স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে কাজ করলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। এক্ষেত্রে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার কোনো সুযোগ নেই। বিশেষ করে যেসব মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কাজ করবে তাদেরকে ভবিষ্যতে এমপি পদে আর মনোনয়ন দেয়া হবে না। তাই স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের বিজয় নিশ্চিতে সবাইকে সমন্বয় করে কাজ করার জন্য কড়া নির্দেশনা দিয়েছেন দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলীয় প্রতীক নৌকার সকল প্রার্থীর পক্ষে স্থানীয় সংসদ সদস্যরা যাতে কাজ করেন সে লক্ষ্যে সাংগঠনিকভাবে সবাইকে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নৌকা দিলাম কিন্তু এমপিদের আবার পছন্দ না হলে নৌকার বিপক্ষে অবস্থান নেয়। তারা নৌকার প্রার্থীদের হারায়,গত উপজেলা নির্বাচনে নৌকা বিরোধীদের বিরুদ্ধে দল থেকে ‘একঘরে’ করার নীতি দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে তাদেরকে দলীয় কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে না রাখার পাশাপাশি দলীয় কোনো কার্যক্রমে তাদের ডাকা হচ্ছে না। এছাড়া আগামী মাস থেকে নৌকাবিরোধীদের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ ও পদ শূন্য করার কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে দলটি। জেলা ,উপজেলা,সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে যারা ‘নৌকা’এবং দল সমর্থিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে নির্বাচন করেছে তাদের নানাভাবে শাস্তি দেয়া হবে। এতে যেসকল সংসদ সদস্য যুক্ত হয়েছে তাদের ভবিষ্যতে আর দলীয় মনোনয়ন দেবে না আওয়ামী লীগ। এছাড়া আগামীতে জেলা পর্যায়ের সম্মেলনগুলোতেও দলীয় কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে তাদের আসতে দেয়া হবে না। এ জন্য আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায় ছাড়াও তৃণমূল পর্যায়েও অনেকে সচেষ্ট রয়েছে যাতে দলীয় কোনো কার্যক্রমে ওই নেতারা যুক্ত না হতে পারেন। কারণ ওই সকল নৌকাবিরোধীদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী ভূমিকায় রয়েছেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা
গত সোমবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সভায় এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। সভায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান, ড. আব্দুর রাজ্জাক, কাজী জাফরুল্লাহ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, প্রচার সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ প্রমুখ। এদিকে বৈঠকে স্থানীয় নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন ফরম বিক্রি করতে গিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে দলীয় নেতারা বলেন, দলের নিয়মের বাইরে ফরম বিক্রি করা হয়নি। কিন্তু দলের নিয়ম মানতে রাজি হননি একাধিক মন্ত্রী ও এমপি। কারণ তারা তাদের প্যাডে নিজেদের পছন্দের ব্যক্তিদের মনোনয়ন ফরম দেয়ার জন্য ডিও লেটার দেন। ফরম নিয়ে মন্ত্রী ও এমপিদের এ ধরনের ভূমিকা দলীয় বিভেদকে উস্কে দিবে। স্থানীয় নির্বাচনে এর সরাসরি বিরূপ প্রভাব পড়বে। ফলে সুযোগ সন্ধানী বিএনপি ও অন্যান্য দল এ থেকে ফায়দা লুটতে পারে। দলীয় নেতাদের কাছ থেকে এ ধরনের তথ্য পাওয়ার পর উষ্মা প্রকাশ করেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি এবার বিষয়টি নিয়ে কঠোর হবেন বলে জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ধরনের দলীয় বিভেদের কারণে অতীতে আওয়ামী লীগের অনেকে যোগ্য থাকা সত্ত্বেও নির্বাচনে জিততে পারেননি। এবার যেন এমনটি না হয়। বৈঠকে উপস্থিত কয়েক নেতা বলেন, যাদের নৌকা প্রতীক দেয়া হয়েছে তার বাইরে দলীয় কেউ যেন প্রার্থী না হয় সে ব্যাপারেও খেয়াল রাখার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। যারা নৌকার পক্ষে কাজ করবে না তাদের বিষয়ে দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। নেতারা জানান, মনোনয়ন বোর্ড সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সিদ্ধান্ত অমান্য করে যারা নিজেদের পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবে তাদের বিষয়ে দল কঠোর সিদ্ধান্তেও যেতে পারে। এমনকি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ প্রমাণিত হলে দল থেকে বহিষ্কারও করা হতে পারে। তারা জানান, বৈঠকে আওয়ামী লীগ সভাপতি স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, নৌকা যাকে দেয়া হয়েছে দল যাকে সমর্থন করছে তার পক্ষেই সবাইকে কাজ করতে হবে। এখানে কারও পছন্দের প্রার্থী নেই, সবাই দলের প্রার্থী। কাজেই দল যাকে দেবে তার পক্ষেই কাজ করতে হবে। নৌকা প্রতীকের বাইরে কোনো প্রার্থীর পক্ষে কোনো সংসদ সদস্য কাজ করলে বা দলীয় কোনো পর্যায়ের নেতা কাজ করলে তাদের নজরদারিতে এনে কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে। তারা বলেন, অতীতে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ না করায় অনেক ইউনিয়ন পরিষদ, জেলা পরিষদ ও উপজেলা পরিষদে সিটি কর্পোরেশনে যোগ্য নেতা থাকার পরেও নৌকার প্রার্থী বিজয়ী হতে পারেনি। তাই এবার যেন বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকে সে বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। গণভবনে স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভা শেষে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ৩টি জেলা পরিষদ, ৯টি উপজেলা পরিষদ ও ৬১টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের জন্য দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করে তালিকা প্রকাশ করে আওয়ামী লীগ। আগামী অক্টোবরে মামলার জটে আটকে থাকা জেলা, উপজেলা ও ইউপিতে উপনির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। বর্তমানে দেশে ৪ হাজার ৫৭১টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। ২০১৬ সালের ২২শে মার্চ শুরু হয়ে কয়েক ধাপে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন শেষ হয় ঐ বছরের ৪ঠা জুন। আইন অনুযায়ী, কোনো ইউনিয়ন পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচনসহ সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদারের লক্ষ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এরইমধ্যে দেশব্যাপী দলের অপূর্ণাঙ্গ কমিটিগুলো পূর্ণাঙ্গ করার উদ্যোগ নিয়েছে। প্রথম পর্যায়ে ১৫ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হয়েছিলো। পরে তা আবার এক সপ্তাহ বাড়ানো হয়।
নির্বাচনকে মর্যাদার লড়াই হিসেবে দেখছে ক্ষমতাসীন দল।নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের বিজয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চান তারা। এমন পরিস্থিতিতে দলীয় প্রার্থীদের বিজয়ের পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়ানোর আশঙ্কা আছে বিদ্রোহী প্রার্থীরা।দলসমর্থিত এসব প্রার্থীর বিরোধিতা করার অর্থ হচ্ছে, দল ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বিরোধিতা করা। এ অবস্থায় কেউ সরে না গেলে সাংগঠনিক শাস্তির মুখে পড়তে হবে তাদের।