ঢাকামঙ্গলবার , ৫ জানুয়ারি ২০২১
  1. অনান্য
  2. অপরাধ ও আইন
  3. অভিবাসীদের নির্মম জীবন
  4. অর্থনীতি
  5. আত্মসাৎ
  6. আন্তর্জাতিক
  7. ইতিহাস
  8. উদ্যোক্তা
  9. এশিয়া
  10. কৃষি
  11. ক্যাম্পাস
  12. খেলাধুলা
  13. গণমাধ্যম
  14. গল্প ক‌বিতা
  15. চট্টগ্রাম বিভাগ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

“সুষ্ঠু নির্বাচন হ‌লে আমা‌দের এম‌পিরা পালা‌নোর দড়জা খুঁ‌জে পা‌বে না”- ব‌ল্লেন ওয়াদুল কা‌দে‌রের ছোট ভাই কা‌দের মির্জা।

অপরা‌জিত বাংলা ডেস্ক।
জানুয়ারি ৫, ২০২১ ১:০৩ অপরাহ্ণ
Link Copied!

রাজনী‌তির এক‌টি প‌রিভাষা হ‌লো, “জনগ‌নের হও, কখ‌নো নি‌জের নও”। য‌দিও রাজনী‌তির মা‌ঠে নি‌জে‌দের আখের গোছা‌তে ব্যাস্ত নেতা‌দের কা‌ছে এ প‌রিভাষা বি‌ষের ম‌তোই ম‌নে হ‌বে। ত‌বে সচরাচর কোন রাজ‌নৈ‌তিক নেতা‌দের নিজ দলকে নি‌য়ে খোলা‌মেলা বক্তব্য একেবা‌রেই প্রকা‌শ্যে বেমানান। কিন্তু এবার তৈল মর্দন ও স্বার্থবাজ রাজনী‌তি করা নেতা‌দের এক হাত নি‌লেন আওয়ামী লী‌গেরই একজন প্রভাবশালী নেতা আওয়ামী লী‌গের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই আবদুল কাদের মির্জা।

সম্প্র‌তি তাঁর দেওয়া এক‌টি বক্তব্যের ২৪ মি‌নি‌টের এক‌টি ভি‌ডিও সামা‌জিক যোগা‌যোগ মাধ্য‌মে ভাইরাল হ‌য়। বক্তব্য‌টি আগামী ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় দ্বিতীয় ধাপের পৌরসভা নির্বাচ‌নের ইশতেহার ঘোষণাকালে পৌরভবন চত্বরে ওই বক্তব্য দেন তিনি।

পু‌রো বক্তব্য‌টি শুন‌তে→ ‌ভি‌ডিওতে ক্লিক করুন।

তি‌নি তাঁর ঐ বক্ত‌ব্যে ব‌লেন, “বৃহত্তর নোয়াখালীতে আওয়ামী লীগের কিছু কিছু চামচা নেতা আছেন, যাঁরা বলেন অমুক নেতা তমুক নেতার নেতৃত্বে বিএনপির দুর্গ ভেঙেছে। আস‌লে কি বিএন‌পির দুর্গ ভে‌ঙ্গে‌ছে? না ভা‌ঙ্গে‌নি। বরং, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বৃহত্তর নোয়াখালীতে তিন-চারটা আসন ছাড়া বাকি আসনে আমাদের এমপিরা দরজা খুঁজে পাবে না পালানোর জন্য। এটাই হলো সত্য কথা। সত্য কথা বলতে হবে। আমি সাহস করে সত্য কথা বলছি।”

আসন্ন ২য় পর্যা‌য়ের পৌর নির্বাচ‌নে আবদুল কাদের মির্জা নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট পৌরসভার মেয়র পদে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন। এ উপলক্ষে ৩১ ডিসেম্বর সকালে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট পৌরভবন চত্বরে ইশতেহার ঘোষণাকালে তি‌নি এ কথাগু‌লো ব‌লেন। ‌উল্লেখ্য যে, তিনি নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটির সহসভাপতি। এ নিয়ে টানা তৃতীয়বার বসুরহাট পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেলেন।

