প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি’র কড়া হুশিয়ারী সত্বেও বিদ্রোহীরা নির্বাচনী মাঠে থাকার বিষয়ে অনঢ় অবস্থানেই আছেন।
“বিদ্রোহী প্রার্থীদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মহানগর আওয়ামী লীগকে ৮ তারিখ পর্যন্ত সময় দেওয়া এবং ৮ তারিখের মধ্যে কোনো পদক্ষেপ না নিলে ৯ তারিখ সংবাদ সম্মেলন করে দলীয় প্রার্থীদের নাম প্রকাশ করে বিদ্রোহীদের মধ্যে যাদের পদ-পদবি আছে তাদের বহিষ্কার করা হবে”- মর্মে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি’র সাহেবের এমন কঁড়া হুশিয়ারীর প্রতিক্রিয়ায় ভিন্ন মত প্রকাশ করলেন আসন্ন চসিক নির্বাচনে অংশগ্রহনকারী আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র বা বিদ্রোহী প্রার্থীরা।
তাদের মতে এ মুহুর্তে আর নির্বাচন এড়িয়ে যাবার কোন সুযোগ নেই। প্রায় ১০ মাস ধরে মাঠ পর্যায়ে নির্বাচনের জন্য কাজ করছেন তারা। ইচ্ছে করলেই হুট করে নির্বাচনী মাঠ থেকে নেমে যাওয়া যায় না বলে নিজের অবস্থান জানান স্বতন্ত্র বা বিদ্রোহীরা।
এদিকে ২২ নং এনায়েত বাজার ওয়ার্ডের লাটিম মার্কা নিয়ে নির্বাচন করা স্বতন্ত্র কাউন্সিলর পদপ্রার্থী সাব্বির চৌধুরী আওয়ামী লীগ দলীয় কাউন্সিলর পদপ্রার্থী সলিম উল্লাহ বাচ্চু (ঘুড়ি মার্কা) কে সমর্থন জানিয়ে গত ৩ জানুয়ারি নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন।
এসময় সাব্বির চৌধুরী বলেন, “আমি একজন আওয়ামী পরিবারের কর্মী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া প্রার্থী সলিম উল্লাহ বাচ্চুর পক্ষে কাজ করব।”
এছাড়া মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসিনা মহিউদ্দিনের সাংগঠনিক তৎপড়তায় সংরক্ষিত আসন ৮ এর মহিলা কাউন্সিলর পদপ্রার্থী শ্রীমতি পম্পি দাশ তাঁর প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেন।
অপরাজিত বাংলার চট্টগ্রাম প্রতিনিধিকে বর্তমান নির্বাচন মাঠে থাকা স্বতন্ত্র বা বিদ্রোহীরা জানান, এলাকায় তাদের সামাজিক অবস্থান রয়েছে। সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণ হলে ৭ থেকে ৮ জন জন প্রার্থী (বিদ্রোহী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী )নির্বাচিত হবেন।
তারা আরও জানান, আগামী ২৭ জানুয়ারিতে হতে যাওয়া চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন গত মার্চে যখন নির্বাচন স্থগিত হয়, তখন প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় চলে যায়। এখন প্রত্যাহারের সুযোগ নেই।
তবে চাইলে তো মিডিয়ায় ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনী মাঠ থেকে সরে দাঁড়াতে পারবেন, আমএদর প্রতিবেদকের প্রশ্নের জবাবে তারা জানান,”অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এখন সেটা সম্ভব না, যদিও এভাবে নিজেকে প্রত্যাহার করা যায়।”
