ফের মিয়ানমারের উসকানী মূলক আচরন। পুনরায় সেন্টমার্টিনসকে নিজেদের অংশ দাবি করেছে প্রতিবেশি দেশটি। দুই বছরের মাথায় সেন্টমার্টিনকে আবারও নিজেদের দাবি করে নিজেদের মানচিত্রের সাথে জুড়ে দিয়েছে নয়ানাভিরাম ও কৌশলগত এ দ্বীপটি। বিষয়টি নজরে আসার পর মিয়ানমার রাষ্ট্রদূতকে তলব করে বাংলাদেশ। এর আগে ২০১৮ সালের অক্টোবরেও মিয়ামনার একই কাজ করেছিল। সে সময় রাষ্ট্রদূত উ লুইন ও’র হাতে একটি কূটনৈতিক চিঠি ধরিয়ে দেয় বাংলাদেশ। যাতে সেন্টমার্টিন যে বাংলাদেশের অংশ তার পুঙ্খানুপুঙ্খ প্রমাণ রয়েছে।
পাশাপাশি ওই চিঠিতে মিয়ানমারের এমন আপত্তিকর কাজের জবাবও চাওয়া হয়। পরে বাংলাদেশের প্রতিবাদের পর জাতিসংঘে চিঠি দিয়ে ক্ষমা চায় মিয়ানমার।
সেন্টমার্টিন কেবল অপরিসীম সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি নয়, কৌশলগত কারণেও ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ এই প্রবাল দ্বীপ। উনিশ শতকের আগ থেকেই এটি তৎকালীন ভারতবর্ষ তথা আজকের বাংলাদেশের অংশ। পুরনো মানচিত্রেও কখনো সেন্টমার্টিনকে নিজেদের বলে দাবি করেনি মিয়ানমার।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাইট কোপর নিকাসে (https://www.copernicus.eu/en) দেখানো হচ্ছে বাংলাদেশের সীমানা ও ইকোনোমিক জুনের বাইরে অবস্থান এই প্রবাল দ্বীপের। ইউরোপের চোখে বিশ্বদর্শন এই কোপারনিকাস সাইটের স্লোগান।
সেন্টমার্টিন ১৯ শতকেরও আগ থেকে তৎকালীন ভারতবর্ষ পরে পাকিস্তান এবং বর্তমানে বাংলাদেশের অংশ। কখনই এটি মিয়ানমারের অংশ ছিল না।
কোরাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন বা এর সাথে সংলগ্ন ছেঁড়াদ্বীপের মালিকানা নিয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে কোনো অনিষ্পন্ন বিরোধ নেই।
প্রসঙ্গত, রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রতিবেশি দেশ মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের টানাপোড়েন চলছে। মিয়ানমারের প্রায় ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তারা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে চুক্তি করলেও সেটির বাস্তবায়ন দৃশ্যমান হচ্ছে না।
২০১৯ সালের অক্টোবরে জনসংখ্যা অধিদপ্তরসহ কয়েকটি ওয়েবসাইটে সেন্টমার্টিনকে নিজেদের দেখায় মিয়ানমার। সে সময় রাষ্ট্রদূতকে তলব করলে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন। যদিও ঢাকাকে এ বিষয়ে তখনও কিছুই জানায়নি নেইপিদো। পরে জাতিসংঘকে বিষয়টি জানালে ভুল স্বীকার করেছিল সংস্থাটি। ওয়েবসাইট থেকে পরে সরানো হয়েছিল ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল করা মিয়ানমারের সেই মানচিত্র।
বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের ভূখণ্ড টেকনাফ থেকে ৯ কিলোমিটারের মতো দক্ষিণে অবস্থিত সেন্টমার্টিন দ্বীপটি স্থানীয়দের কাছে নারিকেল জিঞ্জিরা বা দারুচিনি দ্বীপ হিসেবে পরিচিত। ২৫০ বছর আগে আরব নাবিকেরা প্রথম এ দ্বীপে বসবাস করেন। তারা এর নাম দেন ‘জাজিরা’। ব্রিটিশ শাসনের সময় এর নাম দেয়া হয় সেন্টমার্টিন দ্বীপ।
প্রায় ৫০০০ বছর আগে টেকনাফের মূল ভূমির অংশ ছিল জায়গাটি। কিন্তু ধীরে ধীরে এটি সমুদ্রের নিচে চলে যায়। এরপর প্রায় ৪৫০ বছর আগে বর্তমান সেন্টমার্টিন দ্বীপের দক্ষিণ পাড়া জেগে ওঠে। এর ১০০ বছর উত্তর পাড়া এবং পরবর্তী ১০০ বছরের মধ্যে বাকি অংশ জেগে ওঠে।
ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯০০ সালে ভূমি জরিপের সময় এ দ্বীপটিকে ব্রিটিশ ভারতের অন্তর্ভুক্ত করে নেয়া হয়। সে সময়টিতে বার্মা ব্রিটিশ শাসনের আওতায় ছিল। কিন্তু তারপরও সেন্টমার্টিন দ্বীপকে বার্মার অন্তর্ভুক্ত না করে ব্রিটিশ-ভারতের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।
এর আগে ১৮২৪ থেকে ১৮২৬ সালে ব্রিটিশদের সাথে বর্মী রাজার যে যুদ্ধ হয় তাতে বিতর্কের ইস্যুগুলোর মধ্যে এ দ্বীপের মালিকানাও একটি ছিল। সেন্টমার্টিন দ্বীপের আয়তন আট বর্গকিলোমিটারের মতো। এর সাথে সংলগ্ন ছেঁড়াদ্বীপটির মিয়ানমারের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় উপকূল থেকে দূরত্ব মাত্র আট কিলোমিটার।
উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা নিয়ে যে বিরোধ ছিল সেটি আন্তর্জাতিক আদালতে নিষ্পত্তি হয়ে গেছে কয়েক বছর আগেই। আদালতের রায়ে দুই দেশের সমুদ্রসীমা স্পষ্ট করে টানা হয়েছে।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, “মিয়ানমার মাঝে মাঝে উসকানি দেয়। তবে আমরা সেই উসকানিতে পা দিতে চাই না। আমরা সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশের মধ্য দিয়ে দুদেশের সম্পর্ককে আরও উন্নীত করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।”