হঠাৎ গোল্ডেন মনির গ্রেফতার কেনো? কারন তাকে তো সবাই চিনতো জানতো বর্তমান গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ এবং গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলামের বিশেষ ঘনিষ্ঠজন হিসেবে, উনাদের টাকা কামাইয়ের অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে!

গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ এবং গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম।
ওয়াকিফহালরা জানতেন গোল্ডেন মনিরকে দিয়ে প্লটের দালালি করাতেন সচিব এবং প্রতিমন্ত্রী।কিন্তু মাঝে তারা একটা ভুল করে ফেলেন! গত দু’মাস আগে প্রতিমন্ত্রী, গোল্ডেন মনির, সচিবকে তিনজনই কি এক দ্বন্দ্বে পূর্ত মন্ত্রণালয়ে কর্মরত এক মহিলাকে উত্তরার জমজম টাওয়ার আটকে রাখেন! ভুক্তভোগী মহিলার কাছে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপ সচিব এবং বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কর্মরত সুরাইয়া ম্যাডামের যোগাযোগ ছিল। তিনি ঘটনাটি তাকে জানিয়ে বিচার দাবি করেন। ধারনা করা হয় সেই থেকে তদন্ত শুরু, যার পরিণতিতে আজকে গোল্ডেন মনির গ্রেপ্তার হয়েছে।
গোল্ডেন মনির গ্রেপ্তার হলেও তার দালালিতে নানাজনকে সর্বশান্ত করা প্রতিমন্ত্রী শরীফ, সচিব শহীদুল হক খন্দকার ধরাছোঁয়ার বাইরে আছেন বলে জানা যায়।
অথচ মন্ত্রণালয়ের অফিসে প্রতিমন্ত্রীর পাশের চেয়ারে, সচিবের পাশের চেয়ারে নিয়মিত গোল্ডেন মনিরকে বসা দেখে সবাই তাজ্জব বনে যেতেন।
কারন তাকে বিএনপির লোক হিসাবেও অনেকে চিনতেন জানতেন। গোল্ডেন মনির গ্রেফতারের পর এ বিষয়গুলো শনিবার উঠে এসেছে ওয়াকিফহালদের আলোচনায়।
(তথ্যসূত্র ও ছবিঃ https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=222764069249907&id= 100045489451092)
উল্লেখ্য যে, অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে রাজধানীর মেরুল বাড্ডার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে মনিরুল হোসেন ওরফে গোল্ডেন মনির নামের এই ব্যক্তিকে আটক করে র্যাব।
র্যাবের দাবি, নব্বইয়ের দশকে রাজধানীর গাউছিয়া মার্কেটে কাপড়ের দোকানে সেলসম্যান হিসেবে কাজ করতেন মনির। সেখান থেকে পর্যায়ক্রমে মালিক হয়েছেন এক হাজার ৫০ কোটি টাকার।
অভিযান শেষে আজ শনিবার (২১ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ এসব তথ্য জানান।
মনিরের বাসায় গতকাল শুক্রবার রাত ১০টা থেকে অভিযান চালায় র্যাব। র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসুর নেতৃত্বে এ অভিযান চালানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘গ্রেপ্তার করা মনির নব্বইয়ের দশকে গাউছিয়া মার্কেটে একটি কাপড়ের দোকানে সেলসম্যান হিসেবে কাজ করতেন। এরপর রাজধানীর মৌচাকে ক্রোকারিজের একটি দোকানে কাজ শুরু করে পরবর্তী সময়ে তা নিজ ব্যবসায় রূপ দেন। ওই ব্যবসা করতে করতে লাগেজ ব্যবসা শুরু করেন। তিনি ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে কাপড়, কসমেটিকস, ইলেকট্রনিকস পণ্য, কম্পিউটার সামগ্রী, মোবাইল, ঘড়িসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র বিদেশ থেকে দেশে আনতেন। এভাবে একপর্যায়ে তিনি স্বর্ণ চোরাকারবারের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। বায়তুল মোকাররমে একটি জুয়েলারি দোকানও দেন। যে দোকানটি তাঁর চোরাকারবার করার কাজে লাগত। এভাবে মনির থেকে তিনি হয়ে ওঠেন গোল্ডেন মনির। এভাবে তিনি মোট এক হাজার ৫০ কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি।’

মনির হোসেনের বাসা থেকে উদ্ধার হওয়া টাকা, বৈদেশিক মুদ্রা, আগ্নেয়াস্ত্র, স্বর্ণালংকারসহ অন্যান্য জিনিসপত্র। ছবি : সংগৃহীত
