মধ্যপ্রাচ্যের দুটি চির বৈরী সম্পর্ক দেশ তুরস্ক ও সৌদিআরব। মধ্য-প্রাচ্যের দুটি রাষ্ট্রের এ উত্তেজনা মধ্যেই সৌদিসরকার তুরস্কের বিরুদ্ধে নিলেন আরেকটি কঠিন সিদ্ধান্ত।
সৌদি আরব তার দেশে সমস্ত তুর্কি পণ্য নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তৎ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত বছর একটি অনানুষ্ঠানিক নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হয়েছিল কিন্তু এখন নিষেধাজ্ঞাকে আইনীভাবে কার্যকর করা হবে, যা তুরস্কের অর্থনীতিতে কঠিন আঘাত হানবে।
তুরস্ক সৌদিআরবে বিপুল পরিমান রাসায়নিক ও গার্মেন্টস জাত পণ্য রফতানি করে থাকে।
এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ইতোমধ্যে সৌদি বন্দরে তুরস্কের কোন পণ্যবাহী ট্রাক এবং মালবাহী কার্গো জাহাজ রাখা হয়নি।
তুরস্কের সাথে সৌদির দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক উত্তেজনার মূল কারন ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’-এর বিরোধিতার ফল। বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে এই গোষ্ঠীটি তৈরি হয়েছিল যার বিপুল সংখ্যক কর্মী আরব রাষ্ট্র জুড়ে সক্রিয় রয়েছে এবং মিশরে একটি সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য ক্ষমতায় ছিল। তুরস্কের রাষ্ট্রপতি রিসেপ এরদোগান এবং তাঁর একেপি পার্টি আদর্শিকভাবে ব্রাদারহুডের সাথে জোটবদ্ধ।
২০১৭ সালে, ব্রাদারহুডের পক্ষ সমর্থন করায় সৌদি আরব তার প্রতিবেশী কাতারের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। ইস্তাম্বুলের সৌদি আরব দূতাবাসে সাংবাদিক জামাল খাশোগির হত্যার পর তুরস্ক ও সৌদির মধ্যে উত্তেজনা নতুন মাত্রায় পৌঁছেছিল।
ধারণা করা হয় যে তুরস্কের পণ্য নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গকারীকে সৌদি সরকার জরিমানা করবে। তারা সৌদি নাগরিকদের তুরস্কে ভ্রমণেও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন তুর্কি ব্যবসায়ী কুমুরিয়েতে বলেন:
“সৌদিতে আমাদের গ্রাহকরা তুর্কি পণ্যগুলিতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে, তারা সন্তুষ্ট। কিন্তু এখন তারা আমাদের পণ্যগুলি আর কিনতে পারছেন না। তারা বলছে এগুলি আমাদের তৃতীয় দেশের মাধ্যমে প্রেরণ করতে। এতে করে ক্ষতিগ্রস্থ হবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের ব্যবসায়ীরা। বিশেষত দক্ষিণ-পূর্ব থেকে রফতানি হওয়া হাটয়, গাজিয়ান্তেপ এবং দিবারকাকারের মতো প্রদেশগুলির ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হবে।”
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে তুরস্ক মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকার উপর দৃঢ় ভাবে তাদের প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা করেছে। গত বছর যা উত্তর সিরিয়ায় আগ্রাসনের সাথে জড়িত ছিল এবং ফ্রান্সের বিরুদ্ধে লিবিয়ায় বিদ্রোহী গোষ্ঠী সশস্ত্র করার অভিযোগ আনা হয়েছিল। গত কয়েক সপ্তাহে, তুরস্ক তাদের প্রতিবেশী আর্মেনিয়ার সাথে দীর্ঘকাল ধরে চলমান লড়াইয়ে আজারবাইজানীয় রাষ্ট্রকে সমর্থন দিতে আজারবাইজান প্রক্সি যোদ্ধাদের প্রেরণ করছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
তবে তুরস্ক এবং সৌদি আরব উভয়েরই মানবাধিকার লঙ্ঘনের অনেক উদহারন আছে।
এদিকে গার্মেন্টস খাতের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার ইউরোপের বাজার নিয়ে শংকা সৃষ্টি হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ফ্রান্সে মহনবী (সাঃ)কে নিয়ে ফ্রান্স সরকারের কার্টুন ব্যাঙ্গচিত্র প্রদর্শন করায় বাংলাদেশের কার্যকলাপে ক্ষুদ্ধ ফ্রান্স।
ফ্রান্স নিযুক্ত বাংলাদেশ দুতাবাসের ইমেইলে হাজার হাজার স্প্যাম মেইল পাঠানো হয়েছে। এর বাইরে অফলাইনেও সবথেকে বেশি ফ্রান্স বিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে বাংলাদেশে। এইসব নিয়ে এবার ক্ষেপেছে ফ্রান্সের সরকার এবং সেদেশের জনগণ।
উল্লেখ্য বয়কট ফ্রান্স লিখে এখন পযর্ন্ত যত কমেন্ট হয়েছে তার ৬৫% বাংলাদেশ থেকে অন্য সব বাকি মুসলিম বিশ্বের দেশ গুলো থেকে ৩৫%। একারনে সে দেশে বাংলাদেশী মুসলমানরা চরম তংকে আছেন। প্রতিবাদে বাংলাদেশ যতটা সরব ততটাই বিব্রতকর অবস্থায় আছেন ফ্রান্সে বসবাসরত বাংলাদেশীরা।
ফ্রান্সের ইউরোপীয় ইউনিয়ন মেম্বার এবং সেদেশের সংসদ সদস্য Virginie joron এবার বাংলাদেশের পোশাক শিল্প বয়কটের ঘোষণা দিয়েছেন এবং যেসব মার্কেটে বাংলাদেশের প্রোডাক্ট আছে সেগুলো বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছেন।
বাংলাদেশের RMG সেক্টরে আসতে পারে অবরোধ এতে কাজ হারাতে পারেন লক্ষাধিক পোশাক শ্রমিক।
২০১৯~২০২০ সালে গার্মেন্টস খাত থেকে রপ্তানি ৩৪ বিলিয়ন ডলার প্লাস, যার ১৮ বিলিয়ন ডলার গেছে ইউরোপে। অর্থাৎ তৈরী পোশাকের ৫১% ক্রেতা ইউরোপের বিভিন্ন দেশ। ফ্রান্স বাংলাদেশের ৩য় রপ্তানিকারক দেশ।
বিশ্লেষকরা বলছেন ধর্মের দোহাই দিয়ে চলমান সংকটে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হবে কাংলাদেশ। বাজার হাতছাড়া হতে পারে তৈরী পোশাকের। এতে চাকরি হারাবেন বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ শ্রমিক, পথে বসতে হতে পারে ফ্রান্সে প্রবাসি বাংলাদেশীরা।
তবে ফ্রান্সে মহানবীকে নিয়ে কটুক্তি এবং দেশে চলমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকার নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকবেন বলে জানানো হয়েছিলো পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় থেকে।