আল্লামা শফী হুজুরের মৃত্যুর পর হেফাজত ইসলামের বর্তমান অন্যতম শীর্ষ কর্তা জুনায়েদ বাবুনগরী দ্রুত সময়ের মধ্যে হেফাজতে ইসলামের বাংলাদেশ এর সম্মেলন করার ঘোষণা দিলেন।
তিনি আজ ১৯ সেপ্টেম্বর শনিবার হাটহাজারী মসজিদের মাইক থেকে এ ঘোষনা দেন। তাঁর এ আকষ্মিক ঘোষনায় অনেকেই বিষ্ময় প্রকাশ করেন।
জানাজার আগ মুহুর্তে বাবুনগরী মাইক থেকে বলেন, “তিনি বলেন, ‘আল্লামা শফী হুজুর আমাদের মুরুব্বি। আমরা উনার জন্য দোয়া করছি। আর আপনারা জানেন, হেফাজতে ইসলামের মধ্যে কোনো বিরোধ নাই। আল্লামা শফী হুজুরের মৃত্যুতে হেফাজতে ইসলামের আমির পদটি শূন্য হয়ে যায়। আমরা হুজুরের (আল্লামা শফী) জানাজা-দাফন শেষ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে হেফাজতে ইসলামের সম্মেলন ডাক দিবো। সম্মেলনে আমরা সর্বসম্মতিক্রমে হেফাজতে ইসলামের আমির নির্বাচন করবো।”
উল্লেখ্য যে, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ বাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক একটি সংগঠন, যেটি ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি গঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এই সংগঠনটি বাংলাদেশে ইসলামী শাসনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আন্দোলন পরিচালনা করে আসছে। তখন ৩৫ সদস্যের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যরা ছিলেন- আমির শাহ আহমদ শফি, সিনিয়র নায়েবে আমির আল্লামা মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী, মাওলানা শামসুল আলম, মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী, ঢাকার মাওলানা নুর হোসেন কাসেমী, জুনায়েদ আল হাবীব, মুফতি ফয়জুল্লাহ, মাওলানা আব্দুল হামিদ পীর সাহেব মধুপুর, মুফতি জাফর প্রমুখ।
তবে মাদ্রাসার পরিচালনা সংক্রান্ত বিষয়ে গত ১৭ জুন জুনায়েদ বাবুনগরীকে দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার সহকারী পরিচালকের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। জানা যায়, হেফাজত ইসলাম গঠনের বছর দু’য়েক পর থেকেই প্রয়াত আমীর পুত্র মাওলানা আনাসের সাথে বাবুনগরীর সাথে বিভিন্ন মতগত অমিলের কারনে তিক্ততা সৃষ্টি হয়। বাবুনগরীকে অব্যহতি দিয়ে তাঁর জায়গায় দায়িত্ব দেওয়া হয় মাদ্রাসার জ্যেষ্ঠ শিক্ষক শেখ আহমেদকে। এ ছাড়া বাবুনগরীর ভাগিনা মাদ্রাসার শিক্ষক আনোয়ার শাহকে মাদ্রাসা থেকে এক মাস আগে বের করে দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে আমির আল্লামা শফি পুত্র আনাস সাহেবের সাথে সম্পর্কের তিক্ততা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে।
সার্বিক এ অবস্থায় সংগঠনটির মহাসচিব বাবুনগরী আজকে এ ঘোষনা দিলেন।
উল্লেখ্য যে, ১৭ সেপ্টেম্বর দারুল উলুম মুইনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার বিক্ষুব্ধ ছাত্রদের হাতে লাঞ্ছিত ও ৩৬ ঘন্টা অবরুদ্ধ ছিলেন হেফাজতে ইসলামের আমীর আল্লামা শাহ আহমেদ শফী। এরপর তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরবর্তিতে তিনি আন্দোলনরত ছাত্রদের চাপে হাটহাজারী মাদরাসার মুহতামিমের পদ থেকে পদত্যাগ করলে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার আসগর আলী হাসপাতালে ১৮ সেপ্টেম্বর শুক্রবার সন্ধ্যায় ইন্তেকাল করেন।
এর আগে, আল্লামা আহমদ শফি সাহেব হাটহাজারী মাদরাসার মুহতামিমের পদ থেকে পদত্যাগ করার পর, শূরা কমিটি তাঁকে সদর মুহতামিম হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। সেই সাথে আহমদ শফি সাহেবের পুত্র মাওলানা আনাস সাহেবকে স্থায়ী বহিষ্কার সহ পূর্ববর্তী সব সিদ্ধান্ত বলবত রেখেছে শূরা কমিটি।
এছাড়াও মাওলানা নুরুল ইসলাম কক্সবাজারিকে সব দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে এবং সে সাথে, পরবর্তী মুহতামিম নির্ধারণের দায়িত্ব শূরা কমিটিকে দেওয়া হয়েছে।