আশিক বিল্লাহ আরো বলেন, ‘স্বর্ণ চোরাকারবারের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার পর তিনি বিপুল অবৈধ স্বর্ণ বিদেশ থেকে দেশে নিয়ে আসতে থাকেন। তার স্বর্ণ চোরাচালানের রুট ছিল ঢাকা-সিঙ্গাপুর-ভারত। এসব দেশ থেকে ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে বিপুল স্বর্ণ দেশে আমদানি করেন তিনি। যার ফলশ্রুতিতে তাঁর নাম হয়ে যায় গোল্ডেন মনির। স্বর্ণ চোরাকারবারের জন্য তাঁর বিরুদ্ধে ২০০৭ সালে বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা করা হয়।’
আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘গোল্ডেন মনিরের বাসায় অভিযান চালিয়ে ৬০০ ভরি স্বর্ণ জব্দ করা হয়। এই স্বর্ণের পরিমাণ প্রায় আট কেজির মতো। আমরা জানতে পেয়েছি গাউছিয়ার একটি স্বর্ণের দোকানের সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততা রয়েছে।’
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘মনির হোসেনের বাসা থেকে বিদেশি একটি পিস্তল, চারটি গুলি, চার লিটার বিদেশি মদ, ৩২টি নকল সিল, ২০ হাজার ৫০০ সৌদি রিয়াল, ৫০১ ইউএস ডলার, ৫০০ চাইনিজ ইয়েন, ৫২০ ভারতীয় রুপি, এক হাজার সিঙ্গাপুরের ডলার, দুই লাখ ৮০ হাজার জাপানি ইয়েন, ৯২ মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত, হংকংয়ের ১০ ডলার, ১০ ইউএই দিরহাম, ৬৬০ থাই বাথ জব্দ করা হয়েছে। এগুলোর মূল্যমান আট লাখ ২৭ হাজার ৭৬৬ টাকা।’
আশিক বিল্লাহ আরো বলেন, ‘আমরা তাঁকে মূলত ফৌজদারি অপরাধে তাঁর বাসা থেকে গ্রেপ্তার করেছি। মনির মূলত একজন হুণ্ডি ব্যবসায়ী, স্বর্ণ চোরাকারবারি ও ভূমির দালাল। এ ছাড়া একটি গাড়ির শোরুমের স্বত্বাধিকারী তিনি। মনিরের বাসা থেকে দুটি বিলাসবহুল অনুমোদনহীন গাড়ি জব্দ করা হয়েছে। যার একেকটির মূল্য প্রায় তিন কোটি টাকা। এর পাশাপাশি গাড়ির শোরুম থেকে তিনটি বিদেশি বিলাসবহুল অনুমোদহীন গাড়ি জব্দ করা হয়েছে।’
র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক বলেন, ‘ভুমিদস্যু মনির রাজউকের কয়েকজন কর্মকর্তার যোগসাজশে বিপুল অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। ঢাকা শহরের ডিআইটি প্রজেক্ট, বাড্ডা, উত্তরা, নিকুঞ্জ ও কেরানীগঞ্জে তাঁর দুইশরও বেশি প্লট আছে। এরই মধ্যে ৩০টি প্লটের কথা তিনি প্রাথমিকভাবে আমাদের কাছে স্বীকার করেছেন। রাজউকের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে জালিয়াতি ও স্বর্ণের ব্যবসা করে তাঁর সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৫০ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে।’
ব্রিফিংয়ে আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘মনিরের বিরুদ্ধে আরো বেশ কিছু অভিযোগ পেয়েছি আমরা। সেসব অভিযোগের তদন্ত করার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন, বিআরটিএ, সিআইডি ও এনবিআরকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ জানাবে র্যা্ব। র্যাব বাদী হয়ে মনিরের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধ তথা অনুমোদনহীনভাবে বিদেশি মুদ্রা রাখার দায়ে বাড্ডা থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করবে। অনুমোদনহীন বিদেশি অস্ত্র ও গুলি রাখার কারণে অস্ত্র আইনে এবং মাদক রাখার জন্য মাদক আইনে মামলা করা হবে।’
আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘গোল্ডেন মনিরের নানা ধরনের অপরাধের সঙ্গে আরো কারা কারা জড়িত আছে, তা জানিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে র্যাব অনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত করার অনুরোধ করবে। র্যাবের এই অভিযানে একটি গোয়েন্দা সংস্থা খুবই ওতপ্রোতভাবে বিভিন্ন তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছে। সুতরাং দীর্ঘমেয়াদি একটি অনুসন্ধান, পর্যবেক্ষণ এবং বিশ্লেষণ সাপেক্ষে আমরা এই অভিযানটি পরিচালনা করেছি। আমরা তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পেরেছি, একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তিনি ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। এবং ওই রাজনৈতিক দলে অর্থ জোগানের বিষয়ে প্রাথমিকভাবে আমাদের কাছে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।’