আবদুল কাদের মির্জা তাঁর বক্তৃতায় বলেন, ‘নোয়াখালীর রাজনীতি অতি কষ্টের। এই বৃহত্তর নোয়াখালীতে আমাদের নেতা ওবায়দুল কাদের, মওদুদ সাহেব (বিএনপি), আবু নাছের সাহেব (জামায়াতের)—এই তিনজন ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ কোন নেতা নোয়াখালী‌তে নেই। তাঁদের সমমর্যাদার কোনো নেতা নোয়াখালী‌তে সৃ‌ষ্টি হয়নি। এখন তো ওবায়দুল কাদের, মওদুদ আহমদের নাম বিক্রি করি। তাঁরা তিনজন তো অসুস্থ, তাঁরা মারা গেলে কার নাম বিক্রি করবে, কেউ নাই।’

‌ভি‌ডিও‌টি‌তে তাঁ‌কে দলীয় কিছু নেতা‌কে উদ্দেশ্য ক‌রে সরাস‌রি অ‌ভি‌যোগ ও সমা‌লোচনা কর‌তে শোনা যায়। তিনি নোয়খা‌লি‌তে বর্তমান ক‌মি‌টিকে নি‌য়ে তীব্র সমা‌লোচনা ক‌রেন।

‌জনাব আবদুল কাদের সরাস‌রি নোয়খালী জেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটির সমালোচনা করে বলেন, “সাবেক সেনাপ্রধান মঈন উ আহমদের ছোট ভাই জাবেদ (মিনহাজ আহমেদ জাবেদ)। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে কোনো কোনো নেতা তখন (এক-এগারোর সময়কালে) নিজেদের রক্ষা করেছেন। এখন সেই জাবেদ এবং হাওয়া ভবনের মানিক (আতাউর রহমান ভূঁইয়া ওরফে মানিক) আজ জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি। অথচ কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাহাব উদ্দিনের মতো ত্যাগী ও নির্যাতিত ব্যক্তিকে করা হয়েছে উপদেষ্টা। এটা হলো আমাদের কমিটি।’

বক্ত‌ব্যে নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষায় দলীয় কিছু নেতাকে ইঙ্গিত করে আবদুল কাদের মির্জাকে বলতে শোনা যায়, ‘নোয়াখালীর মানুষজন বলে, শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা বেড়েছে। এটা সত্য। কিন্তু আপনাদের জনপ্রিয়তা বাড়েনি। আপনারা প্রতিদিন ভোট কমান। টাকা দিয়ে বড় জনসভা করা, মিছিল করা কোনো ব্যাপার নয়। টাকা দিলে, গাড়ি দিলে আমিও অনেক লোক জড়ো করতে পারব। না হয় রাজনীতি থেকে বিদায় নেব।’
‌তি‌নি ‌কিছু এম‌পি ও নেতা‌দের ইঙ্গিত ক‌রে আরও ব‌লেন, “এসব শয়তানী ক্ষ্যামা দেন, নোংড়া পোলাপাইন লালন ক‌রেন, গুন্ডা সন্ত্রসী‌দের নি‌য়ে রাজ‌নৈ‌তিক কর্ম ক‌রেন।”

তি‌নি ‌কারও নাম উল্লেখ না করে বলেন, “প্রকাশ্যে দিবালোকে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করেন, তাঁরা হচ্ছেন নেতা। টেন্ডারবাজি করে কোটি কোটি টাকা লুটপাট যাঁরা করেন, তাঁরা হচ্ছেন নেতা। পুলিশের, প্রাথমিক শিক্ষকের চাক‌রি দেবার নাম ক‌রে যাঁরা পাঁচ লাখ টাকা নেন, তাঁরা হচ্ছেন নেতা। গরিব পিয়নের চাকরি দিয়ে তিন লাখ টাকা যাঁরা নেন, তাঁরা হচ্ছেন নেতা।”

আবদুল কাদের মির্জা বলেন, “দলের প্রয়াত সাবেক তিন নেতা আবদুল মালেক উকিল, শহীদ উদ্দিন এস্কেন্দার ও নুরুল হক সাহেবের নোয়াখালীতে আওয়ামী লীগে অপরাজনীতি চলছে। এই অপরাজনীতি চলতে পারে না।” তাই তিনি সবাইকে অপরাজনীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।