বিদ্রোহীরা তাদের নির্বাচন মাঠে থাকার যুক্তি উপস্থাপন করেন অপরাজিত বাংলার প্রতিবেদকের কাছে। আওয়ামী লীগ সমর্থিত বর্তমান একজন প্রভাবশালী বিদ্রোহী প্রার্থী ১১ নম্বর দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডের মোরশেদ আক্তার চৌধুরী বলেন, ‘আমরা পার্টির দুঃসময়ে জেল জুলুমের শিকার হয়েছি, আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। আমরা আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের কর্মী, নিজেদের আমরা নেতা বলি না। এখন দলের সুসময়ে আমাদের বঞ্চিত করবে— এরা কারা?’ চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের এই সদস্য বলেন, “দলের সমর্থন আমরা পাইনি। কিন্তু আমাদের জনসমর্থন আছে। মহানগর আওয়ামী লীগের মতামত কিংবা তৃণমূলের মতামত নিয়ে কি কাউন্সিলর পদে দলের সমর্থন দেওয়া হয়েছে? কারা এদের তালিকা করলো? কাদের স্লিপে এসব মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে? তাছাড়া দলীয় প্রতীক তো নৌকা। আমরা তো নৌকাকে বিজয়ী করতে সর্বস্ব বাজি ধরা কর্মী। নৌকার বিরুদ্ধে তো আমরা নই।” প্রাক্তন এ কাউন্সিলর আরও বলেন, “নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার সুযোগ নেই, আমরা আগেও মানুষের পাশে ছিলাম মহামারীতে জনগণের পাশে ছিলাম। এমনকি করোনা আক্রান্ত রোগীকে আমি নিজে গাড়ি চালিয়ে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছি। জীবনের ঝুঁকি নিয়েছি। এখন মানুষ আমাদের আরও বেশি করে চায়। নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার কোন উপায় তো আমি দেখছি না।”
এদিকে ২৮ নম্বর পাঠানটুলী ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মোহাম্মদ আবদুল কাদের অপরাজিত বাংলা প্রদিবেদককে জানান, “মাঠ পর্যায় থেকে কোনো ধরনের মতামত না নিয়ে আমাদের মতো ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে কাউন্সিলর প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। দলের দু:সময়ে রাজপথে ছিলাম। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমিই নির্বাচিত হবো। এখন তো প্রত্যাহারের সুযোগ নেই। আমরা চাই-সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হোক। এলাকাবাসী ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করবেন।”
এর আগে নগরীর ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের জহুরুল আলম জসীম আমাদের প্রতিবেদকে বলেছিলেন, “নির্বাচন নিয়ে মূল ভাবনা আমরা নির্বাচন করবো। নির্বাচন করার জন্য এলাকার ভোটারদের প্রচণ্ড চাপ আছে। কারণ গত পাঁচ বছর আমরা তাদের সুখে-দুঃখে ছিলাম। করোনাকালেও আমরা মানুষের ঘরে ঘরে গেছি।” কিন্তু কেন্দ্রের কঠোর অবস্থানের কথা স্মরন করিয়ে দিলে তিনি জানান, “কেন্দ্রীয় নেতা মাহবুবুল আলম হানিফ ভাইয়ের সাথে দেখা করছি। আমরা উনাকে বোঝাতে চেষ্টা করেছি যাদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তাদের যাচাই বাছাই করে দেওয়া হয় নাই। যেমন: আমার এলাকায় যাকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে উনার বয়স এখন ৭৪ বছর, সামাজিক কোনো কর্মকাণ্ডে সক্রিয় নন, এক সময় এ ব্যাক্তি বঙ্গবন্ধুর ছবি কুকুরের গলায় ঝুলিয়েছিলেন।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও মাঠ পর্যায়ের একাধিক নেতা-কর্মীরা মনে করছেন যে, এভাবে নির্বাচনি প্রচারনা বা মত বিনিময় সভা চলতে থাকে তাহলে যে কয়টি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আছে সব ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের নির্বাচনে জয়ী হওয়ার সম্ভবনা খুবই ক্ষীণ। সেই সাথে এর প্রভাব পড়বে মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীর ভোটের ফলাফলে এমনই আশঙ্কা করছেন ওয়ার্ড ও ইউনিট আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের।