভিতর কোন সহিংস ঘটনা ঘটে নাই, ইনশাআল্লাহ্ আমরা আমাদের দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশ মতো এগিয়ে চলছি এবং জনগনের রায়ে জয় আমাদেরই হবে।
পথসভায় জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান বলেন, “ভোট আপনার পবিত্র আমানত। ভোট দেওয়া নাগরিক অধিকার। ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে আসুন। আপনার ভোট আপনি দেবেন। অবরুদ্ধ গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে আপনার রায় দিয়ে যোগ্য প্রার্থী ডা: শাহাদাত হোসেনকে নির্বাচিত করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “২৭ জানুয়ারী সকল বাঁধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে প্রতিটি ভোটারকে মূল্যবান রায় ধানের শীষ প্রতীকে দিতে হবে।”
গণসংযোগে উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ইউনুচ চৌধুরী, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক কাজী বেলাল উদ্দিন, ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, সদস্য গাজী সিরাজ উল্লাহ, মো. কামরুল ইসলাম, নগর মহিলা দলের সাধারন সম্পাদক জেলী চৌধুরী সহ নগর ও তৃণমূলের অনেক নেতা কর্মীরা অংশগ্রহন করেছিলেন।