ব্রিটেনের প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের অন্তেষ্টিক্রিয়াতে অংশ নিতে বর্তমানে ব্রিটেনে অবস্থান করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানেই ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির রবিবারের বিখ্যাত শো ‘সানডে উইথ লরা কুইন্সবার্গ’ এ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন শেখ হাসিনা। জানিয়েছেন রানি এলিজাবেথের সঙ্গে তার আলাপ ও স্মৃতির কথা।
প্রধানমন্ত্রী জানান, ১৯৬১ সালে পূর্ব পাকিস্তানে রাষ্ট্রীয় সফরে আসা রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে প্রথমবারের মতো দেখেন। তিনি তখন ছিলেন শিশু এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে রানিকে তার বাবা শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিলেন।
প্রায় সাড়ে সাত মিনিটের সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেন, আমি ৭ বার কমনওয়েলথ সম্মেলনে অংশ নিয়েছি। রানির আমন্ত্রণে ২০১২ সালের অলিম্পিকেও যোগ দিয়েছিলাম। প্রতিবারই দেখা হয় তাঁর সঙ্গে। তাঁর স্মৃতিশক্তি ছিল বিস্ময়কর। একবার কমনওয়েলথ সম্মেলনে আমাকে দেখতে না পেয়ে খোঁজ করেন হাসিনা কোথায়, ওকে দেখছি না কেনো! প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, রানি শুধু একজন বিশ্বনেত্রীই ছিলেন না, তিনি ছিলেন বিশ্বের সব দেশের জন্য একজন মমতাময়ী মা।
সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা জানান, বাংলাদেশে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের প্রতি শ্রদ্ধা, বিভিন্ন সময়ের স্মৃতির পাশাপাশি বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ রয়েছে বলে জানিয়েছেন। তিনি কথা বলেছেন গুম ও হত্যা নিয়েও।
লরা কুইন্সবার্গ প্রশ্ন করেন, প্রয়াত রানির কমিশনার বাংলাদেশ সরকারকে বলেছিলেন, আগামী নির্বাচন সবার অংশগ্রহণে অবাধ ও সুষ্ঠু হতে হবে, জাতিসংঘও একই কথা বলছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের জন্য আমি আমার বাবাসহ পরিবারের ১৮ সদস্যকে হারিয়েছি। এরপর ২১ বছর দেশে গণতন্ত্র ছিল না। প্রায় ২০ বার দেশে মিলিটারি ক্যু করা হয়েছে বা চেষ্টা করা হয়েছে। আর্মি থেকে রাজনৈতিক দল হয়েছে। তারা কখনো ভোটের জন্য জনগণের কাছে যাননি। সবার অংশগ্রহণে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন ছিল আমার সংগ্রাম। আওয়ামী লীগ সরকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
বাংলাদেশে গুম নিয়ে জাতিসংঘের উদ্বেগ নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যারা এই প্রশ্ন তুলে তাদের দেখা উচিত নিজেদের দেশে কতো মানুষ গুম হচ্ছে। অভিযোগ না করে সঠিক তথ্য নিয়ে কথা বলা উচিত।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও বিবিসিও ওই প্রোগ্রামে উপস্থিত ছিলেন, ব্রিটিশ সেনা এডমিরাল স্যার টনি রাদাকিন, নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জ্যাসিন্ডা আর্ডান, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি, যুক্তরাজ্যের হাউস অব লর্ডের মেম্বার লর্ড সেন্টামু, যুক্তরাজ্যের হাউস অব কমন্সের স্পিকার স্যার লিন্ডসে হলি এবং ব্রিটেনের প্রভাবশালী সংবাদপত্র ‘দ্য সান’ এর সম্পাদক ভিক্টোরিয়া নিওটন
উল্লেখ্য, গত ৮ সেপ্টেম্বর রাতে ৯৬ বছরের দীর্ঘ জীবনের ইতি টানেন ব্রিটিশ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। নিজ বাড়িতেই মৃত্যুবরণ করেন তিনি। তার মৃত্যুর খবরে গভীর শোক প্রকাশ করে স্বজনদের প্রতি সমবেদনা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়।