আবদুল কা‌দের মীর্জা আরও ব‌লেন, “‌ফেনী ফুলগাজীর চেয়ারম্যান একরাম চৌধুরী‌কে প্রথ‌মে গু‌লি ক‌রে এবং প‌রে গাড়ীর ভিতরে তাঁকে পু‌ড়ি‌য়ে মারা হ‌লো। কৈ তা‌দের কোন বিচার আজ পর্যন্ত হ‌লো না। এটা কেমন রাজনী‌তি? একরাম চৌধুরীর প‌রিবার কী কোন দিন এ হত্যার বিচার পা‌বে না?”
জনাব মির্জা সরাস‌রি নিজাম হাজারীর সমা‌লোচনা ক‌রে ব‌লেন, “আপনারা সবাই নিজাম হাজারী‌কে চি‌নেন। আ‌মি একরাম চৌধুরীর হত্যার বিচা‌রের বিষ‌য়ে নিজাম হাজা‌রি‌কে ব‌লে‌ছি কিন্তু তি‌নি কিছুই ক‌রেন নাই। কারন উনারা সন্ত্রাসী পা‌লেন, মাদক কারবারী‌দের আশ্রয় দেন।”

‌তি‌নি একপর্যা‌য়ে আবেগপ্লুত হ‌য়ে নি‌জের ছাত্র জীব‌নে রাজনী‌তি করার সময়কার দা‌রিদ্রতার কথা ব‌লেন, ক‌লেজ হো‌স্টে‌লে ঈদের দিন পর্যন্ত সারা‌দিন উপোষ ছি‌লেন। তি‌নি তাঁর বড় ভাই ওবায়দুল কা‌দে‌রের ছাত্র জীব‌নের স্মৃ‌তিচারন ক‌রেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সভা থেকে বেরিয়ে আবদুল কাদের মির্জা পৌরসভা কার্যালয়ে গিয়ে দলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে চিৎকার-চেঁচামেচি করেন। একপর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে বেলা ১১টার দিকে তিনি শহরের জিরো পয়েন্টে বঙ্গবন্ধু চত্বরে অবস্থান নেন। ততক্ষণে সেখানে হাজির হন কয়েক হাজার দলীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থক। সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে টায়ার জ্বালিয়ে হাতে ঝাড়ু নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন সমর্থকেরা। বিক্ষোভকারীরা ডিসি, এসপির অপসারণ দাবি করে তাঁদের বিরুদ্ধে নানা অশালীন স্লোগান দেন।

এরপর দুপুরে জিরো পয়েন্টে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মী ও দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে আবদুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন, কিন্তু ভোটের অধিকার এখনো প্রতিষ্ঠা হয়নি। দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি বন্ধ হয়নি। তাই ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের নিশ্চয়তা না পাওয়া পর্যন্ত তিনি তাঁর অবস্থান কর্মসূচিতে অনড় থাকবেন। তাঁর পাশে কেউ না থাকলে প্রয়োজনে তিনি একা লড়ে যাবেন বলেও উল্লেখ করেন।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপ‌তি খিজির হায়াত খান ব‌লেন, “আবদুল কাদের মির্জার এই বক্তব্যের প্রতি আমরা সবাই একমত রয়েছি। কিছুদিন আগে আবদুল কাদের মির্জা চিকিৎসার জন্য আমেরিকায় গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি শপথ করেছেন, দেশে ফিরে সত্য কথা বলবেন। অন্যায়ের প্রতিবাদ করবেন। সে শপথের অংশ হিসেবেই তিনি এসব বলছেন।”

অন্য‌দি‌কে আবদুল কাদের মির্জা দলের জন্য অপরিহার্য উ‌ল্লেখ ক‌রে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপ‌তি এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরী ব‌লেন, “আবদুল কাদের মির্জা যেসব কথা বলছেন, অভিযোগ করেছেন, তার কোনোটিই মিথ্যা নয়। এসব বিষয় নিয়ে শিগগিরই দলীয় ফোরামে আলোচনা হবে।

‌ভি‌ডিও সোর্সঃ News24 Bd.

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল অপরাজিতবাংলা ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন oporajitobangla24@yahoo.com ঠিকানায়।